পাগলের গঙ্গাচর্ণা যাত্রা ও লীলাখেলা
পয়ার
গঙ্গাচর্ণা যা’ব বলি পাগল ছুটিল।
পথমাঝে পাগলামী করিতে লাগিল।।
কভু হাটে কভু দৌড়ে কভু দেয় বোল।
জয় হরি বল মন গৌর হরি বোল।।
সঙ্গেতে ছিলেন ভক্ত মতুয়ারগণ।
পাটগাতী খেয়া পার হ’য়েন যখন।।
কার্ত্তিক বাটীতে থেকে জানিবারে পায়।
হাটে যায় বলিয়া কার্ত্তিক দ্রুত যায়।।
গঙ্গাচর্ণা নিবাসী কার্ত্তিকচন্দ্র নাম।
মধ্যম গণেশচন্দ্র কনিষ্ঠ ছিদাম।।
রামচন্দ্র বৈরাগীর পুত্র তিন জন।
তিন সহোদর সবে হরি পরায়ণ।।
পাগলের প্রিয় ভক্ত প্রধান কার্ত্তিক।
ঠিক যেন হনুমান নামেতে নৈষ্ঠিক।।
গৃহকার্য সমাপন যখনেতে হয়।
নির্জনে বসিয়া হরিচাঁদ রূপ ধ্যায়।।
ওঢ়াকাঁদি মন দিয়া পাগল ভাবিয়া।
হৃদাসনে রাখে রূপ যগল করিয়া।।
পাগল যখন যাহা করেন যেখানে।
কার্ত্তিক অনেক কার্য অন্তরেতে জানে।।
আসিতেছে পাগল জানিয়া তাহা মনে।
হাটে যাব বলি সাধু চলিল তখনে।।
পাগলেরে আনিবারে চলিলেন একা।
পথিমধ্যে পাগলের সঙ্গে হৈল দেখা।।
পাগল ধরিল কার্তিকেরে জড়াইয়ে।
কার্ত্তিক পড়িল পদে দণ্ডবৎ হ’য়ে।।
পাগল আনন্দ চিত ধরিল কার্তিকে।
পুলকে পূর্ণিত হ’য়ে চুম্ব দিল মুখে।।
চুম্ব দিয়ে বলে হাটে করিয়াছ মেলা।
আমার জন্যেতে এন একটি কমলা।।
হাট কর গিয়া বাছা এস ত্বরা ক’রে।
আমাকে পাইবা রাইচরণের ঘরে।।
ভক্তগণ সঙ্গে ল’য়ে চলিল পাগল।
রাইচরণের বাড়ী উঠিল সকল।।
চাঁদ মণ্ডলের পুত্র নামেতে বদন।
তাহার ছেলের নাম শ্রীরাইচরণ।।
বড়ই নির্মল চিত সাধু সুচরিত।
হরিচাঁদ ভক্ত হরিনামে পুলকিত।।
গোলোক তাহার ঘরে লয়ে ভক্তগণ।
রাত্রি ভরি করিলেন নাম সংকীর্তন।।
নামে মত্ত নিশি গত তাহা নাহি জানে।
শেষ যামে ভোজনে বসিল সর্বজনে।।
ভোজনের শেষে ক্ষণে বিশ্রাম করিল।
সবে যাও নিজালয় পাগল বলিল।।
সকল বিদায় হ’ল বলে হরিবোল।
কার্তিকের গৃহে এসে বসিল পাগল।।
দিনভরি ফিরি ঘুরি কত বাড়ী গেল।
সন্ধ্যাকালে কার্তিকের গৃহেতে আসিল।।
কার্তিকের রমণীকে করি সম্বোধন।
বলে মাগো অদ্য শীঘ্র করহ রন্ধন।।
আমার বিশেষ কার্য আছে তোমা ল’য়ে।
মাতা পুত্রে হরি কথা কহিব বসিয়ে।।
শুনিয়া অম্বিকা দেবী রন্ধন করিল।
ক্ষণমধ্যে পাক অন্তে ভোজ সমাপিল।।
পাগল কার্তিকে কহে এ কার্য করহ।
পাকঘরে আমার বিছানা করি দেহ।।
আজ্ঞামাত্র কার্ত্তিক করিল তখনেতে।
সেই ঘরে তিনটি বসিল গোপনেতে।।
পাগল কার্ত্তিক আর কার্তিকের নারী।
হরিকথা আলাপনে বঞ্চিল শর্বরী।।
হাসে কাঁদে গলা ধরি বাহু ধরাধরি।
প্রেমে বাহ্য জ্ঞান হারা বলে হরি হরি।।
যামিনী এমনভাবে পোহাইয়া গেল।
ঝড় বৃষ্টি রাত্রি যোগে কিছু না জানিল।।
প্রভাতে বাহির হ’য়ে দেখিবারে পায়।
অন্যান্য বাড়ী ঘর ছিন্ন ভিন্ন প্রায়।।
হরিনামে কি মাহাত্ম্য বাহ্যজ্ঞান নাই।
রচিল তারকচন্দ্র হরি বল ভাই।।
পাগল সুযাত্রা করি যান ওঢ়াকাঁদি।
অপার সমুদ্র লীলা নাহিক অবধি।।
শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত সুধাধিক সুধা।
পদ্ম মকরন্দ পানে খণ্ডে ভবক্ষুধা।।