ভবঘুরেকথা

গোস্বামীর ভোজের আয়োজন
পয়ার

নৌকা চলে খালদিয়া পাগল কিনারে।
শিলনার বালারা সে নৌকা টেনে ধরে।।
আজ সবে এইস্থানে করুণ বিশ্রাম।
কৃতার্থ করুণ সবে করি হরিনাম।।
তাহা শুনি সব নৌকা লাগিল কিনারে।
বালাদের বাটী নাম সংকীর্তন করে।।
বাহির বাটীতে নাম সংকীর্তন হয়।
মহাসংকীর্তন প্রেমবন্যা বয়ে যায়।।
কেহ কাঁদে কেহ হাসে গড়াগড়ি যায়।
হরি হরি হরি হরি হরি হরি হরি ময়।।
মাতিল তিতিল বক্ষ বহে অশ্রুজল।
গোস্বামী ডাকেন কোথা রাখালের দল।।
শুনিয়া রাখালগণে দেয় হরিধ্বনি।
পাগলের সম্মুখেতে করি যোড়পাণি।।
গোস্বামী কীর্তন মাঝে যখন বিরাজে।
রাখাল মিশিল এসে কীর্তনের মাঝে।।
হাতে লড়ি গোস্বামী দাঁড়াল বাঁকা হয়ে।
রাখালেরা নাচে সুখে আবাধ্বনি দিয়ে।।
বাল বৃদ্ধ যুবা পৌঢ় কিংবা নর নারী।
ধন্য যুগে একযোগে বলে হরি হরি।।
তার মধ্যে বসেছে ঈশ্বর অধিকারী।
মন্ত্রদাতা গুরু সদা করে গুরুগিরি।।
সংকীর্তন ক্ষান্ত করি সেবা আয়োজন।
সবে বলে কিছু পরে করিব ভোজন।।
গোস্বামী ঈশ্বরচন্দ্র আছেন সভায়।
তার সেবা না হ’লে কি সেবা করা যায়।।
বালারা দাঁড়াল এসে গোস্বামীর ঠাই।
করযোড়ে বলে পাক করুণ গোঁসাই।।
গোঁসাই চলিল পাক করিবার তরে।
পাগল গোঁসাই যান তার সমিভ্যরে।।
আবার মাতিল সবে নাম সংকীর্তনে।
দুই প্রভু চলিলেন রন্ধন কারণে।।
বাহির বাটীতে সবে গান করে যথা।
অধিকারী ঠাকুরের হুক্কা ছিল তথা।।
ঠাকুরের বিছানায় বালিশ হেলানে।
এদিকে মাতিল সবে নাম সংকীর্তনে।।
তার মধ্যে একজন উন্মত্তের ন্যায়।
নেচে গেয়ে বালিশের নিকটেতে যায়।।
ঢলিয়া পড়িল গিয়া বালিশের গায়।
পদ লাগি নচে খোল ভাঙ্গিল তথায়।।
মধ্য বাড়ী ছাড়িয়া বাহির বাড়ী নাম।
সেইখানে হুকা ভাঙ্গে কীর্তনের ধাম।।
পাক করে অন্তঃপুরে মধ্যে এক ঘরে।
গোলোক ঈশ্বর দুই প্রভু একতরে।।
অন্তর্যামী পাগল গর্জিয়া উঠিয়াছে।
কহেন গোঁসাই তব হুক্কা ভাঙ্গিয়াছে।।
সুতা গ্রন্থি দিয়া জোড়াইয়া সেই হুক।
সুতা পাকাইয়া বাঁধিতেছে ভাঙ্গা মুখ।।
পাগল আসিয়া করে তর্জন গর্জন।
ঠাকুরের হুঁকা ভাঙ্গিলিরে কোন জন।।
ঘরে বসি হুক্কা বাঁধে দ্বীপ আলোকেতে।
গোস্বামীর ক্রোধবাক্য শুনি ডরে চিতে।।
ভয়ে দ্বীপ নিভাইল বসে অন্ধকারে।
গোস্বামী বলেন বেটা আছে এই ঘরে।।
দ্বীপ নিভাইয়া বেটা বসে র’লি ঘরে।
ভেবেছিস আমি বুঝি দেখি নাই তোরে।।
কিরূপে বাঁধিলি হুক্কা দ্বীপ জ্বালা দেখি।
বাঁধন আটে না মোটে তার করিবি কি।।
দ্বীপ জ্বালাইয়া হুক্কা দেখা’ল তখনে।
পতিত হইল ভয়ে গোস্বামীর চরণে।।
অপরাধ করিয়াছি প্রভু ক্ষমা চাই।
হুঁকা কিনে দিব এনে আজ্ঞা কর তাই।।
পাগল কহেন মোরা চলে যাব প্রাতেঃ।
তুই যাবি কতক্ষণে হুঁকা কিনে দিতে।।
শীঘ্র করি আন আটালিয়া কালামাটি।
ভাঙ্গা হুঁকা জোড়া দিয়া করি পরিপাটি।।
সেই মাটি এনে দিল পাগলের ঠাই।
তৈল মাটি দিয়া হুঁকা যোড়া’ল গোঁসাই।।
তামাক সাজিয়া নিল রসই ঘরেতে।
হুক্কা ধরি দিল নিয়া ঠাকুরের হাতে।।
হস্ত ধৌত কর প্রভু শেষে কর পাক।
ধুমপান কর সেজে এনেছি তামাক।।
অধিকারী হুঁকা ধরি খাইল তামাক।
এই নাকি ভাঙ্গা হুক্কা কই যোড়া ফাঁক।।
ঠাকুর ধরিয়া হুঁকা দেখে আগাগোড়া।
জিজ্ঞাসা করিছে হুঁকা কোথা দিলে যোড়া।।
পাগল বলেন হুঁকা প্রবাসে চলিবে।
বাড়ী গেলে যোড়া ছেড়ে খসিয়া পড়িবে।।
অধিকারী পাক করি বসিলেন খেতে।
অর্ধ সেবা হইলে পাগল বসে সাথে।।
খাইল ডাইল শাক লাবড়া ব্যঞ্জণ।
টক দধি দুগ্ধ বাকী করিতে ভোজন।।
হেনকালে পাগল সে পাত্র ল’য়ে গেল।
অধিকারী কাছ হ’তে দূরেতে বসিল।।
টক পাত্র দধি পাত্র চিনি দুগ্ধ ল’য়ে।
একত্র করিয়া সব নিলেন মাখিয়ে।।
গোস্বামীকে কহে তুমি কর আচমন।
এ মহাপ্রসাদ আমি করি বিতরণ।।
আমি তুমি একত্রে খাইব বনমাঝে।
ইহা খেতে আসিও না শিষ্যের সমাজে।।
নহে বহির্বাটী গিয়া বৈস সেই খানে।
আর কিবা কার্য আছে এ বৃথা চর্বণে।।
গোস্বামী বসিল গিয়া ভক্তের সমাজে।
পাগল প্রসাদ বাঁটে সংকীর্তন মাঝে।।
দধি দুগ্ধ গোস্বামীর সেবা নাহি হ’ল।
পাগল সম্মুখ হইতে কাড়িয়া লইল।।
অবিবেকী সাধারণ লোক যারা ছিল।
পাগলের ভাব তারা বুঝিতে নারিল।।
অনেক লোকের মনে বিদ্বেষ জন্মিল।
এ লীলা তারকচন্দ্র ভাষায় রচিল।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!