শুন শুন ভক্তগণ হয়ে একমন। তিলকের বিন্দুতত্ত্ব করহ শ্রবণ।। বিদ্যানিধি সূবিজ্ঞ পণ্ডিত গৌরীদাস। মহাভাগ্যবান তিনি কালনাতে বাস।। তার শিষ্য গোস্বামী হৃদয়ানন্দ ছিল। কৃষ্ণদাস তাঁর কাছে দীক্ষামন্ত্র লৈল।। গুরু বলে কৃষ্ণদাস শুন দিয়া মন। শ্রীজীব গোস্বামী কাছে করহ গমন।। বৃন্দাবনধামে করে গোস্বামী বসতি। তাঁহার নিকটে শিখ শিক্ষাধর্ম্ম নীতি। কৃষ্ণদাস বন্দিলেন গুরুর চরণ। বৃন্দাবন অভিমুখে করিল গমন।। শ্রীজীবের চরণেতে প্রণাম করিল। আত্মনিবেদন সব তাঁহাকে করিল।। শ্রীজীব গোঁসাই বলে কৃষ্ণদাস শুন। গোপীনাথ গোবিন্দজী মদনমোহন।। কুঞ্জত্রয় প্রতি ভোরে করিবে সংস্কার। প্রতিদিন মহাপ্রসাদ পাইবে তাহার। লোহার কোদালী দিল ঝাঁটা একখান। ভোরে সন্ধ্যায় ঝাড়ু দিবে হয়ে সাবধান।। মন্দির প্রাঙ্গণে প্রতিদিন ঝাঁটা দিবে। স্নানান্তে তুলসী পুষ্প সংগ্রহ করিবে।। পূজার সামগ্রী আদি করিবে মার্জ্জন। তারপর উপদেশ করিবে গ্রহণ।। প্রতিদিন কৃষ্ণদাস ঝাড়ু কার্যে যায়। রাধাজীর পাদপদ্ম হৃদয়েতে ধ্যায়।। প্রতিদিন শ্রীরাধিকা সখিগণ সঙ্গে। কৃষ্ণসহ প্রেমলীলা করে নানা রঙ্গে।। একরাত্রে শ্রীরাধার একটি নুপুর। পড়িয়া রহিল সেই কুঞ্জের বাহির।। ভোর রাত্রে শ্রীরাধিকা সাখির সহিতে। আপন মন্দিরে যাত্রা করিল ত্বরিতে।। গৃহে গিয়া চরণে নুপুর পানে চায়। চরণে নুপুর নাই কি হবে উপায়।। ললিতারে বলে রাধে শুন দিয়া মন। ত্বরিতে করহ তুমি নুপূর আনয়ন।। কৃষ্ণদাস পরশে তার কোদাল সোনা হল। কৃষ্ণদাস তাহা দেখি বিস্ময় মানিল। ললিতা আসিয়া বলে শুন কৃষ্ণদাস। একটি নুপুর হারাইয়ে হতাশ।। যদি তা পাইয়া থাক করহ প্রদান। পারিতোষিক দিয়া তোমা করিব সম্মান।। কৃষ্ণদাস বলে নুপুর পাইয়াছি আছি। পরিচয় দাও আগে কেবা হও তুমি। ললিতা বলিল আমি শ্রীরাধার সখি। কোথায় নুপুর আছে মোরে দাও দেখি।। ললিতা আমার নাম শুন মহাশয়। রাধাজীর নুপুর এটি কহি সুনিশ্চিত।। শুন গো ললিতা তোমায় নুপুর নাহি দিব। রাধাজীরে আনহে নুপুর পরাইব।। ফাঁপরে পড়িয়া সখি গেল ত্বরান্বিত।। রাধাজীর পাদপদ্মে করিল বিদিত।। শ্রীরাধারে সঙ্গে লয়ে ললিতা আসিল। কৃষ্ণদাস শ্রীরাধার চরণ বন্দিল।। রাতুল চরণ তব দর্শন যদি পাই।। তবে আমি সেই পদে নুপুর পরাই।। এত শুনি শ্রীরাধিকার রূপ প্রকাশিল। ললাটে ছোঁয়াষে নুপুর পদে পরাইল। নুপুর পরাইয়া পদে দণ্ডবৎ করে। নুপুরের বিন্দু লাগে আজ্ঞা চক্রোপরে।। নুপুর পরশে উর্দ্ধপুণ্ড্রের সৃজন। গোট পরশণে হৈল বিন্দু উৎপাদন। রাধা বলে ললিতা গো শুন দিয়া মন। ললাটেতে বিন্দু তোর হইল উৎপাদন।। অদ্য হইবে সর্ব্ব বৈষ্ণব এ বিন্দু রচিবে।। উর্দ্ধপুণ্ড্র সকলেই ধারণ করিবে।। আজ্ঞাচক্রে করিবে না বিন্দুর গঠন। করিবেক নাসিকাতে তিলক রচন।। নাসিকার তিল অংশ তিলক রচিবে। উর্দ্ধপুন্ড্রের সঙ্গে তারা সংযোগ করিবে।। আজ্ঞাচক্রে করিবে যে বিন্দুর সৃজন। আশীর্ব্বাদ করি শ্যামে করিল গমন।। শ্যামানন্দ গ্রন্থে আছে এরূপ বর্ণন। বহুবিধ তত্ত্ব তাতে আছয়ে লিখন। সব তত্ত্ব লিখিলে গ্রান্থের জাড়ে কায়া।। কাগজ দুর্ম্মুল্য হেতু ত্যজি সেই মায়া।।