শ্রীশ্রীবাসুদেবজীর স্নান যাত্রা
দীর্ঘ ত্রিপদী
জগন্নাথ স্নানযাত্রা, ব্রাহ্মণেরা একত্রতা
হ’ল সবে স্নানের কারণ।
গিয়া পুকুরের ঘাটে, বাসুদেবে রেখে তটে,
করে জলকেলী সংকীর্ত্তন।।
ঝাঁজ শঙ্খ ঘন্টা ধ্বনী, কুলবতীর হুলুধ্বনী,
সুগন্ধি কুসুম ফেলাফেলি।
বাসুদেবে ল’য়ে কোলে, নামি পুষ্করিনী জলে,
সব মেলি করে জলকেলি।।
বাসুদেব ছিল কোলে, কোল হ’তে নামি জলে,
ছল করি লুকাইয়া রয়।
সে বিপ্র জলে নামিয়া, বাসুদেবে হারাইয়া,
আর নাহি অন্বেষিয়া পায়।।
বিপ্র বলে কিবা হ’ল, বাসুদেব কোথা গেল,
ডুব দিল না পাই খুজিয়া।
সব দ্বিজ তাহা শুনি, জলে ডুবয়ে অমনি,
খুজিতেছে ডুবিয়া ডুবিয়া।।
যত ছিল প্রেমানন্দ, সব হ’ল নিরানন্দ,
জলে হারাইয়া বাসুদেব।
কেহ বলে হায় হায়, কোথা বাসুদেব রায়,
কেহ কাঁদে হাহাকার রবে।।
কূলে তার বক্ষঃদেশ, মধ্যে তার গলদেশ,
পুকুরের বারি পরিমাণ।
পুকুরের অল্প জলে, বাসুদেব লুকাইলে,
কি হ’ল কোথায় অন্তর্ধান।।
গ্রামের ব্রাহ্মণ মাত্র, সকলে হয়ে একত্র,
বাসুদেবে অন্বেষণ করে।
হয়ে এল সন্ধ্যাকাল, ডুবাইয়া চক্ষু লাল,
হাহাকার করে উচ্চৈঃস্বরে।।
কেহ বলে অমঙ্গল, কেহ বলে হরিবোল,
কেহ বলে রামকান্তে কও।
তার বাসুদেব এনে, জোর করে রাখ কেনে,
সে কারণ অপরাধী হও।।
যে দিনে ফিরিয়া ছিল, হইত না অমঙ্গল,
তার বাসুদেব তারে দিলে।
মোদের থাকিলে ভক্তি, কেন বাসুদেব মূর্ত্তি,
ছল করি ডুব মারে জলে।।
দ্বিজগণ সকাতর, জাগরণে নিশি ভোর,
রামকান্তে সংবাদ জানায়।
স্বান করাবার তরে, বাসুদেবে লয়ে নীরে,
হারা’লেম বাসুদেব রায়।।
রামকান্ত ধীরে ধীরে, গিয়া পুকুরের তীরে,
অতঃপর জলে নামিলেন।
জলমধ্যে দণ্ডাইয়া, বাসুদেবের লাগিয়া,
পদ দিয়া তল্লাস করেণ।।
ব্রাহ্মণেরা বলে রাগী, দুরাচার রে বৈরাগী,
পা দিয়া তালাসে বাসুদেবে।
মুনি ঋষি করে ধ্যান, ব্রহ্মা করে ব্রহ্ম জ্ঞান,
কমলা যাহার পদ সেবে।।
বাসুদেব কক্ষমধ্যে, রামকান্ত বামপদে,
ঠেলে ফেলে পুকুরের পার।
হাতে ধরি লয়ে কোলে, বাসুদেবে ডেকে বলে,
হারে বাসু কি মন তোমার।।
ব্রাহ্মণের বাড়ী রহিবা, কিম্বা মম সঙ্গে যা’বা,
হাস্য মুখে কহত আমায়।
বাসুদেব হাস্য করে, দ্বিজগণ সবে হেরে,
হাসি লুকায় বিদ্যুতের ন্যায়।।
রামকান্ত কুতুহলে, দ্বিজগণে ডেকে বলে,
বাসুদেব আমার দেবলা।
না রহিবে দ্বিজালয়, মোর সঙ্গে যেতে চায়,
আমার যে হ’তে চায় চেলা।।
ব্রাহ্মণেরা ছিল রুষী, দেবলা মুখেতে হাসি,
দেখে আর নাহি সরে বাক।
বলে ওরে রামকান্ত, তোর ভকতি একান্ত,
তোর বাসু তুই নিয়া রাখ।।
বাসুদেব রামকান্ত, মহিমার নাহি অন্ত,
লীলামৃত মাধুর্য্যের সার।
পাগলচন্দ্র আদেশে, হরিচাঁদ কৃপালেশে,
কহে কবি রায় সরকার।।