অভিন্নাত্ম দ্বিপুরুষের একসঙ্গে মৃত্যু ও দাহন
দীর্ঘ ত্রিপদী
গোঁসাই যাত্রা করিল পাদুমা গ্রামে আসিল
ফেলারাম বিশ্বাসের ঘরে।
শিরোমণি জ্যেষ্ঠ পুত্র আত্মা তার সুপবিত্র
ফেলারাম নাম তেই ধরে।।
গাছবাড়ীয়া নিবাস নামে চৈতন্য বিশ্বাস
তার পুত্র কুশাই নামেতে।
কুশ আর ফেলারাম দুই জনে গুণধাম
মত্ত হন প্রভুর প্রেমেতে।।
দুই জন একতরে হরিনাম করি ফেরে
এক সঙ্গে শয়ন ভোজন।
দুই জনে এক বুলি একসঙ্গে স্নান কেলী
গলাগলি করিয়া শয়ন।।
কোন গ্রামের ভিতর ব্যাধি হ’লে কলেরার
নিতে এলে দু’জনেই যেত।
সেই সেই গ্রামে গিয়ে দু’জনে একত্র হয়ে
হরিনামে কলেরা তাড়া’ত।।
হরিলুট দিতে হ’লে দু’জন সুজন মিলে
সেই বাড়ী যেত দুইজন।
নাম করে মধুস্বরে নাম গানে মোহ করে
দু’জনেই মোহ অচেতন।।
কুশাইর মৃত্যুকালে বদনেতে হরি বলে
সবে বলে হরিনাম লও।
আমি যাত্রা করিলাম অদ্য যাইব শ্রীধাম
ফেলারামে সংবাদ জানাও।।
কুশইর এক আত্ম এ সংবাদ দিল দ্রুত
পদুমায় ফেলারাম ঠাই।
শুনি কহে ফেলারাম যে সংবাদ শুনিলাম
দাদা গেল তবে আমি যাই।।
যাইব দাদার সাথে দাদা যান যেই পথে
আমি তবে সেই পথ লই।
জন্মিলে মরণ আছে কেবা কতদিন বাঁচে
কোন সুখে আমি বেঁচে রই।।
নাহি রোগ নাহি ব্যাধি বলেছেন কাঁদি কাঁদি
এই আমি ওঢ়াকাঁদি যাই।
দাদা ম’ল চিতা পরে সে সাথে দিও আমারে
একত্তরে যাব দুটি ভাই।।
বলে হরে কৃষ্ণ! রাম! প্রাণ ত্যজে ফেলারাম
প্রাণ যায় কুশাইর ঠাই।
দু’জনের সৎকার হ’ল এক চিতা পর
একত্র হইল দু’টি ভাই।।
এ দিকে সৎকার করে দেহে গলাগলি ধরে
ওঢ়াকাঁদি চলিল দু’জন।
যাইতে শ্রীধাম পথে দেখা হ’ল আত্ম সাথে
বাটী গিয়া শুনিল মরণ।।
ঠাকুর দর্শন করি দোঁহে বলে হরি হরি
নিত্য দেহ প্রেমেতে মগন।
ঠাকুরের আজ্ঞামতে চলিল পুষ্পক রথে
দোঁহে যান বৈকুণ্ঠ ভবন।।
শুনেছি সাধুর তরে যাহারা পিরিতি করে
একের মরণে দুই মরে।
তাহা যদি নাহি হয় পিরিতি কাহারে কয়
হেন প্রেম নাহি যেন করে।।
দুই জনে দুই স্থলে কোন দ্রব্য কেহ খেলে
দু’জনেই সুস্বাদ পাইত।
যে যাহা ভেবেছে মনে দেখা হ’লে দুই জনে
মনোকথা প্রকাশ করিত।।
পুরুষে পুরুষে আর্তি যেন পুরুষ প্রকৃতি
পিরিতে সুহৃদ সুললিত।
রসরাজ প্রেমোজ্বল রসে করে টলমল
উদার উন্মত্ত চিত রীত।।
দু’জনের প্রেম ভক্তি হ’ল হরিচাঁদ প্রাপ্তি
নিযুক্ত হইল সেবা কাজে।
দু’জনার প্রেমোৎসবে হরি হরি বল সবে
কহে দীন কবি রসরাজ।।