পূর্ণচন্দ্রের কাহিনী
খুলনা জেলায় আছে শুড়িগাতী গ্রাম।
সেই গ্রামে বাস করে পূর্ণচন্দ্র নাম।।
অশ্বিনীর প্রিয় ভক্ত সরল হৃদয়।
অশ্বিনীর গুণগান গাহিয়া বেড়ায়।।
হরি হরি বলে মুখে ওড়াকান্দি যায়।
গুরুচাঁদ চরণেতে প্রণাম জানায়।।
গুরুচাঁদ আশীর্বাদ করিয়া গ্রহণ।
অশ্বিনীর পিছে পিছে চলে সর্ব্বক্ষণ।।
কিছুদিন অশ্বিনীর সঙ্গেতে ঘুরিয়া।
পুনরায় আসিলেন ঘরেতে ফিরিয়া।।
সংসারী সাজিয়া সদা করিতেন কর্ম।
হাতে কাম মুখে না এ যুগের ধর্ম।।
এই ভাবে চলিতেন ভকত সুজন।
হরিনাম করিবারে ঝরে দু’নয়ন।।
এইভাবে কতদিন গত হয়ে গেল।
দৈবের ঘটনা তাহা কে খন্ডাবে বল।।
একদিন সেই গ্রামে গন্ডগোল হয়।
দুই দলে মারামারি করিল সবায়।।
সেইখানে পূর্ণচন্দ্র ঠেকাইতে গেল।
ঠেকাইতে গিয়ে তিনি আসামী হইল।।
বিপক্ষেরা কেস করে যাইয়া থানায়।
আসামীর পক্ষ তারা পালাইয়া ভয়।।
পূর্ণচন্দ্র নির্ভয়েতে ঘরেতে রহিল।
আসামী হয়েছে তিনি কিছু না জানিল।।
একদিন সে অশ্বিনী বলে হরি হরি।
উদয় হইল এসে সেই বালা বাড়ী।।
অশ্বিনীকে দেখে সেই পূর্ণচন্দ্র বালা।
আনন্দেতে আত্মহারা হইল বিভোলা।।
অশ্বিনী চরণে গিয়ে প্রণাম করিল।
ছল ছল আখি দু’টি কহিতে লাগিল।।
এই বাড়ী এই ঘর সকল তোমার।
তোমার চরণে আমি করি পরিহার।।
বাড়ীর সবাই এসে প্রণাম করিল।
চরণ ধোয়ায়ে শেষে ঘরেতে বসাল।।
হুলুধ্বনি হরিধ্বনি করে সবে মিলে।
ধুপ ধুনা দিয়ে শেষে ভাসে আখি জলে।।
এইভাবে ভক্তি করে ভোজন করাল।
তারপরে সবে মিলে প্রসাদ খাইল।।
হরি বলে সে অশ্বিনী শয়ন করিল।
সেই দিন সেই রাত্রি তথায় রহিল।।
ভোরবেলা পূর্ণচন্দ্র ঘুম থেকে জাগি।
বারান্দায় বসিলেন হুকা সেবা লাগি।।
হেনকালে থানা হতে দারোগা আসিল।
পুলিশ সঙ্গেতে নিয়ে জিজ্ঞাসা করিল।।
পূর্ণচন্দ্র বালা নামে সে বাড়ী কোথায়।
বাড়ী আছে কি না আছে কহে মহাশয়।।
পূর্ণচন্দ্র বলে এই তার বাড়ী হয়।
মম নাম পূর্ণচন্দ্র দিনু পরিচয়।।
দারোগা বলেছে তুমি আসামী হয়েছে।
আগে পরে তাহা তুমি কখন জেনেছ।।
থানা হতে আসিয়াছি তোমাকে ধরিতে।
হুকুম আছে মোদের হাত কড়া দিতে।।
ঘর থেকে নেমে এস করিব বন্ধন।
থানাতে লইয়া যাব তোমারে এখন।।
তাই শুনে পূর্ণচন্দ্র কি যেন ভাবিয়া।
অশ্বিনীর পদপ্রান্তে কহিছে কাদিয়া।।
শুন শুন ওগো বাবা করি নিবেদন।
আসামী হয়েছি আমি বড় অভাজন।।
মারামারি গন্ডগোল আমি করি নাই।
আসামী হয়েছি কেন বল আজি তাই।।
তাই শুনি সে অশ্বিনী বাহিরেতে এল।
দারোগার কাছে এসে কহিতে লাগিল।।
থানা হতে আসিয়াছে রিপোর্ট পাইয়া।
এই আসামীর নাম শুনাও পড়িয়া।।
দারোগা সেই খাতা ধরে দেখাতে লাগিল।
পূর্ণচন্দ্র নাম কভু খুঁজিয়া না পেল।।
বার বার সেই খাতা করে অন্বেষণ।
তাই দেখে দারোগা সে ভাবে মনে মন।।
অশ্বিনীর মুখপানে দারোগা চাহিয়া।
কি যেন ভাবিয়া কাঁদে চরণে পড়িয়া।।
অপরাধ করিয়াছি কেদে কেদে কয়।
ক্ষমা কর অপরাধ ওগো মহাশয়।।
অশ্বিনী বলেছে বাবু সুস্থ কর মন।
ঈশ্বর ইচ্ছায় হয় এসব ঘটন।।
তাই শুনি সে দারোগা সকলকে নিয়া।
থানায় চলিল সবে বিদায় হইয়া।।
তাই দেখে সকলেতে মানিল বিস্ময়।
অশ্বিনীর চরণেতে গড়াগড়ি যায়।।
অধম বিনোদ বলে আর কিবা চাও।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি গুণ গাও।।