কৃষ্ণ বেপারীর কাহিনী
খুলনা জেলা মধ্যে চিতলমারী থানা।
চল বাণীয়ারী গ্রাম সকলের জানা।।
সেই গ্রামে বাস করে শ্রীকৃষ্ণ বেপারী।
অশ্বিনীর প্রিয় ভক্ত সদা বলে হরি।।
অশ্বিনীর চরণেতে দৃঢ় ভক্তি তার।
মন প্রাণ সপে দিয়ে হল নির্বিকার।।
একদিন সে অশ্বিনী ঘুরিতে ঘুরিতে।
উদয় হইল গিয়া কৃষ্ণের বাড়িতে।।
হরি বলে যখনেতে বাড়িতে উঠিল।
কৃষ্ণের রমনী এসে চরণে পড়িল।।
কেদে কেদে সেই নারী চরণ ধোয়ায়।
আসন পাতিয়া শেষে বসিবারে দেয়।।
ধুপ ধুনা দিযে সে যে হুলুধ্বনি করে।
কৃষ্ণ আসিয়া গুরুর চরণেতে পড়ে।।
যুগল চরণ ধরি কাদিতে লাগিল।
তার নারী পাখা দিয়ে বাতাস করিল।।
সংবাদ পাইয়া এল আরো দুইজন।
ভাষারাম ঠেট আর শ্রীগুরু চরণ।।
তারা এসে দুইজনে প্রণাম করিল।
আহারাও অশ্বিনীর অনুগত ছিল।।
শ্রীকৃষ্ণ বলেছে তার রমনী ঠাই।
কিবা খেতে দিবা আমি তোমাকে শুধাই।।
তার নারী ব্যস্ত হয়ে গৃহ মধ্যে যায়।
ঘরে আছে পাকা পেপে দেখিবারে পায়।।
বৈশাখ মাসের শেষ পাকা আম আছে।
তাই নিয়ে সে রমনী বাহিরে এসেছে।।
ফল কেটে খেতে দিল অশ্বিনীর ঠাই।
পরাণ ভরিয়া খেল অশ্বিনী গোঁসাই।।
তারপর তিন জনে একখানে বসে।
মাছ ধরিবারে যাবে করে পরামিশে।।
তাই জেনে সে অশ্বিনী বলিল বচন।
কোন মাছ ধরিবারে করিয়াছ মন।।
তাহারা বলেছে সবে অশ্বিনীর ঠাই।
যেই মাছ খেতে চাও এনে দিব তাই।।
অশ্বিনী বলেছে আমি আড় মাছ চাই।
পার যদি সবে মিলে এনে দাও তাই।।
তাই শুনে তিন জন করিল গমন।
জুতি হাতে চলেলেন শ্রীগুরু চরণ।।
নদীতে যাইয়া সবে নৌকায় উঠিল।
দশ হাত নৌকা বেয়ে কিছুদুর গেল।।
বৈশাখ মাসে নদীর জল কমে যায়।
অল্প জলে আড় মাছে গর্ত করে রয়।।
পাঙ্গান বলিয়া তারে জনগণ কয়।
জলে নেমে খোজ করে গোজ গেড়ে দেয়।।
একুশটি গর্তে সেই ঠিক করা আছে।
নৌকা বেয়ে তিন জনে তার কাছে গেছে।।
আগানায় জুতি হাতে শ্রীগুরু চরণ।
মাঝখানে বসে আছে সেই কৃষ্ণধন।।
পাছানায় বসে সেই ভাষারাম ঠেটা।
আস্তে আস্তে নাও বায় হাতে নিয়ে বৈঠা।।
একে একে কুড়িখানা পাঙনে কোপায়।
খালি জুতি উঠে আসে মাছ নহে পায়।।
শ্রীকৃষ্ণ বেপারী কহে এক কোপ বাকি।
এ কোপেও যদি ভাই হয়ে যায় ফাকি।।
গোঁসাই বলেছে আমি আড় মাছ খাব।
সেই মাছ যদি আজ দিতে না পারিব।।
জীবন ত্যাজীব আজি শুন ওরে ভাই।
শ্রীগুরু চরণ বলে মোর কথাই তাই।।
এই কোপে মাছ যদি মিলাতে নারিব।
এ নৌকা ডুবায়ে দিয়ে সকলে মরিব।।
এত বলি তিন জন প্রতিজ্ঞা করিয়া।
নৌকা সঙ্গে দড়ি বাধে গুরুকে স্মরিয়া।।
সে গুরুচরণ দড়ি বাধিলেন পায়।
কৃষ্ণ বেপারী সে বাধিল মাজায়।।
ভাষারাম বাধে দড়ি নিজের গলায়।
অনুরাগে তিনজন মরিবারে চায়।।
গুরুকে স্মরণ করি শেষ কোপ দিল।
এক বড় আড় মাছ সে কোপে বিধিল।।
তাই দেখে সকলের আনন্দিত মন।
তারপর খুলে ফেলে সবার বান্ধন।।
মাছ নিযে তিন জন বাড়ীতে আসিল।
অশ্বিনী তখন ওঠে রওনা হইল।।
কারে কিছু না বলিয়া দ্রুতগতি ধায়।
কৃষ্ণের রমনী গিয়ে ধরিলেন পায়।।
অশ্বিনীর পদ ধরি সে রমনী বলে।
কোন অপরাধ পেয়ে মোরে যাও ফেলে।।
যদি কোন অপরাধ করে থাকি বাবা।
অভাগিনী অবলারে ক্ষমা করে দিবা।।
সাধন না জানি বাবা ভজন না জানি।
নিজ গুনে কৃপা কর ওহে গুণমনী।।
অশ্বিনী বলেছে মাগো শুন মোর কথা।
দড়ি দিয়ে বাধে মোরে তাই পাই ব্যাথা।।
তিন জনে তিন স্থানে আমাকে বেধেছে।
চেয়ে দেখ সেই খানে ফুলিয়া রয়েছে।।
গলদেশে ফুলিয়াছে বন্ধন জ্বালায়।
কোমরে হয়েছে দাগ দেখ মোর গায়।।
পায়েতে বাধিল মোরে চেয়ে দেখ তাই।
বল মাগো এই ব্যাথা কোথায় জুড়াই।।
তাই দেখে তিনজনে চরনে পড়িল।
চরণ ধরিয়া শেষে কাদিতে লাগিল।।
নয়নের জলে ভেসে কেদে কেদে কয়।
তোমার চরণ বিনে দাড়াব কোথায়।।
ক্ষমা কর অপরাধ মাগি পরিহার।
তোমার নফর মোরা এ দেহ তোমার।।
কান্না দেখে অশ্বিনীর দয়া উপজিল।
সকলকে নিয়ে শেষে গৃহ মধ্যে গেল।।
আড় মাছ খেতে দিল রন্ধন করিয়া।
অশ্বিনী খাইল তাহা পরাণ ভরিয়া।।
অধম বিনোদ বলে বেলা বেশি নাই।
অশ্বিনীর প্রীতে সবে হরি বল ভাই।।