ভবঘুরেকথা

শ্রীশ্রী গুরুচাঁদের ভবিষ্যৎ বাণী

পঞ্চাশ বছর পূর্বে গুরুচাঁদ কয়।
ভোট দিয়ে সব কাজ হইবে নির্ণয়।।
ভোটে রাজা প্রজা হবে পৃথিবী ভরিয়া।
ক্রমে ক্রমে সেই বাক্য এসেছে ফলিয়া।।
একদিন ডাকি বলে সে মধুসূদনে।
ঘৃতকান্দিবাসী যিনি সর্ব লোকে জানে।।
“শোন মধু! শোন কুঞ্জ! যাহা দেখা যায়।
‘অবতার’ যেইখানে আসি জন্ম লয়।।
শহর বন্দর সেথা হয় কালে কালে।
এই দেশে যাহা হবে যাই আমি বলে।।
আমি যেন দেখিলাম ঘৃতকান্দি হ’তে।
রাজপথ সমপথ গেছে পশ্চিমেতে।।
তার দুই ধারে যেন বিচিত্র শোভায়।
দালান, মন্দির কত দাঁড়াইয়া রয়।।
মনে হয় কি যেন কি সফলাডাঙ্গায়।
আশ্চর্য হইবে লীলা বাবার দয়ায়।।”
আর দিন কত ভক্তে প্রভু ডেকে কয়।
“শ্রীহরির বংশে ভগবান অবতীর্ণ হয়।
সেই বংশে ‘রাজশক্তি’ আসিবে নিশ্চয়।।”
মথুরায় জন্মে কৃষ্ণ দেবকী উদরে।
কংস ভয়ে পলাইয়া গেল ব্রজপুরে।।
করিল মধুর লীলা কৃষ্ণ দয়াময়।
“শত গোলকের তুল্য বৃন্দাবন” কয়।।
অনায়াসে রত্ন পেলে যা’ ঘটে কপালে।
রত্ন নিয়ে ছিনিমিনি করে সবে মিলে।।
দড়ি আনি নন্দরাণী বান্ধে কৃষ্ণধনে।
কৃষ্ণকে পাঠায় নন্দ বনে গোচারণে।।
গরবিনী রাধারাণী মানে’ সীমা নাই।
রাখালে রাখাল ভেবে ডাকিল ‘কানাই’।।
পদ সেবে লক্ষ্মী যার ব্রহ্মা করে ধ্যান।
ব্রজবাসী নরজ্ঞানে করে অপমান।।
গোকুল কান্দায়ে গেল কৃষ্ণ মহাতেজা।
মথুরায় নিজ ঘরে হ’ল মহারাজা।।
লোকাচারে লোকে তাই বলে সর্বদায়।
“রাজকন্যা বলে প্যারী (অত) মান ভাল নয়।।”
সফলানগর হ’তে জমিদার ভয়।
ওড়াকান্দি হরিচাঁদ হইল উদয়।।
আশ্চর্য মধুর লীলা সেইখানে হয়।
তীর্থ শ্রেষ্ঠ ওড়াকান্দি সর্বজনে কয়।।
মহাপ্রভু গুরুচাঁদ ছিল ধামেশ্বর।
ওড়াকান্দিবাসী জনে কত অহংকার!
যাহা কিছু ওড়াকান্দি শুভ কাজ হয়।
শ্রীগুরুচাঁদের হস্ত তার পাছে রয়।।
ক্রমে দেখ ওড়াকান্দিবাসী যত নর।
প্রভুর সঙ্গেতে বাদ করে নিরন্তর।।
শতবার ক্ষমা প্রভু করিল সবারে।
অভিশাপ দিলা শেষে ব্যথিত অন্তরে।।
একদা প্রভাত কালে আসি গদী ঘরে।
জিজ্ঞাসা করিল প্রভু অতি ক্রোধভরে।।
“ওড়াকান্দিবাসী কেহ আছ কি এখানে?
আমি যাহা বলি তাহা রাখ’ সবে শুনে।।”
নিয়তির খেলা দেখ অকাট্য কেমন!
ওড়াকান্দিবাসী কেহ ছিল না তখন।।
একমাত্র বড় বাবু প্রমথরঞ্জন।
নীরবে বসিয়া শোনে প্রভুর বচন।।
লোকাচারে চোখে প্রভু দৃষ্টি নাহি ধরে।
হাতে ধরে তাই কেউ সাথে সাথে ফিরে।।
বারে বারে তিন বার প্রভু ডেকে কয়।
“ওড়াকান্দিবাসী কেহ আছ কি হেথায়?”
উত্তর না পেয়ে প্রভু ক্রোধভরে কয়।
“নাই কেহ থাকিবে না কিছুও হেথায়।।”
সহসা করিল চিন্তা প্রমথরঞ্জন।
ওড়াকান্দিবাসী বটে আমি একজন।।
উর্ধশ্বাসে ছুটে গিয়ে ধরিয়া চরণ।
“বলে ওড়াকান্দিবাসী আমি একজন।।”
হাসিয়া বলিল প্রভু “প্রমথ দা নাকি?
তোরে আর একেবারে নাহি দেব ফাঁকি।।
এক মুঠা খেতে দাদা অবশ্য পাইবে।
শ্রীহরিচাঁদের প্রতি ভরসা রাখিবে।।”

তিনি কি গড়িলেন?
“বজ্রাদপি কঠোরাণি মৃদুনি কুসুমাদপি”
“মতুয়া-আত্মভোলা বীর সাধু।”

শ্যামল বাংলার কোলে
বাঁধিয়া প্রেমের জালে
ঘরে ঘরে বাজে তাঁর
ডঙ্কা শিঙ্গা রোল।
বলরে হরিবোল!
আনন্দের শিহরণ,
নাচে বুকে ঘন ঘন
মরা প্রাণে জেগে ওঠে,
আনন্দেরি দোল!
বলরে হরিবোল!
এনে সঞ্জীবনী সুধা
মিটা’ল প্রাণের ক্ষুধা,
জেগে ওঠে গুরুভক্ত
মতুয়ার দল।
বলরে হরিবোল!
প্রেমে আঁখি ছল ছল
বুকে শক্তি দেহে বল
বজ্রসম রুদ্র পুনঃ
কুসুম-কোমল।
বলরে হরিবোল!
হরিপ্রেমে মাতোয়ারা
গুরুপদে রহে মরা
কীর্তনের কালে ধরা
করে টলমল।
বলরে হরিবোল!
ব্যথিতের বেদনায়
গলে যায় করুণায়
তার দুঃখে দুঃখী সেজে
ফেলে অশ্রু জল।
বলরে হরিবোল!
নারী জাতি জানে মাতা,
শ্রদ্ধায় নোয়ায় মাথা
নতশিরে দেখে মাত্র
চরণের তল।
বলরে হরিবোল!
নারীর সম্মান লাগি,
হ’তে পারে সর্বত্যাগী
দিতে পারে পলকেতে
ধরা রসাতল।
বলরে হরিবোল!
সে জানে দেবতা নাই
মানুষে মানুষ পাই
মানুষ সবার শ্রেষ্ঠ
মানুষেই বল।
বলরে হরিবোল!
সরল অকুতোভয়
মরণেতে নাহি ভয়,
হরি গুরুচাঁদে জানে
পথের সম্বল।
বলরে হরিবোল!
আপনার বুক চিরে,
প্রমথরঞ্জনে ধরে
মতুয়ার করে করে
দিল সিদ্ধি ফল।
বলরে হরিবোল!
করিলেন লীলাসাঙ্গ
গড়িয়া মতুয়া-সঙ্ঘ
প্রমথরঞ্জন বলে
এস হে সকল।
বলরে হরিবোল!
জীবনের কুরুক্ষেত্রে
‘অনন্ত বিজয়’ পত্রে
প্রথম দিতেছে বাণী
অভয় সকল।
বলরে হরিবোল!
মতুয়ার মহাসঙ্ঘ
বলিতেছি সে প্রসঙ্গ
কোন কোন দেশে আছে
কোন মহাবল।
বলরে হরিবোল!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!