ভবঘুরেকথা

অথ দশরথ সঙ্গে ঠাকুরের ভাবালাপ
পয়ার

ঠাকুর বসিল গিয়া চটকা তলায়।
দশরথ গিয়া শীঘ্র প্রণমিল পায়।।
ঠাকুর জিজ্ঞাসা করে পরেছ কৌপীন।
কৌপীনের মহিমা না জেনে এতদিন।।
তিন বেলা স্নান করি কে হয় বৈরাগী।
স্নান করে পানকৌড়ি সেও কি বৈরাগী।।
বিবেক বৈরাগ্য তাকি বাহ্য শৌচে হয়।
বনে বনে থাকিলে কি কৃষ্ণ পাওয়া যায়।।
স্নান বল কারে শুধু উপরেতে ধোয়া।
আত্মা শুদ্ধ না হ’লে কি যায় তারে পাওয়া।।
দশরথ বলে এতদিন কি ক’রেছি।
ইতি তত্ত্ব না জানিয়া ডুবিয়ে ম’রেছি।।
অঙ্গ ধৌত বস্ত্র ধৌত ছাপা জপমালা।
বহিরঙ্গ বাহ্যক্রিয়া সব ধূলা খেলা।।
যত দিন নাহি ঘুচে চিত্ত অন্ধকার।
ততদিন শৌচাচার ডুবাডুবি সার।।
ব্যাধিযুক্ত দোষে রসনাতে রুচি নাই।
জল ঢালাঢালি হ’য়েছিল শুচিবাই।।
যত করিয়াছি প্রভু সব শুচিবাই।
তব কৃপাদোক বিনে চিত্তধৌত নাই।।
শ্যাম জলধর বলে চাতক যে হয়।
জলে ডুবে সে কি কভু শুদ্ধ হ’তে চায়।।
স্নান করিয়াছি অন্ন খেতে পারি নাই।
বিনা স্নানে ব্যাধি গেল চতুর্গুণ খাই।।
প্রভু বলে তবে বাপ আর কিবা চাই।
আজ হ’তে আর তোর স্নান পূজা নাই।।
প্রয়োজন নাই তোর ডুবাইতে জলে।
ডঙ্কা মেরে বেড়া গিয়ে হরি হরি বলে।।
হরিনাম ধ্বনি দিয়া মাতা গিয়া দেশ।
শোন বাছা দেই তোরে এক উপদেশ।।
মালাবতী নামে লক্ষ্মীকান্তের ভগিনী।
তারে বিয়া কর গিয়া সে তোর গৃহিণী।।
লক্ষ্মীকান্ত নিকটে বলিলে বিয়া হ’বে।
আমিও বলিয়া দিব ভগিনী সে দিবে।।
তৈলকুপী আখড়ায় চলে যেও তুমি।
তথা আছে লোকনাথ নামেতে গোস্বামী।।
যে ধর্ম জানায় তুমি করিবে সে ধর্ম।
সেই সে পরম ধর্ম তিন প্রভু মর্ম।।
মালাবতী সঙ্গে ধর্ম করিও যাজন।
যারে বলে ব্রজ সাধ্য গোপীর ভজন।।
হেন মতে হইতেছে কথোপকথন।
হইল অধিক লোক প্রভুর সদন।।
যার যে মনন কথা কহিয়া বলিয়া।
স্বীয় স্বীয় স্থানে সব গেলেন চলিয়া।।
মধ্যাহ্ন সময় হ’ল কথোপকথনে।
প্রভু বলে দশরথ যাবি কোনখানে।।
খেতে স্বাদ আছে তোর লাবড়া ব্যাঞ্জন।
চল বাছা খাই গিয়ে হ’য়েছে রন্ধন।।
সেবায় বসিল গিয়া প্রভু হরিচাঁদ।
দশরথ পাতে হাত লইতে প্রসাদ।।
দিলেন প্রসাদ দশরথ খায় সুখে।
হস্ত মুছে মস্তকে কপালে চক্ষে মুখে।।
রেঁধেছিল লাবড়া ঠাকুর ডেকে কয়।
দশরথে দেহ লক্ষ্মী যত খেতে চায়।।
মহাপ্রভু বলে খাও উদর পুরিয়া।
পাইয়াছে মুখে রুচি লহরে খাইয়া।।
জগৎ জননী লক্ষ্মী দিলেন পায়স।
সানন্দে ভোজন করে অন্তরে সন্তোষ।।
স্বহস্তে মা শান্তিদেবী দেন দশরথে।
উদর পুরিয়া সাধু খায় ভালমতে।।
সেবা অন্তে ক্ষণকাল রহিল বসিয়া।
দিলেন ঠাকুর তারে বিদায় করিয়া।।
যাত্রা করে দশরথ যষ্ঠি ল’য়ে হাতে।
প্রভু বলে যষ্ঠি আর হ’বে না ধরিতে।।
ধরিয়া ত্রিশূল শিঙ্গা রক্ষা কর শীল।
যৈছে বোর ধান্য হয় যৈছে হয় তিল।।
কোন মন্ত্র লাগিবে না শুধু হরিনাম।
বাসা কর গিয়া বাছা পাতলার গ্রাম।।
তাহাতে ধান্য তিল পাইবা বৎসর।
সংসার খরচ কার্য চলিবেক তোর।।
প্রভুকে প্রণামী সাধু চলিল হাঁটিয়া।
পুষ্করিণী জলে যষ্ঠি দিলেন ফেলিয়া।।
নিজ বাটী আসিয়া কহিল ভ্রাতাগণে।
বিবাহ হইল শেষে মালাবতী সনে।।
ঠাকুর কহিল লক্ষ্মীকান্ত টীকাদারে।
লক্ষ্মীকান্ত ভগ্নী দিল আজ্ঞা অনুসারে।।
দশরথ বিবরণ মধুমাখা কথা।
কবি কহে হরি বল দিন গেল বৃথা।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!