[ত্রিপদী]
তুমি হরি কৃপাসিন্ধু, অনাথজনার বন্ধু
ব্রহ্মা-বিষ্ণু-আদি-মহেশ্বর।
তিন দেব একাত্তরে, পূজা প্রকাশের তরে
ত্রিনাথ হইলে তদন্তর।।
গৃহে আসি সে ব্রাহ্মণ, হয়ে আনন্দিত মন
ত্রিণাথের করয়ে পূজন।
আনি নানা উপাচার, তবে ব্রাহ্মণ কুমার
পূজা করে দেব নারায়ণ।।
ঘটের স্থাপনা করি, ত্রিনাথের নাম স্মরি
বলে প্রভু দেহ পদছায়া।
আমি অতি মূঢ়মতি, কি জানি তোমার স্তুতি
আমায় করহ প্রভু দয়া।
করি এতেক স্তবন, পূজা করিছে ব্রাহ্মণ
হেনকালে তার গুরু আসি।।
শিষ্যে ডাকি ততক্ষণে, বলে কি কর এখানে
কহ মোরে বিশেষ প্রকাশি।।
ধ্যানেতে শিষ্য আছিল, কথা তখন না কহিল
দেখিয়া কুপিত গুরু তার।
লাথি মারি ঘট পরে, ফেলিল ধরণী পরে
তবু শিষ্যে বাক্য নাহি আর।।
তল্পিদারে ক্রোধে কন, তল্পি তুল এইক্ষণ
দুরাচার-ঘরে নাহি রব।।
শিষ্য হয়ে- গুরুপ্রতি, অমান্য করিল অতি
এইক্ষণে গৃহে চলি যাব।।
তবে গুরু ক্রোধবশে, চলে আপনার বাসে
হেনকালে শুন বিবরণ।
অমান্য করি ত্রিনাথে, ফেলে ঘট পদাঘাতে
স্ত্রী-পুত্রাদির হয়েছে মরণ।।
রোদনের ধ্বনি শুনে, তল্পিদার কহে ব্রাহ্মণে
শুন প্রভু করি নিবেদন।
বুঝি কে রোদন করে, শুনি তোমার মন্দিরে
ত্বরা গুরু করে আগমন।।
গৃহে আসি ততক্ষণ, দেখিল শূন্য ভবন
স্ত্রী-পুত্র মরেছে তিনজন।
শুনি গুরু মৃত্যু কথা, হৃদয়ে পাইয়া ব্যথা
ভূমে পড়ে হয়ে আচেতন।।
বলে পুত্র গেলি কোথা, খাইয়া আমার মাথা
একবার দেখা দে রে মোরে।
তোমার লাগিয়া বাপ, হৃদয়েতে পাই তাপ
কেমনে রহিব একা ঘরে।।
আর নাহি গৃহে রব, জলে ডুবিয়া মরিব
এত বলি আসে জলাশয়।
জলে নামিয়া যেমন, দেহ করিল পতন
অমনি আকাশবাণী হয়।।
স্থির হও দ্বিজবর, নাহি ত্যাজ কলেবর
স্ত্রী আর পাইবে তনয়।
তব শিষ্য দ্বিজবর, গিয়াছিলে তার ঘর
বসেছিল ত্রিনাথ পূজায়।।
তব সাথে সম্ভাষণ, নাহি করে সেইজন
দেখি ক্রোধে কৈলে তুমি তায়।
ঘট পদেতে ফেলিলে, তেই এত কষ্ট পেলে
স্ত্রী-পুত্র মুরিল যে হায়।।
একমনে ভক্তিভরে পূজা গিয়া ত্রিনাথেরে।
ঘুচে যাবে সকল জঞ্জাল।
শিষ্য তব ভক্তিমান, করবে তার অপমান
সেই অপরাধ হৈল তব কাল।।
ঘটে করি পদাঘাত, করেছিলে অপরাধ
আর কভু করোনা এমন।
মঙ্গল যদ্যপি চাও, শিষ্য গৃহে ফিরে যাও
ত্রিনাথের করিয়া স্মরণ।।
এবে এক কার্য কর, ত্বরা যাও তার ঘর
আদি অন্ত কহ গিয়া তায়।।
তব স্ত্রী পুত্রগণ, পাবে প্রাণ এইক্ষণ
কবিবর রচিল ভাষায়।।