ভক্তা নায়েরীর মহোৎসব
পয়ার
নায়েরী নামেতে নারী কলাতলা বাস।
পরমা বৈষ্ণবী দেবী হরিপদে আশ।।
বালিকা বিধবা দেবী শুদ্ধা তদ্বধি।
সাধুসেবা কৃষ্ণসেবা করে নিরবধি।।
ঠাকুরের ভক্তগণ যায় তার বাসে।
ঠাকুরের নাম শুনে প্রেমানন্দে ভাসে।।
সবে বলে ওঢ়াকাঁদি স্বয়ং ভগবান।
তাহা শুনি নায়েরীর কেঁদে উঠে প্রাণ।।
ঠাকুরে দেখিব বলে চিত্ত উচাটন।
উদ্দেশ্যে করিল দেবী আত্মসমর্পণ।।
দৈবাধীন ঠাকুরের ভক্তসঙ্গ পেয়ে।
ওঢ়াকাঁদি শুভ যাত্রা করে সেই মেয়ে।।
পথে যেতে মনে মনে করে আনাগোনা।
যেমন কপাল প্রভু দেখা ত দিবে না।।
নেত্রনীরে গাত্র ভাসে চলে কাঁদি কাঁদি।
উপনীতা হইল শ্রীধাম ওঢ়াকাঁদি।।
ঠাকুরের রূপ দেখে হয় জ্ঞানহারা।
কাঁপে গাত্র শিব নেত্র বহে অশ্রুধারা।।
দুই দণ্ড কাল প্রায় রহে দণ্ডাইয়ে।
প্রভুর শ্রীমূর্তি দেখে একদৃষ্টে চেয়ে।।
যুগল নয়নে তার বহে অশ্রুধার।
কণ্ঠরোধ বক্ষঃস্থল তিতিল তাহার।।
ঠাকুর বলেন তোর কেন হেন দশা।
স্থির হ’য়ে বল তোর মনে কিবা আশা।।
দণ্ডবৎ হ’য়ে কেন রৈলি দাঁড়াইয়ে।
মনে যাহা থাকে তাহা বল প্রকাশিয়ে।।
তাহা শুনি সেই নারী ধীরে ধীরে কহে।
জনমে জনমে যেন পদে মতি রহে।।
প্রভু বলে তোর মতি থাকিল আমায়।
জনমে জনমে তোর প্রতি দয়াময়।।
প্রভু ক’ন নায়েরি মা যাগো অন্তঃপুরে।
দেখ গিয়া ঠাকুরানী কি কি কার্য করে।।
বাক্য শুনি অন্তঃপুরে চলিল নায়েরী।
লক্ষ্মীমার পদ বন্দে স্তুতি নতি করি।।
গৃহকার্য করে সব মেয়ে ব্যবহারে।
শান্তিমাতা প্রফুল্লিতা নায়েরী আচারে।।
পরদিন বিদায় হইয়া বাড়ী যায়।
যাইতে পারে না ঠাকুরের পানে চায়।।
ফিরে ফিরে চায় তার বক্ষে বহে নীর।
থাকি থাকি ঝাঁকি মারে প্রফুল্ল শরীর।।
অষ্টসাত্ত্বিক বিকার জন্মিল আসিয়া।
সবে চমৎকৃত হৈল সে ভাব দেখিয়া।।
দুই তিন মাস এই ভাবে রহে ঘরে।
ওঢ়াকাঁদি আত্মস্বার্থ হরিনাম করে।।
দুই তিন মাসান্তর যায় ওঢ়াকাঁদি।
অন্তঃপুরে থাকে ছয় সাত দিনাবধি।।
এইভাবে যাতায়াত করে বহুদিন।
ঠাকুরের নিকটে কহিল একদিন।।
ওহে মহাপ্রভু মম আছে কিছু ধন।
আজ্ঞা হ’লে তব নামে করি বিতরণ।।
প্রভু বলে ভাল ভাল তাই করা চাই।
সাধুসেবা ভিন্ন ভবে ভাল কার্য নাই।।
যে সময় হইবেক যে অর্থ তোমার।
অমনি করিবে ব্যয় হুকুম আমার।।
এ সময় কত অর্থ আছয় তোমার।
কি রকম পারিবা করিতে ব্যয় তার।।
নায়েরী কহিছে কিছু নাহি জানি আমি।
যাহা ইচ্ছা তাহা কর সব হও তুমি।।
প্রভু বলে নায়েরী মতুয়া সব ডাক।
জনমের মত এক কীর্তি করি রাখ।।
চাউল লাগিবে তোর বিশ কুড়ি মণ।
এর উপযুক্ত দ্রব্য কর আয়োজন।।
তাহাই স্বীকার করি চলে গেল দেশে।
করিল উদ্যোগ তার মনের উল্লাসে।।
পুনর্বার ওঢ়াকাঁদি চলিল নায়েরী।
নিজে প্রভু দিল তার দিন অবধারী।।
প্রভু বলে তোর কিছু করিতে হ’বে না।
কর গিয়া আয়োজন যে তোর বাসনা।।
নায়েরী করিল সাধুসেবা আয়োজন।
এদিকে ঠাকুর দিতেছেন নিমন্ত্রণ।।
গোলোক পাগলে ডেকে বলে হরিচাঁদ।
মহোৎসব করিবারে নায়েরীর সাধ।।
যাহ বাছা নিমন্ত্রণ করহ সবারে।
পরস্পর বলাবলি যে দেখে যাহারে।।
বৈশাখের সাতাশে আটাশে ঊনত্রিশে।
তিনদিন মহোৎসব করিবা হরিষে।।
পূর্বদিন অধিবাস ভোজ মধ্য দিনে।
শেষ দিন প্রহরেক নাম সংকীর্তনে।।
মহোৎসবে বাজে কথা কহিতে দিবে না।
খা’বে আর হরিনাম গা’বে সর্বজনা।।
হরি ভিন্ন আর নাহি কর গণ্ডগোল।
শুধুমাত্র বলাইবা সুধা হরিবোল।।
সেইদিন হ’তে স্বামী গোলোক পুলকে।
মহোৎসব নিমন্ত্রণ আরম্ভিল লোকে।।
নায়েরীর বাড়িল যে আনন্দ অপার।
কবি বলে রবি গেল দিন নাই আর।।