হরিচাঁদের নামের তরী
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ করিয়া স্মরণ।
আশ্চর্য্য ঘটনা এক করিব বর্ণন।।
তাহার গুণের কথা কি লিখি কলমে।
বিনা বায় নৌকা চলে হরিচাঁদ নামে।।
অন্ধজনে চক্ষু পায় কালা কানে শোনে।
মহাব্যাধি মুক্তি পায় তাহার স্মরনে।।
তাহার নামের গুণে শমন পালায়।
অপুত্রকে পুত্র পায় তাহার কৃপায়।।
তেরশ ঊননব্বই সালে বারুণীতে।
দলে দলে হরি বোলা আসিল ধামেতে।।
বারুণীর স্নান মেলা করি সমাপন।
যার যার দেশে সবে করিল গমন।।
সে বৎসর দুর্যোগ হল অতিশয়।
ঝড় বৃষ্টি অনুক্ষণ বহিত সদায়।।
বোলতলী খোয়াঘাটে মতুয়ার গণ।
পার হইতেছে সবে আনন্দিত মন।।
পুবন বাতাস বহে অতি ঘোরতর।
হরি হরি বলে সবে হইতেছে পার।।
পশ্চিম কুলেতে এক নৌকা খানি ছিল।
হেন কালে এক দল তথায় আসিল।।
বরিশাল জেলা হতে সে দল আসিল।
বহু লোক দলে তারা নৌকায় উঠিল।।
নৌকার বোঝাই দেখে মাঝি ডেকে কয়।
এত লোক নিয়ে হবে পার করা দায়।।
একেত বাতাস ভারি ভীষণ তুফান।
মাঝ পথে ডুবে যাবে এই তরী খান।।
কিছু লোক নেমে গিয়ে কুলেতে দাঁড়াও।
পুনরায় মোর নায় পার হয়ে যাও।।
নৌকার মাঝির কথা কেহ ত শোনে না।
নৌকা হতে কেহ আর কুলেতে নামে না।।
তাই দেখে মাঝি বেটা দাড় বৈঠা খুলে।
পারিব না পারে যেতে আসিলেন কুলে।।
ডেকে বলে মাঝি বেটা মোর কথা লও।
পার যদি হরি নামে পার হয়ে যাও।।
তাই শুনে দলপতি হরিধ্বনি দিয়া।
তাহাদের সকলেরে কহিছে ডাকিয়া।।
শুনিয়াছি হরি নামে পারেতে ঠেকে না।
হরিনামে ডংঙ্কা মার বিপদ হবে না।।
তাই শুনে সবে মিলে হরিধ্বনি দিল।
যত ছিল জয় ডঙ্কা বাজিয়া উঠিল।।
দলপতি মনু সাধু আগা নায় গিয়া।
হরি নাম করিতেছে কান্দিয়া কান্দিয়া।।
বাজনার তালে তালে নৌকা খানি চলে।
স্বচক্ষে দেখিল সবে থাকি দুই কুলে।।
জাতি ধর্ম নির্বিশেষে হিন্দু মুসলমান।
দুই কুলে থাকি করে হরি গুণগান।।
ছুটিল প্রেমের বন্যা উভয়ে কিনারে।
হরি হরি বলে সবে ভাসে আখি নীরে।।
উজানেতে নৌকা চলে দাঁড়ি মাঝি নাই।
তাই দেখে দুই কুলে কান্দিছে সবাই।।
নৌকার ভিতরে যত হরি বোলা ছিল।
হরি হরি বলে সবে নাচিতে লাগিল।।
নাচিতে নাচিতে তরী বেগে চলিতেছে।
মনে হয় তরীখানি জীবন পেয়েছে।।
হরি নামে শীলা ভাসে অগাধ সলিলে।
আজ সেই হরি নামে এই তরী চলে।।
হরি বলে কেহ কেহ ঝাঁপ দিল জলে।
নৌকাখানি ধরিবারে সাতারিয়া চলে।।
এই ভাবে তরীখানি কুলেতে ভিড়িল।
শত শত হরিভক্ত আসিয়া মিলিল।।
দলপতি মনু সাধু তাহাকে ধরিয়া।
নাচিতে লাগিল সবে স্কন্ধেতে করিয়া।।
ধরাধরি করি সবে বাজারে চলিল।
বাজারেতে গিয়ে সবে কীর্তনে মাতিল।।
হরিনামে মহাশব্দ উঠিল গগনে।
হরি নামে মাতোয়ারা পড়ে ধরাসনে।।
কেহ কেহ কেন্দে কেন্দে গড়াগড়ি যায়।
প্রেমের তরঙ্গে সবে ভাসিয়ে বেড়ায়।।
কেহ কেহ নাচিতেছে দুই বাহু তুলি।
কেহ হরি হরি বলে গায় মাখে ধুলি।।
কেহ কেহ কেন্দে কেন্দে হল অচেতন।
ভাষা দিয়ে কি লিখিব আমি অভাজন।।
ক্ষণেক চেতনা পেয়ে সকলে মিলিয়া।
চাউল ডাউল আনে যোগাড় করিয়া।।
ভক্তি ভাবে সবে কিলে করিল রন্ধন।
মতুয়াগণেরে সবে করাল ভোজন।।
এই ভাবে সাত দিন মহানন্দ হয়।
যে দেখেছে তার মনে সে ভাব উদয়।।
হরি হতে নাম বড় ব্যাক্ত এ জগতে।
বোলতলী খেয়া ঘাটে দেখিনু চক্ষেতে।।
তাই বলি ভাই সব আর কিবা চাও।
হরিনামে তরী করে ভব পারে যাও।।
অধম বিনোদ বলে পাঁচালীর ছন্দে।
হরিচাঁদ ছবিখানি হৃদয়েতে বন্দে।।
তাই বলি ভাই সব বেলা বেশী নাই।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি বল ভাই।।