সাধকমার্গর যেমন স্থূল, প্রবর্ত্ত, সাধক ও সিদ্ধি এই চারিটি স্তর আছে, তেমনি আবার প্রত্যেক স্তরে উক্ত চারি স্তরের কার্য্য আছে।
১. স্থূলের স্তরে : স্থূলের স্থূল, স্থূলের প্রবর্ত্ত, স্থূলের সাধক ও স্থূলের সিদ্ধি অভিমান আছে।
২. প্রবর্ত্তের স্তরে : প্রবর্ত্তের স্থূল, প্রবর্ত্তের প্রবর্ত্ত, প্রবর্ত্তের সাধক ও প্রবর্ত্তের সিদ্ধি অভিমান আছে।
৩. সাধকের স্তরে : সাধকের স্থূল, সাধকের প্রবর্ত্ত, সাধকের সাধক ও সাধকের সিদ্ধি অভিমান আছে।
৪. সিদ্ধির স্তরে : সিদ্ধির স্থূল, সিদ্ধির প্রবর্ত্ত, সিদ্ধির সাধক ও সিদ্ধির সিদ্ধি অভিমান আছে।
১) স্থূল দেশের কার্য্য- স্থূল দেহে ব্রহ্মার আজ্ঞাবর্তী হইয়া পিতামাতার আনুগত্যে দশবিধ সংস্কার বেদাদি কার্য্য করা, পুরাণাদি শ্রবণে প্রবত্যের দেহপ্রাপ্তির বাসনার উদ্রেক।
২) প্রবর্ত্ত দেশের কার্য্য- দেহকে নতুনভাবে কার্য্যে প্রবর্ত্ত করানো, গুরুর চরণাশ্রয়ে দেহকে কর্ষণ ও মন্ত্রগ্রহণে চৈতন্য সম্পাদনপূর্ব্বক নামকীর্ত্তন করত: বৈষ্ণব আশ্রয় গ্রহণ।
৩) সাধকদেশের কার্য্য- সাধক দেহে বৃন্দাবনের কার্য্য করুণাভিলাষে শ্রীনন্দ-নন্দনের আজ্ঞাবর্ত্তী হওত: সখির চরণাশ্রয় ভাবনা করিয়া পূর্বারাগ স্মরণ।
৪) সিদ্ধিদেশের কার্য্য- সিদ্ধির দেহের (পূর্ণদেহে) শ্রীমতীর আজ্ঞাবর্ত্তী হইয়া শ্রীরূপমঞ্জরীর আনুগত্য প্রেমসেবায় ১৮দণ্ড কুঞ্জসেবা করিয়া বংশীধ্বনি-শ্রবণার্থে পিপাসিত হওত: বিশুদ্ধ দেহপ্রাপ্তে শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের যুগল চরণ সেবায় প্রেমানন্দে নিত্যধামে নিত্যসুখ ভোগ।
(১) স্থূলদেশেল ব্যাখ্যা: স্থূল, প্রবর্ত্ত, সাধক ও সিদ্ধি কি প্রকার? স্থূলের প্রত্যেক সাধক স্থূল হইয়াছে কর্ত্তা। বেদ পাঠাদি বৈদিক অনিত্য কাজকর্ম্ম প্রায়শ্চিত্তাদি কার্য্যস্থূলের প্রবর্ত্ত। দেবতালয় দর্শন, স্মরণ পূজাদি কার্য্য স্থূলের। নামাশ্রয় গ্রহণে আসক্তি ও যোগ্যতা স্থূলের সিদ্ধি। ইহাও স্বধর্ম্মাচরণ বিষ্ণুভক্তি প্রথম সোপান অর্থাৎ গার্হস্থ্য ধর্ম্ম।
(২) প্রবর্ত্তদেশের ব্যাখ্যা: স্থূল, প্রবর্ত্ত, সাধক ও সিদ্ধি কি প্রকার? প্রবর্ত্তের স্থূল প্রবর্ত্তের কর্ত্তা। নাম আশ্রয় ও মন্ত্র আশ্রয় প্রবর্ত্তের প্রবর্ত্ত। সন্ধ্যাপূজা, নিত্য-নৈমিত্তিক কার্য্যাদি প্রবর্ত্তের সাধক। সেবাপরায়ণ হইয়া তত্ত্বাদি অবগত হওয়া প্রবর্ত্তের সিদ্ধি। ইহা কৃষ্ণকর্ম্মার্পণ ভক্তি, দ্বিতীয় সোপান অর্থাৎ বাণপ্রস্থ ধর্ম্ম।
(৩) সাধকদেশেল ব্যাখ্যা: স্থূল, প্রবর্ত্ত, সাধক ও সিদ্ধি কি প্রকার? সাধকের স্থূল সাধকের কর্ত্তা। উপাসনার তত্ত্বাদি সাধকের প্রবর্ত্ত ভাব আশ্রয় সাধকের সাধন। সেবাপরায়ণ সাধকের সিদ্ধি। ইহা জ্ঞানশূন্য ভক্তি, তৃতীয় সোপান অর্থাৎ ব্রহ্মচর্য্য ধর্ম্ম।
(৪) সিদ্ধিদেশেল ব্যাখ্যা: স্থূল, প্রবর্ত্ত, সাধক ও সিদ্ধি কি প্রকার? সিদ্ধির স্থূল সিদ্ধির কর্ত্তা। ভাবানুগত্য সিদ্ধির প্রবর্ত্ত প্রেম আশ্রয় ও রসপ্রাপ্তি সিদ্ধির সাধক। সেবাপরায়ণ হওয়া সিদ্ধির সিদ্ধি। উহা প্রেমভক্তি রাগানুরাগা, চতুর্থ সোপান অর্থাৎ সন্ন্যাস ধর্ম্ম।
প্রবর্ত্তে- গুরু শিষ্য সেব্য-সেবকং।
সাধকে-সখি সম্বন্ধং।
সিদ্ধিতে- মঞ্জরীপ্রাপ্তে পরস্পরে প্রেম সেবাদি রস আস্বাদন।
প্রথম সোপান হইতে সাধক মূলদেশে সিদ্ধবস্তু প্রাপ্তে ষোল আনা রতিপূর্ণ।
বৃহৎ দেশকালপাত্রের অর্থ করিতে যাইয়া পূর্ব্ব মহাজন স্থূলের দেশকে স্থূল তটস্থ এবং প্রবর্ত্তের দেশকে সূক্ষ্ম তটস্থ দেশ বলিয়া অনেক স্থলে বর্ণনা করিয়া গিয়াছেন। তাহাই এক্ষণে বর্ণিত হইতেছে- “মহাজনো যেন গত: স পন্থা।”
……………………………………..
তত্ত্বরসামৃত জ্ঞানমঞ্জরী
-শ্রীশ্রী চরণ দাস