ভবঘুরেকথা
অশ্বিনী গোসাই

শীতলের গুরুভক্তি
গোড়ানালুয়া গ্রামেতে নামেতে শীতল।
হরিভক্ত শিরমণী বলে হরি বল।।
বাড়ই বংশেতে জন্ম হইল তাহার।
অশ্বিনীকে ভালবাসে নির্ম্মল অন্তর।।
অশ্বিনীর গুণকথা বলিতে বলিতে।
ঝর ঝর আখি দু’টি লাগিত ঝরিতে।।
মাঝে মাঝে সে অশ্বিনী সে বাড়ী যাইত।
পরিবার সহ এসে পদেতে পড়ি।।
ভক্তি করে অশ্বিনীকে করাত ভোজন।
সেবাতে হইত তুষ্ট অকতের মন।।
শীতলের মন ছিল অতীব সরল।
অশ্বিনীকে কাছে পেল ঝরে আখিজল।।
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ নামেতে মাতিয়া।
অশ্বিনীকে ভালবাসে মন প্রাণ দিয়া।।
যে সময় যেই ফল গাছেতে পাকিত।
অশ্বিনীকে আগে দিয়ে পরে সে খাইত।।
একদিন তার গাছে পেঁপে পেকেছিল।
অশ্বিনীকে খেতে দিয়ে মনেতে ভাবিল।।
দুই দিন পরে তাহা গেল ভুলিয়া।
পাঁচদিন পরে সেই অশ্বিনী সুজন।।
শীতলের বাড়ী এসে দিল দরশন।
শীতলের নারী এসে ধোয়াল চরণ।।
শীতল আসিয়া করে চরণ বন্দন।
চরণ ধোয়ায়ে শেষে আসনে বসাল।।
চিড়ামুড়ি খেতে দিবে জোগাড় করিল।
মুড়ি না খাইব আমি বলেছে গোঁসাই।
পাকা ফল খাব আমি এনে দেও তাই।।
তাই শুনি সে শীতল কেঁদে ছাড়ে হাই।
পাকা পেঁপে ঘরে আছে মোর মনে নাই।।
তোমাকে খাওব বলে ঘরেতে রেখেছি।
মন বড় দুরাচার ভুলিয়া গিয়েছি।।
এত বলি তার নারী গৃহ মধ্যে যায়।
পাকা পেঁপে এনে দিল অশ্বিনী সেবায়।
ফল খেয়ে বলেছেন অশ্বিনী গোঁসাই।।
তোমাদের দেয়া ফল বড় ভাল খাই।।
তারপর সে রমনী পাক ঘরে গেল।
হরিভক্ত সেবা লাগি রন্ধন করিল।।
গুরুকে করায় সেবা হরি বলে মুখে।
অশ্বিনী করেন সেবা পরম কৌতুকে।।
সেবা করি সে অশ্বিনী বিশ্রাম করিল।
পিঠা তৈরী করিবারে প্রস্তুত হইল।।
আলো চাল ভিজাইয়া আনিল যখন।
তখন অশ্বিনী উঠে করিল গমন।।
তাই দেখে কাঁদিতেছে শীতলের নারী।
অশ্বিনী চরণে পড়ে যায় গড়াগড়ি।।
অশ্বিনী বলেছে মাগো শুন দিয়া মন।
গুড়িগাতী উৎসবে যাইব এখন।।
সেইখানে দিয়ে মাগো অদ্য নিশি রব।
ফিরিবার পথে তব পিঠে খেয়ে যাব।।
এত বলি সে অশ্বিনী করিল গমন।
তাই শুনি সকলের আনন্দিত মন।।
তারপর চাল কুটি পিঠা যে করিল।
খেজুরের রস দ্বারা পিঠা ভিজাইল।।
সেই পিঠা হড়ি করি সরা চাপা দিয়া।
রাখিলেন যত্ন করি ঘরেতে তুলিয়া।।
আর যত পিঠা ছিল ছেলে মেয়ে খেল।
স্বামী সনে তার নারী পিঠে না খাইল।।
আজ আসে কাল আসে মনেতে ভাবিল।
এইভাবে সাত দিন গত হয়ে গেল।।
সাতদিন পরে সেই অশ্বিনী সুজন।
শীতলের বাড়ী এসে দিল দরশন।।
শীতলের নারী আর শীতল আসিয়া।
কাঁদিতে লাগিল তারা পদেতে পড়িয়া।।
কেঁদে বলে ওগো বাবা বলি তব ঠাই।
পদে যেন থাকে ভক্তি এই ভিক্ষা চাই।।
শীতল কহিছে তার নারীর নিকটে।
পুনরায় চাল কুটি করে দাও পিঠে।।
তাই শুনি সে অশ্বিনী কহিতে লাগিল।
ঘরে আছে ভিজে পিঠি তাই খাব ভাল।।
তাই শুনি তার নারী গৃহ মধ্যে যায়।
ভিজান পিঠার হাড়ি আনিল তথায়।।
হাড়ি খুলে খেতে দিল অশ্বিনীর ঠাই।
পরাণ ভরিয়া খেল অশ্বিনী গোঁসাই।।
অশ্বিনীর সঙ্গে যত ভক্তগন ছিল।
যেমন টাটকা পিঠা তেমন খাই।।
অধম বিনোদ বলে আর কিবা চাও।
অশ্বিনীর প্রীতে সবে হরি গুণ গাও।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!