পাগলের চাপলিয়া গ্রামে যাত্রা।
পয়ার
নামেতে কাঙ্গালী পাল সাধু শুদ্ধ মতি।
চিরদিন শুক্তাগ্রামে করেন বসতি।।
বিকালে তাহার বাটী হ’ল মহোৎসব।
রহিলেন সেই বাড়ী মতুয়ারা সব।।
সেই বেলা ভরি হ’ল নাম সংকীর্তন।
অর্ধ নিশি পর্যন্ত নাহিক নিবারণ।।
সবে ক্ষান্ত প্রেম শান্ত সংকীর্তন সায়।
সব সাধু ভোজন হইল সে সময়।।
প্রাতেঃ উঠি চলিলেন চাপলিয়া গ্রাম।
সেই গ্রামে সাধু অতি শুকচাঁদ নাম।।
সেই বাড়ী যাত্রা কৈল নাম প্রেমাবেশে।
মতুয়ারা মাতোয়ারা নাচে কাঁদে হাসে।।
সেই শুক্রাগ্রামে একজন দ্বিজ ছিল।
সংকীর্তনকালে বড় তর্ক আরম্ভিল।।
পাগল ছিলেন বসি পালেঙ্গার ঘরে।
শ্রীনবীন বসু গিয়া কহে পাগলেরে।।
এক বেটা ব্রাহ্মণ এসেছে এ বাটীতে।
কুতর্ক করেছে সেই কীর্তন স্থানেতে।।
তাহা শুনি পাগল হইল ধাবমান।
সংকীর্তন মাঝে স্বামী মহানন্দ যান।।
অমনি বহিল বন্যা কীর্তন প্রাঙ্গণে।
ঝঞ্ঝাবাত যেমন বহিল রম্ভাবনে।।
যে স্থলে যে ছিল কারু আর বাক্য নাই।
হরি বলে গড়াগড়ি দিতেছে সবাই।।
সেই বিপ্র হ’য়ে ক্ষিপ্র গড়াগড়ি যায়।
উন্মত্ত হইয়া পড়ে পাগলের পায়।।
পাগলে আগুলে দ্বিজ রাখিতে না পারে।
জড়াইয়া ধরিলেন অক্ষয় ঠাকুরে।।
দুই দ্বিজ জড়াজড়ি গড়াগড়ি যায়।
দৌড় দিয়া কীর্তন ছাড়িয়া বাহিরায়।।
কদর্য উচ্ছিষ্ট স্থান নামেতে আদাড়।
গড়াগড়ি যায় বিপ্র তাহার উপর।।
সেই কথা পথে এসে হ’ল আন্দোলন।
কি মাহাত্ম্য পাগলের চরণে ব্রাহ্মণ।।
মদন বিশ্বাস পূর্ণচন্দ্র অধিকারী।
দোঁহে করে আন্দোলন ন্যায় পথ ধরি।।
আগে করে কুতর্ক জাতির কথা কয়।
সে জাতিতে এসে শেষে চরণে লোটায়।।
তারক বলিল অই দেমাকী ব্রাহ্মণ।
ব্রাহ্মণ রূপেতে ওরা শুক্রাচার্যগণ।।
গ্রন্থে বলে চাঁদকাজী নোয়াইল মাথা।
এত হিন্দু ব্রাহ্মণ লুকা’য়ে যা’বে কোথা।।
বলিতে বলিতে প্রেম আবেশ তখন।
গান ধরি দিল কোথা পালাবি যবন।।
শ্রীগৌরাঙ্গ এল সেজে আয় কাজী আয়।
কা’ল ভেঙ্গেছি খোল আজ যাবি কোথায়।।
সবে মিলে গায় বোল অঙ্গে উঠে কম্প।
কোথা যাবি বলিয়া কেহ বা মারে লম্ফ।।
কেহ কেহ বীর দর্প যষ্ঠি ঘুরাইয়া।
কেহ করে বীরদর্প যষ্ঠি দেখাইয়া।।
বাবরা গ্রামেতে যত বসতি যবন।
অই রূপ ভাব তারা করি দরশন।।
বাড়ীর বাহিরে মাঠে ঘাটে ছিল যারা।
বাড়ীর মধ্যেতে গিয়া পলাইল তারা।।
তিন মিয়া এসে ধেয়ে আগুলিল পথে।
সবিনয় বলে মোর বাড়ী হবে যেতে।।
মতুয়ারা বলে যদি বল হরিবোল।
তবে তোমাদের বাড়ী যাইব সকল।।
তাহা শুনি তিন মিয়া বলে হরিবোল।
দৌড়ে গিয়া পাগল তাদের দিল কোল।।
পাগলে লইয়া গেল বাড়ীর ভিতর।
পাড়ার মিয়ারা যত হ’ল একত্তর।।
বাড়ীর উপরে গিয়া ঘুরিছে পাগল।
তাহা দেখি মিয়ারা বলিছে হরিবোল।।
তাহা দেখি মতুয়ারা সেইভাবে মেতে।
হরি বলে নাচিতে লাগিল নানা মতে।।
লাফাইয়া উঠিলেন বাড়ীর উপর।
মতুয়ারা মিয়ারা হইল একতর।।
বিবি সাহেবেরা সবে এল দেখিবারে।
তাহারাও সঙ্গে সঙ্গে হরিনাম করে।।
কে কারে কি করে কেহ বুঝিতে না পারে।
বড় ভীড় গোলমাল বাড়ীর উপরে।।
হাঁক দিয়া পাগল আইলেন বাহিরে।
জয় হরি গৌরহরি বলে উচ্চৈঃস্বরে।।
শেষে আর যত সাধু বাড়ীপরে ছিল।
কিছুক্ষণ পরে সবে বাহির হইল।।
একতর মতুয়ারা হইল সকল।
শুনিতেছে মিয়া বাড়ী হরি হরি বোল।।
কিছুকাল পরে তাহা হ’ল সম্বরণ।
পুনরায় মতুয়ারা জুড়িল কীর্তন।।