ভবঘুরেকথা
মাওলা সদর উদ্দিন আহ্‌মদ চিশতী

সুফি সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী স্মারক বক্তৃতা ২০১৯

এখানে একটি লক্ষণীয় বিষয় হইল যে, প্রত্যেক প্রাণীর মাতৃদুগ্ধ তাহার শিশুর জন্য সর্বাপেক্ষা সহজপাচ্য এবং উপাদেয়। বিভিন্ন প্রকার প্রাণীর দুগ্ধ উল্লেখ করিতে যাইয়া ‘এক একটি দুগ্ধ’ বলা হইয়াছে। পরিশেষে মানুষ যখন জিনভাব হইতে মুক্ত হইয়া যায় তখন সকল আপদ হইতে সে মুক্তিলাভ করেন এবং সকল লাভলোকসানের ঊর্ধে যাইয়া প্রশান্তিলাভ করেন।

হোক বা না হোক এর থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কোনও এক জীবনে কারও পক্ষে কামিয়াব হয়ে লা মোকাম তথা শূন্যে লীন হয়ে যাওয়া বা সাধনসিদ্ধি সম্ভবপর নয়। বহুজন্মের বা বহুযুগের সাধনার ফলপ্রাপ্তি সাপেক্ষে যে শূন্য থেকে যাত্রা হয়েছিল সে শূন্যে লয় হয়ে যাওয়া সম্ভবপর হবে।

জন্মান্তরবাদ সংক্রান্ত কোরানের আরও উল্লেখযোগ্য কিছু বাক্য:

এবং যখন আমরা তোমাদের সঙ্গের সমুদ্রটিকে বিচ্ছিন্ন করিয়া দিলাম, তারপর তোমাদিগকে মুক্ত করিলাম (বা উদ্ধার করিলাম) এবং ফেরাউনের দলকে ডুবাইয়া দিলাম এবং তোমরা (ইহা) দেখিতেছ (অর্থাৎ বনি ইসরাইলগণ ইহা দেখিতেছেন)। সুরা বাকারা : বাক্য # ৫০

যাঁহারা আল্লাহর রাস্তায় ক্বতল হইয়াছে তাঁহাদের মৃত বলিও না। তাঁহারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তাহা বুঝিতে পার না। সুরা বাকারা : বাক্য # ১৫৪

সে তাহাদিগকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাহাদের (বিষয়) বাসনা জাগাইয়া তুলে। এবং শয়তান যে প্রতিশ্রুতি দেয় তাহা প্রতারণা ব্যতীত নহে। ইহাদের সকলের বাসস্থান জাহান্নাম এবং তাহারা ইহা হইতে পলায়নের জায়গা (বাঁচিবার জায়গা) পাইবে না। সুরা নিসা : বাক্য # ১২০-১২১

তিনি বলিলেন (বা বলেন) প্রবেশ কর (সেই) দলগুলির মধ্যে, নিশ্চয় ক্ষতিগ্রস্ত (বা দুর্বল) হইয়া জ্বিন ও ইনসান হইতে তোমাদের পূর্বে তাহারাও আগুনে গিয়াছে। সুরা আরাফ : বাক্য # ৩৮

এবং পৃথিবীতে ( বা দেহে) গোলযোগ সৃষ্টিকরিও না ইহা সংশোধিত হওয়ার পর। সুরা আরাফ : বাক্য # ৫৬

এবং নিশ্চয়ই আমরা জ্বিন ও ইনসান হইতে অধিক বৃদ্ধি সাধন করি জাহান্নামের জন্য। সুরা আরাফ : বাক্য # ১৭৯

তোমরা সবাই তাঁহারই কাছে ফিরিয়া যাইবে। আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য। তিনিই সৃষ্টির সূচনা করেন, পরে উহার পুনরাবৃত্তি ঘটাইবেন। সুরা ইউনুস : বাক্য # ৪

সুতরাং যাহারা আমাদের সহিত মিলন কামনা করে না, আমরা তাহাদিগকে ঘুরিয়া বেড়াইতে দেই উদভ্রান্তের মতো। সুরা ইউনুস : বাক্য # ১১

যদি কেহ পার্থিব জীবন ও উহার শোভাকামনা করে তবে দুনিয়াতে উহাদিগের কর্মের ফলদান করা হয় এবং উহারা কম পাইবে না। উহাদিগের জন্যই পরকালে অগ্নি ব্যতীত অন্য কিছুই নাই এবং তাহারা যাহা করে পরকালের জন্য তাহা নিষ্ফল হইবে এবং উহারা যাহা করিয়া থাকে তাহা নিরর্থক। সুরা হুদ : বাক্য # ১৫-১৬

নিশ্চয়ই আমরা জ্বিন ও ইনসান দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করিব (বাকরি)। সুরা হুদ : বাক্য # ১১৯

যে কেহ পার্থিব সুখ-সম্ভোগ কামনা করে তাহার কিছু সত্ত্বর দেওয়া হয়, পরে সে

তাহার জন্য (এরই প্রেক্ষিতে) রচনা করে জাহান্নাম যেথায় সে প্রবেশ করে নিন্দিত হইয়া এবং অনুগ্রহ হইতে সে হয় বঞ্চিত। সুরা বনি ইসরাইল : বাক্য # ১৮

তোমরা কি নিশ্চিন্ত আছ যে, তোমাদিগকে পুনরায় সমুদ্রে লইয়া যাওয়া হইবে না এবং তোমাদের বিরুদ্ধে প্রচ- ঝটিকা পাঠানো হইবে না এবং যেহেতু তোমরা কাফের সুতরাং তোমাদিগকে নিমজ্জিত করা হইবে না? তখন তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে কোনও সাহায্যকারী পাইবে না। সুরা বনি ইসরাইল : বাক্য # ৬৯

এবং তাহারা রবের উপর আনীত হইবে সারিবদ্ধভাবে। (বলা হইবে) নিশ্চয়ই তোমরা আমাদের নিকট উপস্থিত হইয়াছ যেভাবে আমরা তোমাদিগকে প্রথমবার সৃষ্টি করিয়াছিলাম। বরং তোমরা মনে করিয়াছিলে যে, তোমাদের জন্য প্রতিশ্রুতি বিষয়ে আমরা সাবধান করিব না। সুরা ক্বাহাফ : বাক্য # ৪৮

এক সময় (অর্থাৎ কেয়ামতের পর) মুত্তাকিগণকে রহমানের দিকে আমরা হাশর (সমবেত) করি নবাগত একটি দলরূপে (বা অতিথিরূপে) এবং অপরাধী দিগকে আমরা পান করাইবার জন্য জাহান্নামের দিকে খেদাইয়া লইয়া যাই। সুরা মরিয়ম : বাক্য # ৮৫-৮৬

যে আল্লাহর স্মরণ-সংযোগে বিমুখ তাহার জীবনের ভোগসম্ভার হইবে সংকুচিত এবং আমরা তাহাকে কেয়ামতের দিন উত্থিত করিব অন্ধ অবস্থায়।
সুরা ত্বাহা : বাক্য # ১২৪

হে মানব, তোমরা কি পুনরুত্থান সম্বন্ধে সন্দেহ করিতেছ? আমিই তোমাদের সৃষ্টি করিয়াছি মাটি, পরে শুক্র, পরে রক্তপি- ও সর্বশেষে পূর্ণাকৃতি বা অপূর্ণাকৃতি মাংসপি- হইতে আমার শক্তি তোমাদের কাছে প্রকাশ করিবার জন্য। আমি আমার ইচ্ছামতো তাহা এক নির্দিষ্টকাল মার্তৃগর্ভে রাখি, তারপর আমি তোমাদেরকে বাহির করিয়া আনি শিশুরূপে। কেউ পূর্ণ বয়স পাও, কেউ মারা যাও, কেউ হও জরাগ্রস্ত, ভুলোমন। তুমি দেখ প্রাণহীন শুকনা ভূমি, আমি তাহাতে বৃষ্টি দিয়া শস্যশ্যামল করি, নয়নাভিরাম নানান ফসলে ভরিয়া উঠে। সুরা হজ্ব : বাক্য # ৫

যে কেহ আল্লাহর শরিক করে তাহার অবস্থা: সে যেন আকাশ হইতে পড়িল, অতঃপর পাখি তাহাকে ছোঁ মারিয়া লইয়া গেল, কিংবা বায়ু তাহাকে উড়াইয়া লইয়াগিয়া দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করিল। সুরা হজ্ব : বাক্য # ৩১

যখন আজাব তাহাদিগকে ধরিয়া ফেলিবে ঊর্ধ এবং তলদেশ হইতে এবং (তিনি) বলিবেন বা বলেন: তোমরা যাহা করিয়াছিলে তাহার স্বাদ গ্রহণ কর। সুরা আনকাবুত : বাক্য # ৫৫

আল্লাহ মে․লিক সৃষ্টি করে রূপান্তর সৃষ্টি করেন, তারপর ইহারই পুনরাবৃত্তি করেন, তারপর তাঁহারদিকেই প্রত্যাবর্তন। সুরা রুম : বাক্য # ১১

তোমাদের সকলের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটিমাত্র প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানেরই অনুরূপ; নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা। সুরা লোকমান : বাক্য # ২৮

গুরুশাস্তির পূর্বে উহাদিগকে আমরা অবশ্যই লঘুশাস্তি আস্বাদন করাই যাহাতে উহারা আমার দিকে ফিরিয়া আসে। সুরা সেজদ : বাক্য # ২১

নিশ্চয় মৃতকে আমরা জীবনদান করি এবং আমরা লিখিয়া রাখি যাহা সে পূর্বে পাঠাইয়াছে এবং যে সকল পদাঙ্ক রাখিয়া যায়। এবং উহার সবটুকু আমরা সংরক্ষিত করিয়া রাখি প্রকাশ্য একজন ইমামের মধ্যে। সুরা ইয়াসিন : বাক্য # ১২

তারপর ইহা হইল একটি চিৎকার, তখনই তাহারা নজর দেয় (অর্থাৎ চক্ষু মেলিয়া দেখে) এবং তাহারা বলে, হায়! আমাদের দুঃখ। এই আদ্দ্বীনের সময়। (নবাগতকে লক্ষ্য করিয়া কোরান বলিতেছেন) ইহাই মীমাংসার কাল, তোমরা যাহার উপর মিথ্যা আরোপ করিয়াছিলে। সুরা সাফফাত : বাক্য # ২০-২১

যখন আমরা মরিয়া যাইব এবং মাটি ও অস্থি হইয়া যাইব তখন কি অবশ্য আমরা (আবার) নগরস্থ হইব? এরশাদ হইল: তোমরা কি (তাহার নিকট) উদিত (অর্থাৎ উপস্থিত) হইতে চাও? সুতরাং উদিত হইয়া তাহাকে একাকার জাহান্নামের আগুনে দেখিতে পাইল। সুরা সাফফাত : বাক্য # ৫৩-৫৫

এবং যদি আমার রবের নেয়ামতপ্রাপ্তি না হইত তবে অবশ্য আমি প্রত্যাবর্তনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হইতাম। অতএব ইহাই কি নয় যে, (আর) আমরা মৃতের সঙ্গে নহি, আমাদের পূর্বেকার মৃত্যু ব্যতীত? এবং (আর) আমরা শাস্তিপ্রাপ্তদের সঙ্গে নহি? সুরা সাফফাত : বাক্য # ৫৭-৫৯

নিশ্চয় ইহা একটা গাছ যাহা নির্গত হয় জাহান্নামের আগুনের মূলের মধ্যে, ইহার উৎপাদন এমন যেন তাহা শয়তানের মাথা। সুরা সাফফাত : বাক্য # ৬৪-৬৫

তবে কি তাহারা আমাদের শাস্তি ত্বরান্বিত করিতে চায়? যাহা দিগকে সতর্ক করা হইয়াছিল তাহাদিগের আঙ্গিনায় যখন শাস্তি নামিয়া আসিবে তখন তাহাদের প্রভাত হইবে কত মন্দ! সুরা সাফফাত : বাক্য # ১৭৬-১৭৭

তোমাদিগের যে বিপদ আপদ ঘটে তাহা তো তোমাদিগের কৃতকর্মেরই ফল। সুরা শুরা : বাক্য # ৩০

ইহাতে তাহারা প্রত্যাখ্যাত (আসন্ন) মৃত্যু ছাড়া মৃত্যুর কোনও স্বাদ গ্রহণ করে না। সুরা দোখান : বাক্য # ৫৬

যখনই জাহান্নামকে আমরা জিজ্ঞাসা করি, “তুমি কি পূর্ণ হইয়াছ” তখনই সে বলে, “আরও অধিক আছে কি”? সুরা ক্বাফ : বাক্য # ৩০

সেই সময় যাহারা বিশ্বাস করিয়াছিল তাহাদিগকে মোনাফেক নরনারীগণ বলিবে: আমাদের দিকে দেখ যাহাতে তোমাদের আলো হইতে আমরা গ্রহণ করিতে পারি। বলা হইবে, ফিরিয়া যাও তোমাদের পিছনে, তারপর আলোর সন্ধান কর (সেখান হইতে)। তারপর তাহাদের মধ্যে আঘাত হানা হইবে একটি দেয়াল দ্বারা যাহাতে থাকিবে একটি দরজা। উহার বাতেনের মধ্যে থাকিবে রহমত এবং উহার জাহেরে উহার সবদিক হইতে আজাব প্রকাশ পাইবে। সুরা হাদিদ : বাক্য # ১৩

(কিন্তু) তাহাদের হাত পূর্বে যাহা পাঠাইয়াছে সেই জন্য উহার আকাৈক্ষা এই জীবনে করিবে না। এবং আল্লাহ জালেমদের সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত। সুরা জুমা : বাক্য # ৭

আরও দৃষ্টান্ত দেওয়া হইতেছে ইমরান তনয়া মরিয়মের যে তাঁহার সতীত্ব রক্ষা করিয়াছিল, ফলে আমি তাঁহার মধ্যে রুহ ফুৎকার করিয়াছিলাম এবং সে তাঁহার প্রতিপালকের বাণী ও তাঁহার নির্দেশনাবলি বাস্তবায়িত করিয়াছিল, সে ছিল অনুগতদের একজন। সুরা তাহরিম : বাক্য # ১২

যিনি মরণ এবং জীবন সৃষ্টি করিয়াছেন তোমাদেরকে এই পরীক্ষা করিবার জন্য যে, তোমাদের মধ্যে কে ভাল কর্ম করে এবং তিনি শক্তিশালী ক্ষমাশীল। সুরা মূলক : বাক্য # ২

দেওয়া কি হয় নাই, ইনসানের উপর মহাকাল হইতে এমন একটা খ-কাল যখন সে উল্লেখযোগ্য কোনও বিষয়ই ছিল না। সুরা দাহার : বাক্য # ১

নিশ্চয়ই জাহান্নাম শাস্তির ঘাঁটি, অপরাধীদের আশ্রয়স্থল, যেথায় উহারা বহুকাল অবস্থান করিবে। সুরা নাবা : বাক্য # ২১-২৩

মানুষ ধ্বংস হউক! সে কত অকৃতজ্ঞ! তিনি তাহাকে কি হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন? শুক্র হইতে তিনি তাহাকে সৃষ্টি করেন, পরে তাহার বিকাশ সাধন করেন, অতঃপর তাহার জন্য পথ সহজ করিয়া দেন, অতঃপর তাহার মৃত্যু ঘটান এবং তাহাকে কবরস্থ করেন। পরে যখন ইচ্ছা তিনি তাকে পুনর্জীবিত করেন।
সুরা আবাসা : বাক্য # ১৭-২২

নিশ্চয়ই আমরা মানুষকে সৃষ্টি করিয়াছি সে․ন্দর্যের মধ্যে; তারপর তাহাদিগকে ফিরাইয়া দেই হীন-নিকৃষ্টদের মধ্যে। সুরাতিন : বাক্য # ৪-৫

তিনি (আল্লাহ) মানুষকে আলাক্ব হইতে (রূপান্তর) সৃষ্টি করিয়াছেন। সুরা আলাক্ব : বাক্য # ২

(যাহা সে বুঝিয়াছে) তাহা নয়, যদি সে না থামে (বা যদি সে না ফিরে) নিশ্চয় আমরা তাহাকে একটানে (বা একটা গলা ধাক্কায়) কপাল দ্বারা (বা কপাল সহকারে) লইয়া যাইব (জাহান্নামে)।
সুরা আলাক্ব: বাক্য # ১৫

(সমাপ্ত)

……………………………………
স্বারক বক্তা : সালেহ আহমেদ শিশির
সভাপতি : অধ্যাপক ড আনিসুজ্জামান
২৫ নভেম্বর ২০১৯
আর সি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়াম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!