শ্রীশ্রীহরি লীলামৃত গ্রন্থমুদ্রণে আলোচনা
গোস্বামী তারকচন্দ্র ভক্ত-শিরোমণী।
স্বপ্নাদেশে রচিলেন “লীলামৃত” খানি।।
মহাপ্রভু গুরচাঁদ গ্রন্থ শুনি কয়।
‘উত্তম হয়েছে গ্রন্থ প্রভুর কৃপায়।।”
“শ্রীহরি চরিত্র সুধা” আদি নাম ছিল।
শশীবাবু বলিলেন “নাম নহে ভাল।।”
তিনি রাখিলেন নাম “হরিলীলামৃত”।
গুরুচাঁদ বলে “নাম হয়েছে সঙ্গত।।”
পুনরায় প্রভু বলে “শুন ভক্তগণ।
অবশ্য করিতে হবে এ গ্রন্থ মুদ্রণ।।
সবে মিলি কিছু কিছু অর্থ যদি দাও।
মুদ্রিত আকারে তবে সবে গ্রন্থ পাও।।”
ভক্ত গণে কিছু কিছু স্বীকার করিল।
কিছু অর্থ সেই খানে আদায় হইল।।
বার্দ্ধক্যে দুর্ব্বল বটে তারক গোঁসাই।
তিনি কহে “চল সবে ভিক্ষার কারণে।।
এক সঙ্গে চারিজন চলিল দক্ষিণে।
ভক্ত গৃহে চলে সবে ভিক্ষা লাগি যাই।।
দলপতি সাজিলেন তারক প্রাচীন।
বাবুরাম, হরিবর, সঙ্গেতে বিপিন।।
এক সাথে চারিজনে ভ্রমে দেশে দেশে।
আদায় হইল কিছু টাকা অবশেষে।।
পরিমাণ দেড় শত হইল আদায়।
তথা হতে শ্রীতারক দেশে ফিরে যায়।।
পথিমধ্যে দুর্গাপুরে রাত্রি কাটাইল।
সব টাকা একত্তরে হরিবরে দিল।।
গৃহে দিয়া গোস্বামীজী হইল অচল।
অন্তরে বুঝিয়া দেখে এত মৃত্যুকাল।।
নিজ-গৃহে হরিবরে ডাকিয়া আনিল।
“লীলামৃত” গ্রন্থখানি তার কাছে দিল।।
যাদবে ডাকিয়া বলে আর হরিবরে।
“মুদ্রিত করিও গ্রন্থ দোঁহে চেষ্টা করে।।”
অল্প দিন পরে তবে তারক গোঁসাই।
জীব-লীলা সাঙ্গ করে সবে জানে তাই।।
তার পরে হরিবর যাদব সহিতে।
বহু চেষ্টা করিলেন গ্রন্থ ছাপাইতে।।
আবশ্যক অর্থ কড়ি সংগ্রহ না হয়।
অর্থাভাবে গ্রন্থ ছাপা বাদ পড়ে যায়।।
সকলে আশ্চর্য্য হ’ল এ-কথা ভাবিয়া।
গ্রন্থ-ছাপা বন্ধ থাকে কিসের লাগিয়া?
মতুয়ারা সবে যদি হয় এক মন।
গ্রন্থ-ছাপা বন্ধ থাকে কিসের কারণ?
মুখে মুখে বলে সবে কাজ নাহি হ’ল।
সে-ভাব দেখিয়া সবে আশা ছেড়ে দিল।।
হরিবর তবু কিন্তু চেষ্টা নাহি ছাড়ে।
এই ভাবে দিনে দিনে দিন যায় বেড়ে।।
তেরশ’ একুশ সালে বারুণী সময়।
হরিবর কেন্দে কেন্দে গুরু চাঁদে কয়।।
“দয়া করে বাবা তবে করুন আদেশ।
লীলামৃত গ্রন্থ ছাপা করিবারে শেষ।।
আপনার আজ্ঞা বিনে কিছুই হবে না।
আজ্ঞাছাড়া মোরে টাকা কেহ’ত দিবেনা।।”
প্রভু বলে হরিবর আমি দিচ্ছি বলে।
যে যাহা পরিবে টাকা দিবে তোমাস্থলে।।
ইচ্ছাময় কিবা ইচ্ছা করে অন্তরালে।
গ্রন্থছাপা হবে কিনা কিছু নাহি বলে।।
কিছু কিছু টাকা সবে দিলে হরিবরে।
এবে শুনে ইচ্ছাময় কোন ইচ্ছা করে।।