ভবঘুরেকথা

মহাপ্রভুর পূর্ব পুরুষগণের বিবরণ
দীর্ঘ-ত্রিপদী
নাম ছিল রামদাস, রাঢ়দেশে ছিল বাস,
তীর্থযাত্রা করি বহুদিন।
স্ত্রী পুরুষ দুইজনে, শেষে যান বৃন্দাবনে,
কৃষ্ণ প্রেমে হয়ে উদাসীন।।
কৃষ্ণনাম উচ্চারণে, ধারা বহিত নয়নে,
হেরিলে পবিত্র হয় জীব।
কাশী কাঞ্চি মধুপুরী, সরস্বতী গোদাবরী,
শান্তিপুর আদি নবদ্বীপ।।
বিষয় সম্পত্তি ত্যাজে, তীর্থ-যাত্রী পদব্রজে,
পরে যান শ্রীচন্দ্রশেখর।
নবগঙ্গা নাম শুনি, দেখিবারে সুরধনী,
লক্ষ্মীপাশা এল তারপর।।
কৃষ্ণভক্ত শিরোমণি, সবলোকে ধন্য মানি,
যত্ন করি রাখিল তথায়।
কৃষ্ণ ভক্তের সঙ্গে, প্রেমকথা রসরঙ্গে,
থাকিলেন শ্রীলক্ষ্মীপাশায়।।
চন্দ্রমোহন তার পুত্র, ক্রমে শুন তার সূত্র,
তার পুত্র শুকদেব নাম।
লক্ষ্মী পাশার উত্তর, নবগঙ্গা নদী পার,
বাস করে জয়পুর গ্রাম।।
তস্য পুত্র কালিদাস, বহুদিন কৈল বাস,
তিনি যান পাথরঘাটায়।
রবিদাস নিধিরাম, কনিষ্ঠ শ্রীজীব নাম,
তিনপুত্র সহিত তথায়।।
সর্বদায় সাধুসেবা, সংকীর্তন রাত্রি দিবা,
মাঝে মাঝে বাণিজ্য করিত।
যাহা করে উপার্জন, তাহাতে সাধু সেবন,
ক্ষেত্র কার্য্য অল্প পরিমিত।।
একদিন কৃষ্ণ ধ্যানে, তুলসী বেদীর স্থানে,
বসিয়াছে কালীদাস যিনি।
করে করে মালা জপ, অপরে কৃষ্ণ আরোপ,
হেনকালে হ’ল দৈববাণী।।
সাধুসেবা যে দিনেতে, হবে তব ভবনেতে,
এই বিলে আছয় প্রস্তর।
আসিয়া বিলের কূলে, দাঁড়াইও হরিবলে,
ভূরি ভূরি উঠিবে পাথর।।
সে সব পাথর ল’য়ে, নিজ ভবনেতে গিয়ে,
সাধুসেবা করিও যতনে।
সাধুসেবা হ’লে পরে, লইয়া বিলের কূলে,
সে পাত্র রাখিও পূর্বস্থানে।।
এরূপ করেন তিনি, গ্রাম্য লোক তাই শুনি,
মহোৎসব হ’লে কোন ঠাঁই।
প্রস্তর লইব ব’লে, দাঁড়া’ত বিলের কূলে,
দিয়া কালীদাসের দোহাই।।
সে সব পাথর ল’য়ে, আনিয়া নিজ আলয়ে,
ভোজন করায় লোক সবে।
লোকের ভোজন পরে, আনিয়া বিলের তীরে,
পাথর রাখিলে যায় ডুবে।।
পুরাতন লোক জানে, সেই বিলের দক্ষিণে,
পাবুনে গ্রামের ছিল নাম।
পাথর আসিত ঘাটে, যে ঘাটে পাথর উঠে,
হইল পাথরঘাটা গ্রাম।।
এক বাটী একদিনে, সে সব পাথর এনে,
বহুলোক ভোজন করায়।
প্রস্তর ঘাটেতে এনে, রেখে গেল সেই স্থানে,
একখানি পাথর না দেয়।।
সন্ধ্যা হইল উত্তীর্ণ, সেই পাথরের জন্য,
হু হু শব্দ উঠিতেছে জলে।
বিলের যত পাথর, সবে হ’য়ে একুত্তর,
সেই জল বৃদ্ধি হ’য়ে চলে।।
যে ঘরে পাথর ছিল, জলেতে ভাঙ্গিয়া নিল,
মধুমতি নদীর মাঝেতে।
দেবশিলা স্বপ্নাদেশে, বলে গেল কালীদাসে,
কলুষ পশিল এ গ্রামেতে।।
সে কালীদাসের সুত, নিধিরাম জ্যেষ্ঠ পুত্র,
তিনি হ’ন পরম নৈষ্ঠিক।
শ্রীনিধিরামের ঘরে, দুই পুত্র জন্ম ধরে,
মুকুন্দরাম কনিষ্ঠ কার্ত্তিক।।
জ্যেষ্ঠ শ্রীমুকুন্দরাম, অশেষ গুণের ধাম,
ঠাকুর মোচাই নামে খ্যাত।
সফলানগরী এসে, বাস করিলেন শেষে,
পঞ্চ পুত্র ল’য়ে আনন্দিত।।
যশোমন্ত সনাতন, প্রাণকৃষ্ণ রামমোহন,
রণকৃষ্ণ এ পাঁচ সন্তান।
সর্বজ্যেষ্ঠ যশোমন্ত, তার হ’ল পঞ্চ পুত্র,
এ পঞ্চের ঠাকুর আখ্যান।।
এ বংশে জন্মিল যত, শুদ্ধ শান্ত কৃষ্ণভক্ত,
সবে মত্ত হরি গুণ গানে।
কৃষ্ণ ভক্তির গুণে, তার এক এক জনে,
সাধু কি বৈষ্ণব সবে মানে।।
এ কয় পুরুষ মাঝে, মত্ত সাধু সেবা কাজে,
কৃষ্ণপ্রেম ভক্তি নিরবধি।
কেহ বা হ’ল সন্ন্যাসী, কেহ বৃন্দাবনবাসী,
তাতে বংশে ঠাকুর উপাধি।।
ঠাকুরের এ বংশেতে, হরিচাঁদ অবনীতে,
করিলেন জনম গ্রহণ।
কহিছে তারকচন্দ্র, অবতীর্ণ হরিশ্চন্দ্র,
হরি হরি বল সর্বজন।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!