লর্ড লিটনের গোপালগঞ্জ আগমন
পদ্মবিলা দাঙ্গা শেষ হইল যখন।
গোপালগঞ্জেতে লাট করে আগমন।।
লর্ড লিটনের নাম জানে বঙ্গবাসী।
পত্নী সহ উপনীত হইলেন আসি।।
হইল বিপুল দৃশ্য শহরের পরে।
অসংখ্য আসিল লোক কাতারে কাতারে।।
কালীপদ মৈত্র নামে ছিলেন ডেপুটি।
তেঁহ সজ্জা করাইল অতি পরিপাটি।।
জেলার প্রধান যত সবে যোগ দিল।
নমঃশূদ্র জাতি পক্ষে বহুত আসিল।।
মানপত্র বহু জাতি দিল সে সভায়।
নমঃশূদ্র পক্ষে কথা গুরুচাঁদ কয়।।
চন্দ্রনাথ বসু নামধারী একজন।
গোলাবেড়ে বাস করে সেই মহাজন।।
নমঃকুলে জন্ম তার অতি তেজবন্ত।
স্বজাতির প্রতি প্রীতি তাঁহার একান্ত।।
ওড়াকান্দী ঘৃতকান্দী মল্লকান্দি হতে।
নমঃশূদ্র প্রধানেরা চলে এক সাথে।।
গোপাল গঞ্জেতে আসি হইল উদয়।
এক সাথে সবে মিলে মানপত্র দেয়।।
এ জাতির শিক্ষা দীক্ষা রাজকার্য্য চাই।
রাজার বিরুদ্ধে মোরা কভু যাই নাই।।
রাজভক্ত বলি মোরা আছি পরিচিত।
তত্ত্ব জেনে এই সব করুন বিহিত।।
এই মত বহু কথা মানপত্রে রয়।
রজত পাত্রেতে করি মানপত্র দেয়।।
লাট যবে ‘কলে’ আসে তখনে ডেপুটী।
সকলের পরিচয় দেয় খাঁটি খাঁটি।।
লাটে গুরুচাঁদে যবে পরিচয় হ’ল।
বহুত মঙ্গল কথা ডেপুটী কহিল।।
‘‘ধর্ম্মগুরু এক জন শ্রীগুরু চরণ।
বঙ্গ দেশে শিষ্য তার আছে আগণন।।
ধনবান গুরণবান তাহাতে ধার্ম্মিক।
বাক্য কি কার্য্যেতে সদা অত্যন্ত নির্ভিক।।
তাঁর গৃহে অশিক্ষিত নাহি কোন জন।
নরনারী শিক্ষা প্রাপ্ত অতি সুশোভন।।
বহু বহু লোক বটে আছে এ জেলায়।
এর মত লোক অঅর দেখা নাহি যায়।।’’
এ সব বৃত্তান্ত শুনি লাট মহোদয়।
করে কর দিয়া তাঁরে সম্মান জানায়।।
এই ভাবে জনে জনে দিল পরিচয়।
অধিক না লিখি কিছু গ্রন্থ-বৃদ্ধি ভয়।।
মানপত্র উত্তরেতে বলে বঙ্গেশ্বর।
‘‘বড়ই সন্তুষ্ট আমি সবার উপর।।
যিনি যাহা লিখিয়াছেন শুনিলাম সুখে।
কত যে আনন্দ হল কিবা বলি মুখে।।
সকলেরে ধন্যবাদ দিয়া অতঃপর।
সভাভঙ্গ করি চলি গেল বঙ্গেশ্বর।।
প্রভু যবে দেশে ফিরে যাইবারে চায়।
শ্রীবেণী পালেল ভ্রাতা তাঁরে ডাকি কয়।।
‘‘প্রণাম হে বড়কর্ত্তা করি তব পায়।
কলিকাতা চলিয়াছি জানাই তোমায়।।’’
শ্রীবেণীমাধব পাল বড় ভাগ্যবান।
এবে কিছু বলি শোন তাঁহার আখ্যান।।