ভায়াবহ বন্যা
চৌদ্দশত সাত সালে দুরন্ত এ বন্যা।
ভয়ংকরী রূপে এল পাহাড়ীয়া কন্যা।।
উন্মাদিনী সম ধায় কল কল ধনী।
ত্রাসিত মানব কুল গ্রাসিল মেদিনী।।
উন্মত্ত যৌবন লয়ে ফুলাইয়া বুক।
ভাসাইয়া জন প্রাণী দেখিছে কৌতুক।।
দয়া নাই মায়া নাই পাষাণীর মেয়ে।
ধ্বংস করিবারে এল নদী খাল বেয়ে।।
গ্রাসিল ক্ষেতের শস্য আর বাড়ী ঘর।
সলিল সমাধি হলো আর কত নর।।
চারিদিকে হাহাকার কেন্দে ছাড়ে হাই।
বাঁচিবার ভরসায় বৃক্ষে নিল ঠাই।।
সে খানেও বাঁচিল না বিধির লিখন।
বিষধর সর্প এসে করিল দংশন।।
গো মহিষ ম’ল কত কে করে গণনা।
বন্য পশু ম’ল কত সাধ্য নাই জানা।।
এই ভাবে কত জন হারাল জীবন।
ভাষা দিয়ে কি লিখিব আমি অভাজন।।
কলার ভেলায় কেহ ভাসিয়ে বেড়ায়।
কি করিবে কোথা যাবে ভাবিয়া না পায়।।
কত শিশু জল স্রোতে ভাসিয়া বেড়ায়।
অকালেতে ম’ল তারা কি লিখি ভাষায়।।
শিশু ছেলে লয়ে কোলে কত নারী নর।
অতি কষ্টে ওঠে গিয়ে ছাদের উপর।।
কেহ কেহ দোতলায় নিয়াছে আশ্রয়।
মাচা করে আছে কত বাঁচিবার দায়।।
নাদায় ভরিয়া শিশু ছেড়ে দেয় জলে।
ভাসিতে ভাসিতে যায় কোন দেশে চলে।।
ঘরের চালেতে বসে বিড়াল কুকুর।
অনাহারে কান্দিতেছে মিলাইয়া সুর।।
মৃত প্রাণী ভেসে যায় হংসের আকার।
এদৃশ্য যায় না দেখা লিখিব কি আর।।
স্বামী হারা বিরহিনী কান্দিয়া বেড়ায়।
নারী হারা নর কত করে হায় হায়।।
সর্বস্য হারায়ে কেহ কেদে ছাড়ে হাই।
কি করিবে কোথা যাবে কোন ঠাই নাই।।
দিনাজপুর মালদা ঐ মুর্শিদাবাদ।
ভয়াবহ জল রাশি ঘটা’ল প্রমাদ।।
নদীয়ার জেলা সহ আর বর্ধমান।
উত্তর চব্বিশ পরগণা ভাসমান।।
বাকুড়া হুগলী আর বীরভূম সহ।
এই কয় জেলা হল বন্যা ভায়বহ।।
দুরান্ত রাক্ষসী বন্যা কোথা হতে এল।
মানুষের সব কিছু কেড়ে লয়ে গেল।।
বয়সে প্রাচীন দেশে আছে যারা যারা।
এতবড় বন্যা কেহ দেখে নাই তারা।।
এ দীন বিনোদ বলে ঈশ্বরের লীলা।
ভাঙ্গা গড়া যত কিছু তার সব খেলা।।
সমাপ্ত