ভবঘুরেকথা

গোস্বামীর দক্ষিণ দেশ ভ্রমণ
পয়ার

কিছুদিন ওঢ়াকাঁদি করিয়া বিশ্রাম।
পাগল চলিল পুনঃ গঙ্গাচর্ণা গ্রাম।।
যাওয়া মাত্র রাইচরণকে ডেকে কয়।
বইবুনে যাইব আমার সঙ্গে আয়।।
অমনি চলিল রাই পাগল সঙ্গেতে।
চলিলেন পাগলামী করিতে করিতে।।
জয় হরি বল রে গৌর হরি বল।
রাম জয় ধ্বনি করি চলিল পাগল।।
ধ্বনি শুনি লোক সব হইল চমকিত।
মাঠিভাঙ্গা হাটখোলা হৈল উপনীত।।
গোপাল বিশ্বাস উমাচরণ বিশ্বাস।।
পাগলকে দেখে মনে বাড়িল উল্লাস।।
উথলিল প্রেম বন্যা করিছে রোদন।
পাগলকে করিলেন অর্চনা বন্দন।।
জয় হরি গৌর হরি বলে বার বার।
সিংহের গর্জনসম দিতেছে হুঙ্কার।।
গোপাল বিশ্বাস উমাচরণ কহিছে।
এই বাজারেতে এক দারগা এসেছে।।
কোন এক মকর্দমা আসামী ধরিতে।
নরহত্যা আসামীর আস্কারা করিতে।।
কোন কোন লোকের করেছে অপমান।
চুপে চুপে এইখানে করুণ প্রস্থান।।
শুনিয়া পাগল আরো চেতিল দ্বিগুণ।
আমি ভয় করিব করেছি কারে খুন।।
জয় রাম গৌর হরি বলিয়া বলিয়া।
হুঙ্কার ছাড়িয়া ভ্রমে বাজার বেড়িয়া।।
লোকে বলে পাগল আসিল কোথা হ’তে।
দারোগা বলে পাগল হইল কি মতে।।
তাহা শুনি পাগল করিল হুঙ্কার।
লম্ফ দিয়া পড়ে দারোগার নৌকা পর।।
আর লম্ফ দিয়া পড়ে দারোগার ঠাই।
দারোগা বলেন পদে রেখহে গোঁসাই।।
বাজার বাহির হ’য়ে ধাইল পাগল।
ক্ষণে রাম রাম ক্ষণে গৌর হরি বোল।।
একটি বেদের মেয়ে আসিয়া সেখানে।
হরি বলে কাঁদে বারি ঝরে দু’নয়নে।।
পাগলের পদে পড়ে করিছে রোদন।
বলে বাবা দয়া করি দেহ শ্রীচরণ।।
আপনার জন্য কিছু দধি রাখিয়াছি।
দয়া করি খাও যদি তবে আমি বাঁচি।।
আমিত বেদের মেয়ে যবনের ঘরে।
কোন সাহসেতে দধি দিবহে তোমারে।।
পাগল কহিছে তুমি কি ব্যবসা কর।
সে মেয়ে কহিছে সব জানিবারে পার।।
মনোহারী মাল ল’য়ে পাড়াগাঁয় ভ্রমি।
এক দরে কিনি এক দরে বেচি আমি।।
কেহ যদি দায় ঠেকে করি উপকার।
সাধ্য অনুযায়ী যাহা যার দরকার।।
উপকার অর্থে অর্থ কারে যদি দেই।
দিতে যদি পারে তার সুদ নাহি নেই।।
তবে যদি সেই নিজে খুশী হ’য়ে দেয়।
চাহিয়া কাহার কাছে করিনা আদায়।।
শুনিয়া পাগল তার বদন চুম্বিল।
পরে দধি এনে দিল পাগল খাইল।।
সে স্থান হইতে যাত্রা করিল যখন।
পাগলের সঙ্গে চলিল উমাচরণ।।
উমাচরণের বাড়ী হইল উপনীত।
ঘাটে গিয়া দাঁড়াইয়া রহে এক ভিত।।
পুনঃ এসে বাড়ী পরে যত হাঁড়ি ছিল।
বাহিরের ভাঙ্গা হাঁড়ি পাগল আনিল।।
রাইচরণকে কহে কুড়াইয়া দেও।
অকর্মা কলসী হাঁড়ি আমায় যোগাও।।
চারি পাঁচ বাড়ী যত কলসী বা হাঁড়ি।
মজুত করিল উমাচরণের বাড়ী।।
পাগল চলিল ঘাটে হাঁড়ি কুম্ভ ল’য়ে।
রাই যোগাইয়া দেয় পিছু পিছু গিয়ে।।
তাহা দেখি হাঁড়ি উমাচরণ দিতেছে।
দু’জনে যোগায় গিয়া পাগলের কাছে।।
ভাঙ্গা হাঁড়ি যত নিছে পাগল নিকটে।
আছাড়িয়া ভাঙ্গিতে লাগিল সেই ঘাটে।।
বাহিরের সব হাঁড়ি ভাঙ্গা হ’য়ে গেল।
আন আন আন শব্দ করিতে লাগিল।।
তাহা শুনি উমাচরণের বৃদ্ধ মাতা।
বলে উমা বল আর হাঁড়ি পাবি কোথা।।
বাহিরের সব হাঁড়ি ফুরাইয়া গেল।
ঘরে যাহা ছিল সব আনিতে লাগিল।।
ঘরে ছিল নূতন নূতন যত হাঁড়ি।
পাগলের নিকটেতে ল’য়ে যায় বুড়ি।।
তাহা দেখি প্রভু ব’লে হ’ল ঘাট বাঁধা।
এঘাটেতে আর নাহি হবে সর কাঁদা।।
জোয়ার ভাটার দেশ ঘাটে হয় কাঁদা।
সেই জন্য হ’ল মাগো এই ঘাট বাঁধা।।
অদ্যাবধি সেই ঘাটে কাঁদা নাহি হয়।
পাগলের বরে ঘাট শানতুল্য রয়।।
পাগলের ঘাট বাঁধা অলৌকিক কাজ।
রচিল তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!