ভবঘুরেকথা

শ্রী শ্রী হরিচাঁদের তিরোভাব ও শ্রী শ্রী গুরুচাঁদের শক্তি স্থিতি

জগতের হিত তরে প্রভু নর দেহ ধরে।
যুগে যুগে আসি করে জীবের কল্যাণ।
আদর্শ যে ধরে তার করুণার পারাবার
তাঁহাকে করি আঁধার হয় অধিষ্ঠান।।
লোক মুখে শুনি কথা আছে তাতে যৌক্তিকতা
শক্তি নাকি যথা তথা, নারে রহিবারে।
সিংহ দুগ্ধ মেটে ভাণ্ডে রাখে যদি কোন ভণ্ডে
পাত্র ভাঙ্গি সেই দণ্ডে দুগ্ধ যায় পড়ে।।
স্বর্ণ পাত্র হলে পরে সিংহ দুগ্ধ তাহা ভরে
কষ্ট নাহি রাখিবারে শুনি এই কথা।
কোন সত্য কথাচ্ছলে এই বাণী যায় বলে
গূঢ় অর্থ তার তলে আছে বটে গাঁথা।।
পাত্র গুণে শক্তি রয় অপাত্রেতে নষ্ট হয়
তাই সাধু শাস্ত্রে কয় নিগূঢ় কাহিনী।
সিংহ দুগ্ধ যাহে রয় স্বর্ণ পাত্র সে নিশ্চয়
মেটে পাত্রে নাহি রয় মোরা তাই শুনি।
ক্ষীরোদ বিহারী হরি হ’ল পূর্ণ লীলাকারী
এল সফলানগরী এই বঙ্গ দেশে।
জানাতে গার্হস্থ্য ধর্ম গৃহ ধর্ম সার মর্ম
একত্রিত জ্ঞান কর্ম ঋষি গৃহি বেশে।।
প্রথমে আবাদ কৈল পাপ কলি নাশ হৈল
বদ্ধ জীব ধরা পৈল প্রেমের খেলায়।
ক্ষেত্র হল সুপ্রস্তুত দেখি যশোবন্ত সুত
গুরুচাঁদে অবধূত নিজে ডাকি লয়।।
মানব আচারে যাহা পালন করিল তাহা
কত দয়া দেখ আহা জীবগণ প্রতি।
আদর্শ মানব রূপে গুরুচাঁদ বিশ্ব ভূপে
হেরিয়া নয়ন কূপে পায় মহাপ্রীতি।।

উত্তর সাধক তাঁরে ইচ্ছিলেন করিবারে
এ ভাব জানি অন্তরে করে সেই মত।
বুঝিয়া প্রভুর ভাব গুরুচাঁদ মহাভাব
বাসনা ত্যজিয়া সবে পায় মনোরথ।।
বার’শ চুরাশি সাল মধুর বসন্ত কাল
ঘোর কুজ্ঝটিকা জাল বিদায় মাগিল।
উত্তর আয়ন আসে আলোকে বসুধা হাসে
মধুর ফুলের বাসে জগত ভরিল।।
সিংহাসন ছাড়ি হায় শীত যেন চলি যায়
অভিষেকে রাজা হয়, নবীন বসন্ত।
দেখি সেই রূপ প্রায় হরি দেহ ছাড়ি যায়
পশি গুরুচাঁদ কায় পূর্ণ শক্তিমন্ত।।
ভক্ত কান্দিয়া কয় “বল প্রভু দয়াময়
তোমা বিনা কি উপায় হবে মো’ সবার।
সূর্য বিনা যথাকাশ যজ্ঞ বিনা পীতবাস
বায়ু ছাড়া যথাশ্বাস এমনি আকার।।
মনি হারা যথা ফণী চক্ষু যথা হারা মণি
বল্লভ হারা রমণী প্রাণ হারা কায়া।
তুমি বিনে হরি মনি দিবসে হ’ল যামিনী
এ যেন লতিকা ধ্বনি হারা বৃক্ষ ছায়া।।
মো’ সবে ত্যজিবে যদি এত প্রেম গুণনিধি
কেন তবে দেখাইলে ওহে গুণমণি।
তোমা যদি হারা হই কেমনে বা ঘরে রই
অসহ বিরহ-জ্বালা দিবস রজনী।। য
দি প্রভু যেতে চাও মো’ সবারে সঙ্গে লও
দারা পুত্র সব বৃথা তুমি যেথা নাই।
পরাণ-পরাণ তুমি অন্তরের অন্তর্যামী
পরাণ বিহনে ব্যাথা কোথায় জুড়াই।।
তাই বলি ওহে নাথ সবাকারে লও সাথ
তব সঙ্গে রহি যদি কোন দুঃখ নাই।
যখনে ত্যজিবে দেহ আর না বাঁচিবে কেহ
বিচ্ছেদ বিরহ দাহে পুড়ে হবে ছাই।।
কত কথা পড়ে মনে প্রতিদিন প্রতিক্ষণে
কতই করেছ দয়া কিছু না চাহিতে।
সুখে দুখে সবা সনে রয়েছে আপন জ্ঞানে
বুঝেছ বুকের ব্যাথা কিছু না কহিতে।।
এমন পরম বন্ধু এমন করুণা সিন্ধু
হয় নাই হবে নারে কভু এ জগতে।
মন জেনে বলে কথা মুখ দেখে বোঝে ব্যাথা
মন চুরি করি লয় আঁখি পালটিতে।।
মোরা সবে ঘোর অন্ধ তুমি যে পরমানন্দ
আনন্দ আলোকে প্রভু ধাঁধা দিলে কাটি।
অকূল সাগর বুকে মো’ সবারে বুকে রেখে
পরম আদরে নাথ পালিয়াছ খাঁটি।।
তুমি যদি ছেড়ে যাবে বল আর কেবা ভবে
সম্পদে বিপদে নাথ রক্ষিবে সবারে।
তোমা বিনে সবে মোরা পড়ে রব জ্যান্তে মরা
দিন মণি হীন যেন গভীর আঁধারে।।
নিবেদন রাঙ্গা পায় মোদেরে ঠেলনা পায়
তব পায় সবে পায় যাহা কিছু পায়।
তুমি হরি কল্প বৃক্ষ শোভে ফল লক্ষ লক্ষ
সর্ব্ব সিদ্ধি ফলদাতা তুমি রসময়।।
মোরা কিছু নাহি চাই শুধু যে তোমারে চাই
আপন কেহ যে নাই তুমি বিনে ভবে।
তুমি যদি যাবে ছেড়ে প্রাণ সব নিবে কেড়ে
জ্বলিবে সকল হিয়া দুরন্ত বাড়বে।।
দয়া করি ফিরি চাও কৃপা নিধি কথা কও
মোদের সহিতে রহ জগৎ জীবন।
কিংবা কর এই কাজ হান শিরে ঘোর বাজ
এক সঙ্গে হোক তবে সবার মরণ।।
যে দেশে নাহিক হরি সেথা থেকে কিবা করি
শূন্য দিবা বিভাবরী শ্রী হরি বিহনে।
প্রাণ যদি চলি যায় শূন্য দেহে কিবা রয়
কিবা কাজ দিবে বল অন্ধের নয়নে।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!