জন্মাষ্টমীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
পৃথিবীর আদি ভাষাগুলোর প্রায় সবই প্রকৃতির বিভিন্ন শব্দকে ভেদ করে তা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে ভারতবর্ষের প্রাচীন ভাষার প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অক্ষর বিশ্লেষণ করলে তাই ব্যক্ত হয়। এর প্রতিটা শব্রে মাঝেই তার বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায়। ভালো মানিয়েছে-ভালো লাগছে বলে কোনো কিছুর নামকরণ বা শব্দ বসিয়ে য়ো হয়নি।
প্রত্যেকটি শব্দের পেছনে রয়েছে অন্তনির্হিত অর্থ। তাই আদি শব্দ বিশেষ করে সংস্কৃত শব্দগুলো ভালো করে বিশ্লেষণ করলে প্রকৃত অর্থ তাতেই খুঁজে পাওয়া যায়। আর এই শব্দের ভেতরে লুকায়িত অন্তনির্হিত অর্থ খুঁজতে গিয়ে কৃষ্ণ-জন্মাষ্টমীর কিছু তথ্য প্রকাশের চেষ্টা করা হলো-
কৃষ্ণ:
- প্রাণ বা আত্মাই হল কৃষ্ণ। এই প্রাণ অব্যক্ত।
- দেবকী হলেন ‘দৈবশক্তির ধারণকারী’ আর বসুদেব হলেন ‘আত্মার শক্তি’। প্রকৃতপক্ষে দেবকী এবং বসুদেব হলেন দৈবী শক্তির ধারক ও পরাপ্রকৃতির প্রতীক।
- ভাদ্রমাস হলো, ভদ্র+ষ্ণ= ভাদ্র।
- আমরা জানি, কৃষ্ণপক্ষে চন্দ্রের শক্তি ক্ষয় বা ক্ষীণ হয় এবং শুক্লপক্ষে এর শক্তি বৃদ্ধি পায়। অন্তর্জগতে চন্দ্র হচ্ছে ‘আজ্ঞা চক্র বা সোমমন্ডল’।
- এখানে শুধু দুইটা বৃত্তি পরা ও অপরা।
- অপরা হচ্ছে জাগতিক জ্ঞান এবং পরা আধ্যাত্মিক জ্ঞান।
- অষ্টমী তিথিতে চন্দ্রের তথা মানব মনের বৃত্তির ক্ষয় হতে হতে অর্ধেকে গিয়ে পৌঁছায়। মনের চঞ্চলতা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এটাই সাধনার মোক্ষম সময়।
- মন যখন বহির্জগতের কামনা বাসনা মুক্ত হয়, বৃত্তি মুক্ত হয় তখনই তা অন্তর্মুখি হয়ে আজ্ঞাচক্র ভেদ করা সম্ভব।
- আজ্ঞাচক্র বা সোমমন্ডল তথা চন্দ্রমন্ডল ভেদ করা মানেই বৃত্তি শুন্যতা ও পরমের উপলব্ধি।
- সেটাই পরম শিবের শ্রীকৃষ্ণের অধিষ্ঠান সহস্র কমল চক্রে সহস্রার চক্রে অবস্থিত নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রবিন্দু।
- মাটি, জল, তেজ, বায়ু, আকাশ, মন, বুদ্ধি ও অহংকার, এই অষ্ট প্রকৃতি নিয়ে প্রাণ শক্তি প্রকাশ হলেন।
- তাই কৃষ্ণের জন্মদিন না বলে জন্মাষ্টমী বলা হয়।
কংসের কারাগার:
- কম্+স=কংস।
- ‘কম্’ মানে কামনা বাসনা অর্থাৎ বন্ধন বা সংস্কারের কারাগার।
- অর্থাৎ যে অস্তিত্ত্ব ভয়াবহ যে অস্তিত্ত্ব মুক্তির অন্তরায়, সেই কংস।
- কারাগার থাকে রুদ্ধ, সেই কারাগার হলো উন্মুক্ত।
- অর্থাৎ বন্ধন যুক্ত দেহরুপ কারাগারের রুদ্ধ দুয়ার মুক্ত হলো একমাত্র প্রাণকৃষ্ণের পরশে।। অন্য কোনো ভাবে নয়।
যমুনা:
- মানব দেহের দক্ষিণ অংশে প্রবাহিত পিঙ্গলা নাড়ী।
- সাধক পিঙ্গলা রুপী যমুনা পার হতে পারলে, আনন্দ লোকের সন্ধান পান, হয় আত্মদর্শন।
- বসুদেবকে অর্থাৎ পরাপ্রকৃতিকে যমুনা পার করায় স্বয়ং পুরুষোত্তম।
- যিনি সহস্রারের মহাপদ্মে বিরাজিত।
- পরমপুরুষের কাছে আত্মসমর্পণ না করলে ভবনদী যমুনা পার হওয়া যায় না।
- সহস্রার রূপী কৃষ্ণ বা শিব সহায় থাকলে, ভবনদী সহজে পার হওয়া বা অতিক্রম করা যায়।
কুলকুন্ডলীনী:
- অনন্ত শক্তিধারী, ফনা রুপিনী সর্প, কুলকুন্ডলিনী শক্তির প্রতীক।
- তাহলে দেখা যাচ্ছে, সহস্রার রূপী প্রাণ বা নিয়ন্ত্রক বিন্দু বা পরমাত্মারুপ শ্রীকৃষ্ণ আর অনন্ত শক্তির প্রতীক কুলকুন্ডলিনী ও পরাপ্রকৃতি রূপ বসুদেব এদের সমন্বিত
- যোগচিত্রায়িত রুপই শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য নির্দেশ করে।
……………….
পুনপ্রচারি বিনীত : নূর মোহাম্মদ মিলু
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….