ভবঘুরেকথা

কিং ব্রহ্ম কিন্নু বা বিষ্ণু পার্ব্বতী চ শঙ্কর।
সমুদ্রৈকে সহস্রাণি জন্মমৃতু্য: পুন: পুন:।

(তথাহি শ্রীমদ্ভাগবতে)

ব্রহ্মলোক, বিষ্ণুলোক, শিবলোক নাম।
ইন্দ্রলোক, চন্দ্রলোক, ধ্রুবলোক ধাম।
পিতৃলোক আদি যে নক্ষত্রলোক হয়।
এইসব ধামে যত দেব নিবসয়।।
সবে চিন্তা করে সদা শ্রীকৃষ্ণ চরণ।
শ্রীকৃষ্ণ আজ্ঞায় হয় সৃষ্টির পত্তন।।
জন্মমৃত্যু যন্ত্রণাদি করিতে বারণ।
কর্ম্মমুক্ত হতে কৃষ্ণ ভজে দেবগণ।।
সেই দেবে ভজে জীব না ভজিয়া কৃষ্ণ।
কৃষ্ণ নাহি চিনে কর্ম্মে হইয়া সতৃষ্ণ।
কর্ম্মনিষ্ঠ বলে কৃষ্ণ ভক্তি নাহি হবে।
ভক্তিহীনে কৃষ্ণ লাবে কেমনে ঘটিবে।
বেদশাস্ত্র উপদেশ শুন এক মনে।
জীবন্মুক্তি নাহি হবে কৃষ্ণ ভক্তি বিনে।।
শ্রীকৃষ্ণ ভজন জীবে করিবে কিরূপে।
যদি কৃষ্ণ নাহি পায় সাক্ষাৎ স্বরূপে।।
কর্ম্মমার্গে ভজে কৃষ্ণ অনুমান করি।
কর্ম্মফল তাতে পায় দেখহ বিচারি।।
বিষয় আশয়ে যেবা শ্রীকৃষ্ণ ভজয়।
তার মন মূর্খ নাহি জেনো নি:সংশয়।।
আশাহীনে কর্ম্মত্যাগে শ্রীকৃষ্ণ ভাবয়।।
সে জন পাইবে কৃষ্ণ কর্ম্মনাশ হয়।।
শুদ্ধ কৃষ্ণ প্রেমে কর্ম্ম কারো যদি নাশে।
তবে সে বৈরাগ্য তার আসিবে নিমিষে।।
বৈরাগ্যে উত্তমা ভক্তি আসিবেক ক্রমে।
ভক্তি ফলে যাইরে সে বৃন্দাবন ধামে।।
বৃন্দাবন আছে কৃষ্ণ ভাগবতে কয়।
বৃহৎ বৃন্দাবনধামে কৃষ্ণ প্রাপ্তি হয়।।

সর্ব্বদা দ্বিভুজং কৃষ্ণন কদাপি চতুর্ভুজ:।
বৃন্দাবনং পরিত্যজ্য পাদমেকং ন গচ্ছতি।।

(তথাহি নিগম কল্পদ্রুমে)

সাক্ষাতে পাইয়া যেবা শ্রীকৃষ্ণ ভজয়।
পাপ পূণ্য জন্ম মৃত্যু কিছু নহি রয়।।
কর্ম্ম ত্যাগ হলে তার জন্মিবে বৈরাগ্য।
কৃষ্ণা ভক্তি সঞ্চারের তবে হবে যোগ্য।।
জন্মাবধি রহে জীব কর্ম্মের বন্ধনে।
সে ধর্ম্ম হইবে ছেদ বল হে কেমনে।।
অস্ত্র আদি দ্বারা কাটে বন্ধন রজ্জুর।
কর্ম্মের বন্ধন শুনে কিসে হবে দূর।।
কর্ম্মবদ্ধ ছেদ হলে না আসে বিশ্বাস।
দৈবেপুন: তারে আসি বেড়ে কর্ম্ম পাশ।।
এই কর্ম্ম পাশ হতে মুক্ত যদি হবে।
তাহার সন্ধান শুন কহিতেছি এবে।।
ভগবৎ পুরাণেতে গীতা মধ্যে আছে।
অতি গুপ্ত সে সন্ধান লিখিত রয়েছে।।
ব্রহ্মা যাহা সুনিশ্চয় করেছে বেদান্তে।
মনদিয়া শুন সবে বলিব একান্তে।।
চেষ্টা করি কর্ম্ম ফলে দগ্ধিভূত করে।
তবে সে বৈরাগী ভক্তি লভিবে অচিরে।।
সর্ব্বভূত বটে অগ্নি সব দগ্ধ হয়।
কর্ম্মফল সে অগ্নিতে বিদগ্ধ থাকায়।।
মহা অগ্নি আছে এক নামে ব্রহ্মজ্ঞান।
তাতে কর্ম্ম দগ্ধ হবে শুনহ সন্ধান।।
নিগম কল্পদ্রুমে ইহা শিবের বচন।
বুঝহ সন্ধানী লোক হয়ে এক মন।।

যথাগ্নিনা দহেৎ সর্ব্বৎ কাষ্ঠগুলো ফলাদিকম্।
তথা জ্ঞানের দহ্যন্তে সর্ব্বকর্ম ফলানি চ।।

ভ্রমজ্ঞান কর্ম্মজ্ঞান মায়াভ্রান্তি আদি।
ব্রহ্মজ্ঞানে দগ্ধ করি লভে নিরবধি।।
তখনি সে বৈরাগ্যের উদয় হইবে।
বৈরা্যে বিশুদ্ধ ভক্তি ক্রমেতে জন্মিবে।
প্রেমভক্তি লাভ তবে মনে করি আশ।
কর্ম্মজ্ঞান প্রকাশিনু শ্রীবচরণ দাস।।

……………………………………..
তত্ত্বরসামৃত জ্ঞানমঞ্জরী
-শ্রীশ্রী চরণ দাস

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!