সূক্ষ্ম দেহে তারক
হরি-গুরুচাঁদ বন্দি যুগল চরণ।
আশ্চর্য্য ঘটনা এক করিব বর্ণন।।
তারকচাঁদের গুণ কহন না যায়।
স্মরণ করিলে হয় প্রেমের উদয়।।
এমন সোনার ছবি জগতে আসিল।
হরিনাম প্রচারিয়া নিজদেশে গেল।।
সূক্ষ্মরূপে ঘুরিতেছে জগত ভরিয়া।
ভক্তি করে ডাকে যেবা দেখেন আসিয়া।।
তার কিছু তত্ত্ব কথা বলিব এখন।
মন দিয়া শুন সবে করিব বর্ণন।।
শ্রী উপেন্দ্র নামে ছিল পাল মহাশয়।
রায়পুর বাড়ী ছিল শুন পরিচয়।।
লোহাগড়া থানা মধ্যে সেই গ্রাম হয়।
চৌদ্দশত ছয় সালে ঘটনা তথায়।।
সরল স্বভাব নিয়ে উপেন্দ্র চলিত।
মনে প্রাণে তারকেরে সে ভালবাসিত।।
মনে মনে হরিনাম করিত সদায়।
এই ভাবে চলিতেন পাল মহাশয়।।
ছেলে মেয়ে ছিল তার সোনার সংসার।
সংসারেতে অনটন নাহি ছিল তার।।
এক মেয়ে বিয়ে দিল কুন্দশী গ্রামেতে।
মাঝে মাঝে যাইতেন জামাই বাড়ীতে।।
সরল সহজ মনে বেড়াইত ঘুরে।
তারপর কি হইল বলিব সবারে।।
একদিন তার ছেলে লোহাগড়া গেল।
একটি নতুন ছাতা কিনিয়া আনিল।।
একশত বিশ টাকা ছাতাটির মূল্য।
ছাতাটিকে দেখে সবে আনন্দিত হলো।।
একদিন সে উপেন্দ্র ছাতাটিকে নিয়ে।
জামাই বাড়ীতে গেল আনন্দিত হয়ে।।
কুন্দশী গ্রামেতে ছিল জামাতার বাড়ী।
আনন্দেতে পথে চলে বলে হরি হরি।।
যখনেতে জয়পুর গ্রাম মধ্যে যায়।
তারকের ছবিখানি জাগিল হৃদয়।।
তারকের বাড়ী পার্শ্ব দিয়া সেই পথ।
সেই পথে সে উপেন্দ্র করে যাতায়াত।।
হাটিতে হাটিতে গেল তারকের বাড়ী।
মন্দিরে প্রণাম করে বলে হরি হরি।।
তারপর চলিলেন কুন্দশী গ্রামেতে।
আনন্দে উদয় হল জামাই বাড়ীতে।।
তথায় মধ্যাহ্ন ভোজ করি সমাপন।
অল্প বেলা করিলেন গৃহেতে গমন।।
হাটিতে হাটিতে যবে জয়পুর গেল।
তারকের মন্দিরেতে প্রণাম করিল।।
ছাতাটাকে তথা রেখে প্রণাম করিয়া।
পুনরায় করে যাত্রা করে ছাতা নিয়া।।
হাটিতে হাটিতে গেল কলাগাছি গ্রামে।
এমন সময় এল অন্ধকার নেমে।।
জলের পিপাসা হল এমন সময়।
রাস্তার পাশেতে এক কল দেখা যায়।।
রাস্তার পাশেতে সেই ছাতাটিকে রেখে।
টিউবলে জয় খায় মনের পুলকে।।
জল খেয়ে সে উপেন্দ্র গৃহ পানে ধায়।
মনের ভুলে ছাতাটিকে রাখিয়া তথায়।।
বাড়ী গিয়ে সে উপেন্দ্র হাত মুখ ধুয়ে।
গল্প কথা কহিলেন নাতি পুতি নিয়ে।।
তারপর রাত্রি বেলা ভোজন করিল।
হেন কালে তার ছেলে কহিতে লাগিল।।
ছাতা নিয়ে গেলে তুমি কুন্দশী গায়।
ছাতাটিকে দেখিনাত রাখিলে কোথায়।।
তাই শুনে সে উপেন্দ্র ভাবিল হৃদয়।
ঘরে গিয়ে খুঁজে দেখে কোথাও না পায়।।
মনে মনে সে উপেন্দ্র ভাবিয়া না পায়।
ছাতা বুঝি রাখিয়াছি জয়পুর গায়।।
যখনেতে করি আমি মন্দিরে প্রণাম।
ছাতাটিকে তথা রেখে গৃহে আসিলাম।।
তাই ভেবে সে উপেন্দ্র কান্দিতে লাগিল।
কেন্দে কেন্দে তারকের কাছে নিবেদিল।।
তোমার মন্দিরে বাবা ছাতা রেখে আসি।
ছাতাটি হারিয়ে গেলে গলে দিব রসি।।
এই ভাবে কেন্দে কেন্দে করিল শয়ন।
গভীর নিদ্রায় সে যে হল নিমগন।।
প্রভাত হইল নিশি আধ অন্ধকারে।
কেহনা জাগিল সবে আছে ঘুম ঘোরে।।
তারক আসিয়া ডাকে দরজার ঠাই।
শুন শুন ও উপেন্দ্র তোমাকে জানাই।।
মোরে দোষী করে তুমি মরিতে চাইলে।
সেই জন্যে দু’টি কথা আমি যাই বলে।।
ছাতা রাখিয়াছ তুমি কলা গাছি গাঁয়।
ভুল করে চলে এলে রাখিয়া তথায়।।
সারানিশি তথা আমি প্রহরি হইয়া।
ছাতাটিকে রক্ষা করি সেখানে বসিয়া।।
এখন প্রভাত হলো শুন বাছাধন।
ছাতাটিকে নিয়ে এস করিয়া যতন।।
তাই শুনে সে উপেন্দ্র অতি ব্যস্ত হয়ে।
বাহিরে আসিল তিনি দরজা খুলিয়ে।।
বাহিরে আসিয়া দেখে আর কেহ নাই।
কোথায় লুকাল মোর তারক গোঁসাই।।
কান্দিতে কান্দিতে সে যে কালাগাছি গেল।
সেই খানে সেই ছাতা দেখিতে পাইল।।
ছাতাটিকে বুকে ধরে গড়াগড়ি যায়।
তারক তারক বলে কান্দিয়া ভাষায়।।
চারিদিকে হতে সবে আসিল তথায়।
শুনিয়া সকল কথা কান্দিয়া ভাষায়।।
কান্দিয়া বেনোদ বলে বেলা বেশী নাই।
তারক চাঁদের প্রীতে হরি বল ভাই।।