মহোৎসব ও নিমন্ত্রণ
পয়ার
জয় হরি বল জয় গৌর হরি বল।
নামের হুঙ্কার ছাড়ি চলিল পাগল।।
আর দিন পাগল রাই চরণকে ল’য়ে।
উপনীত হইলেন বইবুনে গিয়ে।।
পাগল বলিল রাই তুমি বাড়ী যাও।
আমি আসিতেছি তাহা অগ্রে গিয়া কও।।
গঙ্গাচর্ণা আসিবার সময় কালেতে।
কলাতলা দেখা হ’ল নায়েরীর সাথে।।
নায়েরী রাইকে ধরি বাড়ী পর নিল।
মহোৎসবের বার্তা সব জানাইল।।
রাই কহে জানত না বৃত্তান্ত সকল।
তোমার এ নিমন্ত্রণ দিতেছে পাগল।।
এ সময় পাগল আসিল ফিরে ঘুরে।
নায়েরীর কথা রাই কহে পাগলেরে।।
পাগলের ঠাই রাই কহিতে লাগিল।
পাগল বলেন ইহা কেন জিজ্ঞাসিল।।
করিবেক মহোৎসব যদি থাকে ভাগ্যে।
বিশেষতঃ মহাপ্রভু দিয়াছেন আজ্ঞে।।
অমনি চলিল দোঁহে গঙ্গাচর্ণা হ’তে।
ওঢ়াকাঁদি মহোৎসব চৌধুরী বাটীতে।।
স্বয়ং মহাপ্রভু যান চৌধুরী আলয়।
নায়েরীর নিমন্ত্রণ পাগল জানায়।।
ঠাকুর বলেন সবে যাও কলাতলা।
মহোৎসব করিবেক একটি অবলা।।
আমি করিয়াছি আজ্ঞা কেহ না থাকিও।
নায়েরীর মহোৎসবে সকলে যাইও।।
অধিবাস দিন তথা গেলেন পাগল।
ক্রমে হরিবোলা চলে বলে হরি বোল।।
মহোৎসব দিনে সব হইল উদয়।
সঙ্গেতে অনেক লোক চলে মৃত্যুঞ্জয়।।
বদন গোস্বামী যায় লইয়া মতুয়া।
পার হ’তে এসে ঘাটে নাহি পায় খেয়া।।
পঞ্চাশৎ রশি হবে নদীর বিস্তার।
সেই নদী মধ্যে কেহ দিতেছে সাঁতার।।
হরি বলি কেহ যায় ঝাঁপিয়া ওপার।
কেহ লম্ফ দিয়া পড়ে নদীর ভিতর।।
নদীর মধ্যেতে আছে শিকারী কুম্ভীর।
তার যন্ত্রণায় লোক অনেকে অস্থির।।
ঘাটে বাশ গাড়ী তাতে বাতা লাগাইয়া।
খোঁয়াড় বাঁধিল তাতে প্রেক লোহা দিয়া।।
মতুয়ারা তাহা দেখি ভয় নাহি করে।
হরি বলে ঝম্ফ দিয়া জল মধ্যে পড়ে।।
কেহ বলে সনাতনে করেছিলে পার।
হয় পার কর নহে করহ আহার।।
শিকারী কুম্ভীর তথা মাঝে মাঝে ভাসে।
মতুয়ারা তাহা দেখি হরি বলে হাসে।।
এইমত মাতোয়ারা মনের আনন্দে।
হাসে কাঁদে নাচে গায় ডাকে হরিচাঁদে।।
পাগল আসিল পারে ওপারে বদন।
একখানি নৌকা পেয়ে উঠিল তখন।।
এপার আসিয়া সব নামিবার কালে।
নৌকাখানি ডুবে যায় মধুমতী জলে।।
যার নৌকা সেই জন আসিয়া তথায়।
কাঁদিতে লাগিল ধরি পাগলের পায়।।
এমন সময় এক কুম্ভীর ভাসিল।
কুম্ভীরের সম্মুখেতে পাগল পড়িল।।
ঝাঁপ দিয়া ডুব মারি পাগল সেখানে।
ডাক দিয়া বলে তোর নৌকা এইখানে।।
ভয়ে কেহ নাহি যায় নদীর কিনারে।
নৌকার গলই জাগে জলের উপরে।।
গোঁসাই কহিছে তোর কিছু নাহি ডর।
গলই জেগেছে তুই আগু হ’য়ে ধর।।
ধরিয়া লইল নৌকা সেচিল তখন।
তাহাতে হইল পার যত ভক্তগণ।।
নায়েরীর বাটী সব হ’ল উপস্থিত।
দৈবে ঘোর মেঘ সজ্জা হৈল আচম্বিত।।
গোলোক পাগল দেখি কুপিল তখন।
মহোৎসব বাদী ইন্দ্র হ’ল কি কারণ।।
মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসে ডেকেছে ঘনে ঘন।
এস মোরা করিব ইন্দ্রেরসহ রণ।।
অন্বেষণ করে মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের।
মৃত্যুঞ্জয় পাগলের ভাব পেল টের।।
মৃত্যুঞ্জয় বলে, রাগে স্বধর্মের হানি।
এস হে ঠাকুর খুড়া মোরা হার মানি।।
মৃত্যুঞ্জয় বাক্য শুনি গোলোক পাগল।
মনোগত রাগ যত হ’য়ে গেল জল।।
বলিতে বলিতে মেঘ অমনি বর্ষিল।
দুই চারি ফোঁটা অল্প অল্প বৃষ্টি হ’ল।।
হইল পূর্বের মত নির্মল আকাশ।
পাগলের মহিমা হইল সুপ্রকাশ।।
নির্বিঘ্নেতে মহোৎসব হইল অমনি।
দিবানিশি ক্ষান্ত নাই শুধু হরিধ্বনি।।
বাড়ীর উপরে করিয়াছে একস্থান।
সেখানে সকলে করে হরিনাম গান।।
কেহ বসে কেহ উঠে নাচিয়ে নাচিয়ে।
কেহ কেহ ভূমে পড়ে অচৈতন্য হ’য়ে।।
কেহ প্রেমে ধরাধরি করে পড়াপড়ি।
কেহ কেহ কেঁদে কেঁদে যায় গড়াগড়ি।।
তাহার উত্তর পার্শ্বে ভোজনের ঠাই।
যখন যা’র যা ইচ্ছা খেতেছে সবাই।।
লাবড়া অম্বল ডা’ল ভাজা দধি চিনি।
খেয়ে খেয়ে সকলে দিতেছে হরিধ্বনি।।
কেহ ভিড় দেয় বলে সাধু সাবধান।
ক্ষণে পিছাইয়া ক্ষণে হয় আগুয়ান।।
গৌর অবতারে প্রভুর কামনা রহিল।
তে কারণে ওঢ়াকাঁদি অবতীর্ণ হ’ল।।
বলিতে বলিতে বলে মধুরস বাণী।
কেহ তার পিছে পিছে দেয় হরিধ্বনি।।
পাতা রাখি ভূমে কেহ এঁটে হাতে মুখে।
দাঁড়াইয়া বাবা হরিচাঁদ বলে ডাকে।।
এই মত তিন দিন মহোৎসব হ’ল।
মতুয়ার গণ সব একত্রিত ছিল।।
লোক পরিমাণ অনুমান করি সবে।
দু’হাজার লোক সে মধ্যের দিন হ’বে।।
শেষ দিন লোক হবে চারি পাঁচ শত।
ভোজন করিল হরিভক্তগণ যত।।
নায়েরীর পূর্ণ হ’ল মনের বাসনা।
প্রেমে পুলকিত দেবী কাঁদিয়া বাচে না।।
হরিচাঁদ প্রীতে হরি বল সর্বজনে।
রসনা বাসনা নামরস আস্বাদনে।।