শাপভ্রষ্টা ব্রাহ্মণীর টিকটিকি রূপ ধারণ ও মোক্ষণ।
পয়ার
গুরু সঙ্গে শিষ্য কহে মধুর বচন।
হেনকালে শুন এক আশ্চর্য ঘটন।।
দৈবে চাল হ’তে এক টিকটিকি পড়ি।
গর্ভিণী অবস্থা গেল পেট ফেটে মরি।।
টিকটিকি মরে গুরু সাক্ষাতে পড়িয়া।
দ্বিজ কৃষ্ণদাস কাঁদে গড়াগড়ি দিয়া।।
গুরুর সম্মুখে কেন জীব হত্যা হ’ল।
পেট ফেটে গড়াগড়ি কত কষ্টে ম’ল।।
তাহাতে এতেক কষ্ট টিকটিকি পেল।
কি হ’ল কি হ’ল বলে কাঁদিতে লাগিল।।
এত কষ্টে গুরু হে জ্যোষ্ঠির মৃত্যু হয়।
দেখে দুঃখে বুক ফাটে প্রাণ বাহিরায়।।
হরি হরি বলি দ্বিজ কাঁদিতে লাগিল।
ভগ্ন ডিম্ব হ’তে ছানা বাহির হইল।।
গুরু কহে ছানা বাঁচে আর কাঁদ বৃথা।
বিপ্র বলে কষ্ট পেল এই মম ব্যথা।।
লীলাজী বলেন বাছা আর কাঁদ মিছে।
কষ্ট নহে জ্যেষ্ঠি মরে কৃষ্ণ পাইয়াছে।।
সাধু সঙ্গে মধুমাখা কৃষ্ণ আলাপন।
হেন মরা ভবে বল মরে কোন জন।।
বিপ্র বলে তবে ওর সার্থক জীবন।
মৃতদেহ সৎকার করহ এখন।।
গুরু বলে মৃতদেহ দেহ গঙ্গাজলে।
বিপ্র দিল সাধু পদ ধৌত জলে ফেলে।।
অমনি জ্যেষ্ঠির দেহ হ’য়ে গেল লয়।
মৃতদেহ না দেখিয়া সকলে বিস্ময়।।
কেহ বলে মৃতদেহ কি হ’ল কি হ’ল।
কেহ বলে পাদোদকে প্লাবিত হইল।।
বলিতে বলিতে জল শুকাইয়া যায়।
মৃতদেহ না দেখিয়া সকলে বিস্ময়।।
বৈষ্ণবেরা বলে দেহ মিশে গেল নীরে।
হরি বলে প্রেমানন্দে সবে নৃত্য করে।।
এমন সময় শূন্যে হ’ল দৈববাণী।
আমি জ্যেষ্ঠি পূর্ব জন্মে ছিলাম ব্রাহ্মণী।।
স্বামী নাম ছিল রাম কেবল ব্রাহ্মণ।
সর্বদা করিত সাধু বৈষ্ণব সেবন।।
বড় রূপবতী আমি তখনে ছিলাম।
রূপের গৌরবে স্বামী নাহি মানিতাম।।
বৈষ্ণব সেবায় আমি ছিলাম কপট।
সর্বদা স্বামীর সঙ্গে করিতাম হট।।
একদিন মাধ্যাহ্নিক ভোজনান্ত কালে।
এক সাধু গৃহে এসে উপনীত হ’লে।।
স্বামী গিয়া বৈষ্ণবের পূজিল চরণ।
আমাকে বলিল শীঘ্র করগে রন্ধন।।
আমি বলি এই আমি করিনু রন্ধন।
অগ্নিতাপ আর মম না সহে এখন।।
স্বামী সঙ্গে ক্রোধভরে কথোপকথন।
বৈষ্ণব সহিতে করি স্বামীকে ভর্ৎসন।।
স্বামী কহে সাধুসেবা জন্যে টকটকি।
জন্মান্তরে নিশ্চয় হইবি টিকটিকি।।
কতদিন পরে মম হইল মরণ।
এবে জ্যেষ্ঠিরূপে মোর জনম ধারণ।।
নানা ঠাই ভ্রমিয়া আইনু এই ঘরে।
দেখি এই বিপ্র সাধু সাধুসেবা করে।।
সাধু সঙ্গে নাম সংকীর্তন যবে হয়।
সেই প্রেম নাম এসে লাগে মোর গায়।।
শরীর দ্রবিল মম বলে হরি হরি।
ইচ্ছা হ’ল এই প্রেমমধ্যে পড়ে মরি।।
নামমন্ত্র বীজ রস ঢোকে ঢোকে খাই।
ইচ্ছাতে হইল ডিম্ব সঙ্গ করি নাই।।
ইচ্ছা হ’ল সংকীর্তনে পরমাণু থাক।
উদর হইতে মম ডিম্ব পড়ে যাক।।
আছাড়িয়া অঙ্গ ছাড়ি পড়িনু প্রত্যক্ষে।
সে ফল পাইনু সাধুসঙ্গ কল্প বৃক্ষে।।
এই আমি সেই মুনি পত্নী যে ছিলাম।
নিজ মনসিজ বীজ কীর্তনে গেলাম।।
উদকে পড়িয়া দেহ উদকে মিশিল।
ধনঞ্জয় বায়ু মোরে উর্দ্ধে আকর্ষিল।।
এবে আমি দিব্য দেহ করিয়া ধারণ।
পুষ্পরথে চড়ি করি বৈকুণ্ঠে গমন।।
এই কথা প্রভুর মুখে করিয়া শ্রবণ।
নৃত্য করে প্রভুর যতেক ভক্তগণ।।
প্রভুর ভকত এক নামেতে মঙ্গল।
কক্ষবাদ্য করি বলে জয় হরিবল।।
রামচাঁদ আর রামকুমার ভকত।
ধরণী লু’টায়ে কাঁদে শুনি কথামৃত।।
গোবিন্দ মতুয়া করে বাহু আস্ফোটন।
নৃত্য করে হরি বলে করেন রোদন।।
প্রেম সম্বরণ করি বাটীর নিম্নেতে।
নিভৃতে বসিল পরে গম্ভীর ভাবেতে।।
উথলিল ভক্তদের চিন্তা তরঙ্গিণী।
কবি কহে সাধু মুখে মধু রস বাণী।।