ভবঘুরেকথা

ভক্ত রামধনের দর্পচূর্ণ
পয়ার

একদিন রামধন বাহির প্রাঙ্গণে।
ধান্য রাশি ভাঙ্গি গরু জুড়িল মলনে।।
চারিটি বলদ এনে আগে তাহা ছাঁদে।
আর এক বকনা গাভী তার সঙ্গে বাঁধে।।
পাঁচটি গরুতে ধান্য করিছে মর্দন।
এইভাবে গরু ঘুরাইছে রামধন।।
রাজ-জী যাইতে ঘাটে দেখিলেন তাই।
ক্রোধে পরিপূর্ণ হ’ল রাজ-জী গোঁসাই।।
বলে ওরে ধনা কানা করিলি কি কর্ম।
বড় অধার্মিক তুই নাই কোন ধর্ম।।
এই বাড়ী থাকিস শ্রীধাম বৃন্দাবনে।
সুরভী মাতাকে কেন জুড়িলি মলনে।।
পূর্ব জন্মে মহা মহাপাপ আচরিলি।
এবার সে পাপ জন্য অন্ধ হ’য়ে রলি।।
নয়ন বিহীন তুই এখানে আইলি।
ঠাকুরের কৃপা দৃষ্টে দৃষ্টিশক্তি পেলি।।
দৃষ্টি কম চক্ষু তোর প্রস্ফুটিত নয়।
কম দৃষ্টি তবু তোর কর্ম চলে যায়।।
তোর এই অত্যাচার করা কি উচিৎ।
নয়ন বিহীন তোর কর্ম বিপরীত।।
ছেড়ে দে সুরভী মাকে ওরে বেটা আঁধা।
মহাপাপ হইয়াছে সুরভীকে বাঁধা।।
এত বলি যায় সুরভীকে ছেড়ে দিতে।
রামধন বলে বল কি দোষ ইহাতে।।
এত শুনি সাধু হ’ল ক্রোধে পরিপূর্ণ।
ঠেঙ্গা নিল রামধনে মারিবার জন্য।।
রামধন মলন ছাড়িয়া পলাইল।
মলনের বক্না সাধু ছাড়াইয়া দিল।।
কোথা গেল আঁধা পাপী মারিব উহারে।
মোর হাত এড়ায়ে পালাবে কোথাকারে।।
আজ তোরে বিনাশিব ওরে দুরাশয়।
অদ্য পলাইলি কল্য যাইবি কোথায়।।
তর্জন গর্জন করি করেন চীৎকার।
ক্রোধে রক্তবর্ণ চক্ষু বহে অশ্রুধার।।
ঘোর শব্দ শুনি মহাপ্রভু তথা এল।
স্তুতি বাক্যে রাজ-জীকে তখনে শান্তাল।।
এই কার্য করে বেটা বড় দুষ্ট খল।
সুরভী মলনে ছাঁদে আরো করে ছল।।
আমি আছি গৃহমাঝে পূরীর ভিতরে।
দেখি নাই হেন কর্ম যে সময় করে।।
দুষ্কার্য করেছে আরো তোমা ক্রোধ করে।
যেমন মানুষ শাস্তি না হলে কি সারে।।
রাজ-জী বলেন এই পাপীষ্ঠ অসৎ।
হেন দুষ্টে স্থান দাও তুমিও অসৎ।।
প্রভু বলে সত্য সত্য আছে মোর পাপ।
আমি করিয়াছি পাপ মোরে কর মাপ।।
রাজ-জী বলেন বটে মাপ যদি চাও।
আঁধা আর ডঙ্কিনীকে তাড়াইয়া দেও।।
প্রভু বলে তাড়াইব চ’লে যাবে ওরা।
পতিত পাবন নাম বৃথা হ’ল ধরা।।
ঠাকুর ডাকেন আয় আয় রামধন।
ধর এসে রাজ-জীর যুগল চরণ।।
রামধন আসিলেন ঠাকুর নিকট।
ভরত বলেন প্রভু না করিও হট।।
তোমারে সকলে মানে না জানে তা কেটা।
পাপ ভয় নাহি করে এই আঁধা বেটা।।
দেবে মানে দৈত্য মানে গন্ধর্বেরা মানে।
ইন্দ্র চন্দ্র নত হয় তব শ্রীচরণে।।
তোমার চরণ সেবি থাকি তব দ্বারে।
তাহাতে আমাদিগকে যমে ভয় করে।।
ঠাকুর বলেন মোর এই বড় ভয়।
পতিত পাবন নামে কলঙ্ক রটায়।।
রাজ-জী বলেন হে দয়াল অবতার।
আন দেখি সে আঁধারে করিব উদ্ধার।।
ঠাকুরের আদেশে আসিল রামধন।
প্রভু কহে রাজ-জীর ধরগে চরণ।।
রামধন যাইতেছে পদ ধরিবারে।
রাজ-জী বলেন বেটা ছুসনে আমারে।।
সুরভীর সঙ্গেতে থাকিবি ছয় মাস।
এক মাস সুরভীর সঙ্গে খাবি ঘাস।।
ছয়মাস সুরভীর গোময় খাইবি।
রাত্রি ভরি সুধামাখা হরিনাম লবি।।
ঠাকুর বলেন গেল কঠিন হইয়া।
দয়া করি দণ্ড কিছু দেহ কমাইয়া।।
রাজ-জী বলেন তবে হোক আধাআধি।
এক বেলা গোময় সকালে খাওয়া বিধি।।
এইভাবে মেয়াদে রহিল রামধন।
বকনা গাভীর সঙ্গে করিত শয়ন।।
গোষ্ঠে গিয়া বকনার সঙ্গে খেত ঘাস।
তোলাক গোময় প্রাতেঃ খায় তিনমাস।।
রামধন রাজ-জীর মেয়াদ পালিল।
হরিচাঁদ পদ ভাবি তারক রচিল।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!