মনোহন্যত্র শিরোহন্যত্র শক্তিরন্যত্র মারুত:
ইদং তীর্থমিদং তীর্থং ভ্রমন্তি তামসা জনা।
আত্মাতীর্থং ন জানাতি কথং মোক্ষো বরাননে।।
শুন শুন সর্ব্বজন হয়ে এক মন।
দান ধর্ম্ম ফল কথা করি যে বর্ণন।।
গো দান করিলে তার স্বর্গলাভ হয়।
গো-শরীর রোম সংখ্যা কাল নিবসয়।।
কাল অন্তে স্বর্গ হতে আসে অবনীতে।
কর্ম্ম অনুসারে জনম মানব যোনিতে।।
ব্রাহ্মণে তুষিতে ধন রত্ন করে দান।
ধনৈশ্বর্য্য জন্মান্তরে কত মত পান।।
হিংসা নিন্দা করে অন্যে সে ধন গরবে।
জীবনান্তে পুন: যে যোনিতে যেতে হবে।।
করে প্রতিষ্ঠাদি কর্ম্ম সঙ্কল্প করিয়া।
সরোবর গৃহ দেয় বিষ্ণু সমর্পিয়া।।
কৃষ্ণ প্রীতে ধনরত্ন জীবে করে দান।
বসন ভূষণ নানা শয্যা ও আসন।।
মরি কি আশ্চর্য্য তার ভ্রান্তি নাহি যায়।
যার ধন তারে দিয়া নিজে বর চায়।।
চোরা মাল কিনি যেবা আনে নিজ ঘরে।
মূঢ় সেই খরিদ্দার লাভে মূলে হারে।।
দান আদি কর্ম্ম যেই হস্ত দিয়া করে।
সে হস্ত আপনা নহে কেবা দান করে।।
দানস ফলে যদিও সে স্বর্গ বাসে যায়।
সপ্ত হাজার বর্ষ ভূঞ্জি জনমে ধরায়।।
প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করি নানা দেবে পূজে।
মূর্ত্তি না দেখিয়া মূর্ত্তি তারা সৃজে।।
কোথায় দেবতা থাকে হয় কি আকার।
কবে কেবা দেখিয়াছে কিবা সাধ্য কার।
শাস্ত্রে আছে মন্ত্রাদিতে দেব অধিষ্ঠান।
কলিতে নিস্তেজ মন্ত্র শাস্ত্রের বিধান।।
কলিতেজ প্রিয়া মন্ত্র দেবতা না পায়।
দেব প্রাপ্তি ভিন্ন পূজা কিবা ফল তায়।।
যদি কারো মনে প্রাণে শুদ্ধ ভক্তি হয়।
জন্মান্তরে সেই ফলে কিঞ্চিৎ ভোগয়।।
ভোগান্তে যোনিতে পুন: জন্মিতে হইবে।
প্রতিমা পূজিতে নাহি জীবম্মুক্তি ভবে।।
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিমা গড়ি সেবে সাধুজন।
তাহাতে যে ফল পায় শুন বিবরণ।
গৃহে হারাইয়া দ্রব্য বিচরে অরণ্যে ।
সেইরূপ কার্য্য তার মুক্তি সেবা জন্যে।
বৃন্দাবন ব্রজবাসী কৃষ্ণে সেবা কৈল।
বাঁশী বাজাইয়া কৃষ্ণ বাঞ্ছা পুরাইল।
মনুষ্য আকারে কৃষ্ণ ছিল বৃন্দাবন।
মানবের মত ছিল তাঁর আচরণ।।
মূর্ত্তি নাহি কথা কহে বাঁশী না বাজায়।
মনুষ্যের মত কায্য কিছু নাহি তায়।।
বৃন্দাবন হতে কৃষ্ণ যায় নবদ্বীপে।
জানিয়া শুনিয়া তবু ভাবে নানা রূপে।।
কলিকালে সে প্রকার কৃষ্ণ রূপ নাই।
তবু কেন কৃষ্ণমূর্ত্তি পূজয়ে সবাই।।
কৃষ্ণ কোন দেবতার মধ্যে কভু নয়।
মন্ত্র পূজা সেবাদিতে কৃষ্ণ না আসয়।।
আকৃতি প্রকৃতি কৃষ্ণ মানবের রূপে।
কলিতে মনুষ্যরূপে আছৈ নবদ্বীপে।।
মনুষ্যের মধ্যে কৃষ্ণ বর্তমান রয়।
তাহা না চিনিয়া মূর্ত্তি সেবাদি করয়।।
বেদমতে যোগাচার সন্ন্যাসাদি করি।
প্রাণরক্ষা করে লোকে দীর্ঘকাল ধরি।।
ব্রহ্ম উপলক্ষ করি ব্রহ্মে দেয় মন।
দীর্ঘকাল দেহ সেই করয়ে ধারণ।।
দেহ অন্তে ব্রহ্ম যবে প্রলয় হইবে।
সেই সঙ্গে ভেদজ্ঞান জন্ম মৃত্যু লবে।।
যোগাচারে দু:খ সুখ নাহি থাকে জ্ঞান।
ইহকাল পরকাল সবই সমান।।
ব্রহ্মলাভে জীবম্মুক্তি কোনকালে নয়।
বারবার জন্ম মৃত্যু অবশ্যই হয়।।
গয়া তীর্থে বিষ্ণুপদে পিন্ডদান দিলে।
পিতৃগণ স্বর্গে যায় শাস্ত্রে হেন বলে।।
মহাপাপ করি যদি দেহত্যাগ হয়।
তার পুত্র বংশ যদি বিষ্ণুপিণ্ড দেয়।।
মৃত্যু হতে বৎসরের মধ্যে পিন্ড দিলে।
সেই স্বর্গে যেতে তবে পারে অবহেলে।।
তার পরে পিণ্ড দিলে ভোগে কর্ম্মফল।
ইহার কারণ শুন ভক্ত সকল।।
একদিন রহে জীব যমের ভবন।
যম এক দিনে জীবের বৎসর গণন।।
সে করণে বর্ষ মধ্যে পিণ্ডদান দিবে।
বৎসরান্তে পিণ্ড দিলে ফল কিবা হবে।।
বিষ্ণুপদে পিণ্ডদান না যায় বিফলে।
সুভভোগ হবে তার পিণ্ডদান ফলে।।
সুখভোগ স্বর্গ বলি সে কেহ কেহ কয়।
ক্রিয়াযোগসার গ্রন্থে লিখন আছয়।
যে যোগিতে জীব সেই জন্ম লয় গিয়ে।
সে যোনিতে সুখ ভোগে পিণ্ডদান পেয়ে।।
জীবনান্তে পুন:সেই জনম লভয়।
পিণ্ডদান ফল তবে আর নাহি রয়।।
বর্ষ মধ্যে পিণ্ডদান যদি কেহ দিবে।
সেই ফলে স্বর্গ পাবে ব্যর্থ না হইবে।।
যতদিন স্বর্গভোগ আছে নিরূপণ।
ভোগ অন্তে পুনর্জ্জন্ম করিবে গ্রহণ।।
পিণ্ডদান ফল এই জানিহ নিশ্চিত।
বৈরাগ্য ধর্ম্মের কথা কহি কথঞ্চিৎ।।
শুন শুন ভক্তগণ হয়ে একমন।
‘ত্রিয়াযোগসার’ মতে করি যে বর্ণন।।
শাস্ত্রের বচন ইহা মিথ্যা নাহি হয়।
কর্ম্ম অনুযায়ী ফল নিশ্চিত ভোগয়।।
……………………………………..
তত্ত্বরসামৃত জ্ঞানমঞ্জরী
-শ্রীশ্রী চরণ দাস