ভবঘুরেকথা

অশ্বিনীর কবি গাওয়ার আদেশ
একদিন শ্রীতারক গান গাহিবারে।
দল বল সহ গেল কালিয়া বাজারে।।
বিপক্ষের সরকার আনন্দ নামেতে।
দূর্গাপুর বাড়ী ছিল বিখ্যাত কবিতে।।
দৈবের কারণে তিনি আসিল না সেথা।
আসরেতে বসে আছে শত শত শ্রোতা।।
তাই জেনে বলিতেছে তারক গোঁসাই।
শুন বলি ও অশ্বিনী তোমাকে জানাই।।
তুমি আজি বিপক্ষের সরকার হও।
আমার সঙ্গেতে তুমি কবিগান গাও।।
তাই শুনে সে অশ্বিনী কেন্দে কেন্দে কয়।
আমা দ্বারা এই কাজ সম্ভব না হয়।।
তারক বলেছে বাছা শোন তোরে কই।
আশীর্বাদ দিনু আমি তুই হবি জয়ী।।
তাই শুনে সে অশ্বিনী আসরেতে গেল।
বিপক্ষের কবি সেজে গাহিতে লাগিল।।
অশ্বিনীর শুনে সবে কাব্য অলোচনা।
নিশ্চয় পুরাণ কবি করিল ধারণা।।
পাঁচালী করিয়া সাঙ্গ ধরে ধুয়া গান।
ধুয়া গানে হরে নিল শ্রোতাগণের প্রাণ।।
অশ্বিনীর কন্ঠ ধ্বনি অতি সুমধুর।
শ্রোতাগণে বলে সুরে মধুর মধুর।।
গান শুনে আত্মহারা কেহ কেহ কয়।
এতদিন এই কবি ছিল বা কোথায়।।
গানেতে হরিয়া নিল সবাকার প্রাণ।
গান শুনে কত জনে হারাইল জ্ঞান।।
কেহ কেহ সেই গানে আখি জলে ভাসে।
জয় জয় ধ্বনি ওঠে আকাশে বাতাসে।।
গান শুনে কেঁদে ওঠে তারকের মন।
আশীর্বাদ দেয় তারে করি আলিঙ্গন।।
সে আসরে গান করে হইল বিদায়।
বিদায় হইল সবে আনন্দ হৃদয়।।
তাহা হতে চলিলেন চালনা গ্রামেতে।
কবিগান করিবেন সেই আসোরেতে।।
সেখানেতে করিলেন কাব্য আলোচনা।
অশ্বিনীর গুণগান কহে সর্বজনা।।
তাই শুনে তারকের আনন্দ বাড়িল।
ধন্য ধন্য বলি তারে আশীর্বাদ দিল।।
সেই খানে গান শেষে বিদায় হইয়া।
জয়পুর চলিলেন অশ্বিনীকে নিয়া।।
অশ্বিনীকে বলিলেন তারক গোঁসাই।
শুন শুন রে অশ্বিনী তোমাকে জানাই।।
বাড়ী গিয়ে দল করি কবিগান গাও।
হরিচাঁদ লীলাগীতি তুমি লিখে দাও।।
হরিচাঁদ পোষা পাখি তুমি বাছাধন।
তোমার মনের বাঞ্ছা হইবে পূরণ।।
তাই শুনি সে অশ্বিনী প্রণমিয়া পায়।
ছল ছল আখি দু’টি কেন্দে কেন্দে কয়।।
আমি অতি মূঢ়মতি কোন গুণ নাই।
কেমনে পারিব আমি তোমাকে জানাই।।
তারক বলেছে বাছা ভয় কি লাগিয়া।
গুরুচাঁদ দিয়াছেন আশীষ করিয়া।।
ভয় নাই চলি যাও কর কবিগান।
আমি আজি করিলাম আশীর্বাদ দান।।
তাই শুনে প্রণমিল তারকের পায়।
ছল ছল আখি দু’টি কেঁদে কেঁদে কয়।।
তোমার আদেশ আমি করিব পালন।
সূক্ষ্মরূপে মম দেহে থাকিও তখন।।
চিন্তামণি পদে গিয়া প্রণাম করিয়া।
জলে ভরা আখি দু’টি কহিছে কাঁন্দিয়া।।
এতদিন ছিনু মাগো তোমাদের ঠাই।
বিদায় করহ মাতা গঙ্গাচর্ণা যাই।।
চিন্তামণি বলিলেন শুন বাছাধন।
ভক্তিপথে থাকে যেন সদা তব মন।।
এই ভাবে বলে কয়ে করিল গমন।
গৃহে এসে সে অশ্বিনী ভাবে মনে মন।।
কবিগান করিবারে বলেছে গোঁসাই।
কেমনে করিব দল মনে ভাবে তাই।।
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ মনেতে ভাবিয়া।
দল করি কবিগান বেড়ায় গাহিয়া।।
তিন বর্ষ কবিগান গাহিলেন মাত্র।
আসরেতে গান গায় ঝরে দু’টি নেত্র।।
মাঝে মাঝে আসরেতে সম্বিত হারায়।
কবিগান ছেড়ে দিয়ে হরিগুণ গায়।।
হরিচাঁদ লীলা গান রচনা করিয়া।
ভাবের আবেশে সদা বেড়াত গাহিয়া।।
নিজের রচনা পদ নিজে সুরকার।
নিজে গেয়ে নিজে শোনে চোখে বহে ধার।।
এইভাবে কতদিন গত হয়ে গেল।
কাঁদিয়া বিনোদ বলে হরি হরি বল।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!