অন্তখণ্ড : পঞ্চম তরঙ্গ
বন্দনা
জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস।
জয় শ্রী বৈষ্ণব দাস জয় গৌরী দাস।।
জয় শ্রী স্বরূপ দাস পঞ্চ সহোদর।
পতিত পাবন হেতু হৈলা অবতার।।
জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন।
জয় শ্রী গোলোকচন্দ্র জয় শ্রী লোচন।।
জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দময়।।
(জয় শ্রীসুধন্যচাঁদ সভ্যভামাত্মজ।
প্রেমানন্দে হরি গুরু শ্রীপতিচাঁদ ভজ।।)
জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ।
নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।
দি্গ্বিজয়ীর দিব্য জ্ঞান লাভ
পয়ার
ঠাকুরের লীলার প্রারম্ভে একদিন।
উপনীত হ’ল এক ব্রাহ্মণ প্রবীণ।।
শ্রীঅদ্বৈত নাম ধারী শান্তিপুরবাসী।
সংকীর্তন প্রিয় হরি পদ অভিলাষী।।
অদ্বৈত বংশেতে কৈল জনম গ্রহণ।
বহুদিন করিলেন বিদ্যা অধ্যায়ন।।
ন্যায়, স্মৃতি, পাতঞ্জল, দর্শন, বেদাঙ্গ।
বেদান্ত, সংহিতা, গীতা, করেছেন সাঙ্গ।।
সর্ববিদ্যা বিশারদ জ্ঞানী চূড়ামণি।
মহা মহোপাধ্যায় বিজ্ঞান রত্ন খনি।।
যেখানে যেখানে মহা বিদ্বৎ মণ্ডলী।
সর্বস্থানে মহামান্য দিগ্বিজয়ী বলি।।
সর্ব দেশ জয় করি মামুদপুর গায়।
দৈব যোগে শিষ্য বাড়ী হলেন উদয়।।
তথা শিষ্য শ্রীযুক্ত গোবিন্দচন্দ্র শর্মা।
তস্যানুজ তারিণীচরণ দেবশর্মা।।
তথায় করেন গিয়া বিদ্যা আলোচনা।
মহাকবি বলিয়া বলিল সর্বজনা।।
সর্বদেশ জয় করি স্বদেশে চলিল।
বহুলোক মুখে জন প্রবাদ শুনিল।।
ওঢ়াকাঁদি শ্রীহরি ঠাকুর নামধারী।
নমঃশূদ্র কুলে জন্ম সাক্ষাত শ্রীহরি।।
লেখা না জানেন তিনি পড়া না জানেন।
বড় বড় পণ্ডিতকে পরাস্ত করেন।।
মহা মহা পণ্ডিত তথা আসেন যাহারা।
দু’এক কথার পর পরাস্ত তাহারা।।
আপনি পণ্ডিত শ্রেষ্ঠ তাতে দিগ্বিজয়।
দিগ্বিজয় বলা যায় তথা হ’লে জয়।।
শুনিয়া পণ্ডিত শ্রেষ্ঠ ঈষৎ হাসিল।
যাব কিনা যাব চিত্তে ভাবিতে লাগিল।।
শুনি ঠাকুরের নাই লেখা পড়া জানা।
কেমনে করিব তথা বিদ্যা আলোচনা।।
যাক বেশী কথা দিয়া নাহি প্রয়োজন।
শব্দে শুনি করে যাই ঠাকুর দর্শন।।
এত বলি বাহকেরে অনুমতি দিল।
ঠাকুর দেখিব তুমি ওঢ়াকাঁদি চল।।
ওঢ়াকাঁদি ঘাটে নৌকা লাগিল যখন।
শ্রীঠাকুর বহির্বাটী এলেন তখন।।
মৃত্তিকা আসন করি বসেছেন হরি।
আজানুলম্বিত ভুজ একাম্বরধারী।।
সুদৃশ্য কবরী পৃষ্ঠ পরে লম্বমান।
কর্ণায়ত চক্ষু দু’টি ঠেকিয়াছে কান।।
দিগ্বিজয় পণ্ডিত যখনে তথা এল।
অনিমিষ নেত্রে একদৃষ্টে চেয়ে রৈল।।
অভাব্য ভাবনা মত ধীরে ধীরে কয়।
চেনা চেনা লাগে যেন দেখেছি কোথায়।।
ভাব দেশে মহা প্রভু বলিলেন বাণী।
তুমিও আমাকে চিন আমি তোমা চিনি।।
সর্বদিকে ফিরে ঘুরে কর দিগ্বিজয়।
নিজেকে কি জিনেছ পণ্ডিত মহাশয়।।
ঘরের রমণী দু’টি নিতান্ত প্রখরা।
পরজিনে হ’য়েছ নিজ ঘর জয়ী করা।।
এতক্ষণে দিগ্বিজয় দাঁড়াইয়া ছিল।
এই বাক্য শুনা মাত্র মাটিতে বসিল।।
পদের তালুকতা মাত্র মৃত্তিকা স্পর্শিল।
অনাসনে পাছা উঁচু করিয়া বসিল।।
মহাপ্রভু বলে এত বিষম বিপাক।
মিশামিশি হবে কেন এত রৈল ফাঁক।।
শুভ্র বস্ত্র দিগ্বিজয় পরিধান ছিল।
ঠাকুর নিকটে তবু মাটিতে বসিল।।
ঠাকুর বলিল অই রয়েছে আসন।
দয়া করি দ্বিজবর করুণ গ্রহণ।।
দিগ্বিজয় বলিল আসনে কার্য নাই।
আমাকে চিনেন কিসে বলেন গোঁসাই।।
মহাপ্রভু বলে আমি ছিনু নদীয়ায়।
চেন কিনা চেন আমি শচীর তনয়।।
তুমি দিগ্বিজয় ছিলে কেশব কাশ্মীরী।
আমি সেই বালক নিমাই গৌর হরি।।
দিগ্বিজয় করিতে আসিলে মম স্থানে।
পরাজিত হয়েছিলে করে দেখ মনে।।
ভুল পড়েছিল তব গঙ্গা স্তোত্র শ্লোকে।
শ্রুতিধর হয়ে আমি সুধাই তোমাকে।।
সেইকালে তোমা আমা আছে দেখা চেনা।
স্মৃতি পড়িয়াছ কৈ স্মৃতিত থাকে না।।
এই বাক্য বলা মাত্র পূর্বস্মৃতি হৈল।
মূর্ছাগত হ’য়ে দ্বিজ চরণে পড়িল।।
সেই তুমি, তুমি সেই, আমি দিগ্বিজয়।
তুমি প্রভু সর্বেশ্বর শচীর তনয়।।
অদোষ দরশি তুমি বিষ্ণুপ্রিয়া কান্ত।
কত দোষে দোষী আমি নাহি তার অন্ত।।
অবোধ্য তোমার লীলা বুঝে সাধ্য কার।
বিধি হর হারে আর মানব কি ছার।।
ঘরের রমণী দু’টি একান্ত চঞ্চলা।
দেশ ত্যাগী সৈতে নারি নারীদের জ্বালা।।
প্রভু বলে যাহ তবে নিজ ঘরে যাহ।
আমার এ কথা গিয়ে মাতাদিগে কহ।।
অবলা সরলা হবে চঞ্চলা রবে না।
ক্ষান্ত হও আর দিগ্বিজয় করিও না।।
জিতেন্দ্রিয় যেই জন সেই জন শূর। (সুর)
গরবত্ব গৌরবত্ব সব কর দূর।।
এত শুনি দিগ্বিজয় নিজালয় গেল।
ঠাকুরের বাক্য ঠাকুরানীকে জানাল।।
শুনিয়া রমণীদ্বয় হইল সরলা।
শান্তি সুখে ঘর করে নাহি কোন জ্বালা।।
উদ্দেশ্য স্তবন করে দ্বিজ দিগ্বিজয়।
যা ইচ্ছা করিতে পার তুমি ইচ্ছাময়।।
অল্পবিদ্যা জেনে আমি করি দিগ্বিজয়।
দিগ্বিজয় তুচ্ছ কথা তুমি সর্বজয়।।
ইচ্ছাময় সর্বজয় কত স্তুতি কৈল।
শ্রীধামেতে শেষে দ্বিজ পত্র লিখেছিল।।
পূর্বজন্মে ভারতী দিলেন মোরে বর।
তিনি থাকিবেন মম কণ্ঠের উপর।।
তব কাছে পরাস্ত হইয়া দুঃখান্তরে।
দেবীপূজা না করিয়া থাকি অনাহারে।।
নিশাযোগে দেবী মম শিয়রে বসিয়া।
বলিলেন অনাহারী আছ কি লাগিয়া।।
বলিলাম তুমি মোরে দিয়েছিল বর।
পরাজিত না হইব কাহার গোচর।।
তবে কেন হৈল হেন বুঝিয়া না পাই।
হারিলাম ক্ষুদ্র এক বালকের ঠাই।।
দেবী বলে হেন বর কাকে দিনু আমি।
তোর কাছে পরাজিত হবে মোর স্বামী।।
নবরূপে হয়ে ছিলে নবদ্বীপবাসী।
এ লীলায় জন্ম নিলে ওঢ়াকাঁদি আসি।।
তুমি বিদ্যানাথ দেব ভারতীর পতি।
দেহ বর চিরদিন পদে থাকে মতি।।
হৃদয় রঞ্জন তুমি শচীর নিমাই।
এই রূপ পত্র লিখে দিল প্রভু ঠাই।।