নির্গুণ আত্মা হইতে ১. ব্যোম অর্থাৎ আকাশ বা শূন্য।
ব্যোম হইতে ২. মরুৎ অর্থাৎ বাতাস বা বায়ু।
মরুৎ হইতে ৩. তেজ অর্থাৎ উত্তাপ বা আলোক।
তেজ হইতে ৪. অপ অর্থাৎ জল বা জীবন।
অপ হইতে ৫. ক্ষিতি অর্থাৎ পৃথিবী বা মাটি।
ক্ষিতি হইতে ৬. ঔষধি অর্থাৎ গাছপালা আদি।
ঔষধি হইতে ৭. অন্ন অর্থাৎ খাদ্য।
অন্ন হইতে ৮. ভূতাদি অর্থাৎ মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তু।
পঞ্চতত্ত্ব হইতে সৃষ্টি সম্পাদিত হয়। তত্ত্ব হইতেই তত্ত্ব লয়প্রাপ্ত হয়। যে তত্ত্ব পঞ্চতত্ত্বের পর, তিনিই তত্ত্বের অতীত নিরঞ্জন বলিয়া জানিবে।
পঞ্চভূতের (মাটি, জল, আলোক, বাতাস ও আকাশ) একীকৃত সমষ্টিই চৈতন্য। চৈতন্যই ভগবানের সত্তা পঞ্চভূত বিভূতি হইতে এই ক্ষুদ্র ও বৃহৎ পরিদৃশমান জগৎ গঠিত হইয়াছে।
পঞ্চভূতের মধ্যে আকাশে একটি মাত্র গুণ। ইহা কাহারও আশ্রয়ীভূত নহে। আকাশে (সূক্ষ্ম আকাশ ব্যোম) না থাকিলে মাটি, জল, আলো ও হাওয়া তিষ্ঠিতে পারিত না, তাহাদের অস্তিত্ব বজায় থাকিত না।
এই চারি ভূতের লীলার জন্যেই ব্যোমের বিশেষ আবশ্যক। এক ব্যোমের অভাবেই সমস্ত সৃষ্টি জগত অচল হইত। তাই ব্যোমের শ্রেষ্ঠত্ব, ব্যোম সর্ব্বোপরি সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় প্রত্যেক পলে বিপলে ঘটিতেছে। সৃষ্টি ও স্তিতিতে (জন্ম ও রক্ষা কার্য্যে) পঞ্চভূতের সংযোগ এবং প্রলয়ে তার বিয়োগ আবহমানকাল চলিয়া আসিতেছে।
পঞ্চভূতেই সৃষ্টির মূল মধ্য ও শেষ। ইহারাই ভগবানের বিভূতি, ইহাদের সংযোগেই চৈতন্য আর বিয়োগেই মৃত্যু।
পঞ্চভূত
পঞ্চভূতের গুণ-বর্ণ-রূপ-স্থিতি:
পৃথিবী- গন্ধগুণ, শুক্লবর্ণ, স্থির রূপ, নাসিকায় স্থিতি।
অপ- রসগুণ, কিঞ্চিৎ গৌরবর্ণ, দ্রব্যরূপ, জিহ্বায় স্থিতি।
তেজ- রূপগুণ, ভষ্মবর্ণ, সুন্দর রূপ, চক্ষে স্থিতি।
বায়ু- স্পর্শগুণ, শ্যামল বর্ণ, শ্যামমূর্ত্ত রূপ, চর্ম্মে স্থিতি।
আকাশ- শব্দগুণ, ধুম্রবর্ণ, সূক্ষ্মরূপ, কর্ণে স্থিতি।
পঞ্চভূতময় হয় এই ত সংসার। পঞ্চভূত বিনা কিছু বস্তু নাহি আর।। পঞ্চভূত তত্ত্বসহ বটে একরূপ। জীবে ও পরমে তিনি একই স্বরূপ।। তত্ব যে পদার্থ আর জীব পরমাত্মা। চারি বস্তু ভেদ নাই সকলি এক আত্মা।।
পদার্থ শব্দের অর্থ শুনহ বিস্তার।। চতুর্বিংশ পঞ্চবিংশ মোহতত্ত্ব আর।। ইহাকে জানিলে জীব জীবনমুক্ত হয়। এই দেহ নিত্য হয় জানিহ নিশ্চয়।। পাপ পুণ্য, জন্ম মৃত্যু নাহিক থাকয়। কি অপ্রাকৃত দেহ সে সচ্চিদানন্দ ময়।। গুরু শিষ্য এক আত্ম হইবে তখন। নিত্য বৃন্দাবনে যাবে করিলে সাধন।। এই পঞ্চতত্ত্ব জীব অবগত হয়। সে জীব জীবন্মুক্ত জানিহ নিশ্চয়।।
পঞ্চগুণ
পৃথ্বী – অস্থি, মাংস, নখ, রোম আর দেহচর্ম্ম। পৃথিবী হইতে এই পঞ্চদ্রব্য জন্ম।
অপ – শুক্র, শোণিত, মলমূত্র, মজ্জার সহিতে। অপ পঞ্চগুণ ইহা জানিহ নিশ্চিন্তে।।
তেজ – ক্ষুধা, তৃষ্ণা, নিদ্রা, ভ্রান্তি, আলস্য পঞ্চমে। তেজ ভূত পঞ্চগুণ কহি ক্রমে ক্রমে।
বায়ু – ধারণ, চালন ও সঙ্কোচ, প্রসারণ। ক্ষেপন সহিত পঞ্চবায়ুর গঠন।।
আকাশ – কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, লজ্জা, গুণ, সব। আকাশ হইতে হয় সবার উদ্ভব।
পৃথিবী বশীভূত হয় কিসে? – গুরুর কৃপাবলে।
অপ বশীভূত হয় কিসে? – নামসংকীর্ত্তনে।
তেজ বশীভূত হয় কিসে? – ভাবনায়।
বায়ু বশীভূত হয় কিসে? – ধ্যানেতে।
আকাশ বশীভূত হয় কিসে? – সাধন নাসিকায়।
এই পঞ্চভূতের সাধন।
……………………………………..
তত্ত্বরসামৃত জ্ঞানমঞ্জরী
-শ্রীশ্রী চরণ দাস