-ড. হাসান রাজা
পবিত্র কোরানুল করীমে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা প্রকৃত মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করিও না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই ইব্রাহীম, ইয়াকুব, ইউসুফ তাদের পুত্রদের এই বলিয়া ওসিয়ত করিয়াছেন, হে আমার সন্তানেরা, আল্লাহ তার এই দ্বীনকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা প্রকৃত মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করিও না। (সুরা বাক্বারাহ : ১৩২)
এখন খুব স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসবে, মুসলমান মানে কী? বা মুসলমান শব্দের আভিধানিক অর্থ কী? আর আমরা তো মুসলমান বলেই কোরান পাঠ করি, তবে কি আমরা কেউ প্রকৃত মুসলমান নই?
‘আসলেম’ শব্দ থেকে ‘মুসলেম’ শব্দটি এসেছে। যার অর্থ ‘পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ’ করা। আল্লাহর মনোনীত নবী-রসুল-পীর-পয়গম্বরের কাছে নিঃশর্তভাবে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণকারীকে বলা হয় মুসলমান। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের যে কোন ধর্মের মানুষের জন্য এটি প্রযোজ্য।
যে কেহ একজন কামেল মুর্শেদের কাছে বাইয়াত গ্রহণের মাধ্যমেই নিজেকে একজন খাঁটি মুসলমান তথা প্রকৃত আত্মসমর্পণকারী হিসেবে আলোকিত করতে পারেন।
এখন প্রশ্ন আসবে, কার কাছে আত্মসমর্পণ করবো? সাধারণভাবে সবাই বলে থাকে, স্রষ্টার কাছেই আত্মসমর্পণ করতে হবে, অন্য কারও কাছে নয়। কিন্তু স্রষ্টা বিষয়টাই সকলের কাছে স্পষ্ট নয়। বেশিভাগ মানুষের মনেই প্রশ্ন জাগে, যাকে দেখি না, বা যাকে দেখা যায় না, তার কাছে কি ভাবে নিজেকে সমর্পণ করা সম্ভব?
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হচ্ছে মানুষ, মানুষের মধ্যে যারা সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর দ্বীনে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে মুমিন বান্দায় পরিণত হয়েছেন তথা আল্লাহর মনোনীত আদম পর্যায়ে উন্নীত হয়েছেন, তাঁদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
কারণ, পবিত্র কোরানে মহান আল্লাহতায়ালা আদমকে সিজদা করার যে আদেশ দান করেছেন তা সর্বকালীন। অন্যদিকে মুমিন সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল (স) ঘোষণা করেছেন- ‘ক্বুলুবুল মুমেনীনা আরশে আল্লাহ।’ অর্থাৎ- মুমিনের ক্বলবে আল্লাহর আরশ।
সুতরাং আমাদের মধ্যে আল্লাহর মনোনীত নবী-রসুল-পীর-পয়গম্বর যারা সম্পূর্ণরূপে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মুমিন বা আদমে পরিণত হয়েছেন তাদের কাছেই আত্মসমর্পণ করতে হবে। কেননা, তাদের চেহারায় আল্লাহর নূর প্রকাশিত হয়।
বাঙালি মানবগুরু মহামতি লালন শাহ্ তাই তাঁর বাণীতে ঘোষণা করেছেন-
আদম হলে আদমী চিনে
ঠিক নামায় সে দিল কোরানে,
লালন বলে গুরু বীনে
কোথার সেজদা কোথায় রাখি।
সুতরাং, আত্মসমর্পণের জন্য এমন একজন আদমের কাছে যাও, তার কাছে আত্মসমর্পণ করো, তাহলেই মহান স্রষ্টা বা আল্লাহর পরিচয় পাবে।
এখন ভাবছেন, এ কেমন কথা? আমিও তো মানুষ, আর মানুষ হয়ে মানুষের কাছে আত্মসমর্পণ কেন করবো? সহজ উত্তর, আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরানের সুরা নেসার ৮০ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেছেন- ‘যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে, সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে (হে মুহাম্মদ), তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি।’ (সুরা নিসা ৪: ৮০)।
সুতরাং জীব পর্যায়ের কোন মানুষের কাছে নয়, তোমাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের প্রতিনিধির কাছে। যিঁনি নিজে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণকারী হয়েছেন, তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণ করতে হবে। কারণ, সাধারণ মানুষ জীব পর্যায়ের এবং স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন অধিকাংশ মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।
জীব থেকে জ্বীন, জ্বীন থেকে ইনসান, ইনসান থেকে আদম বা মুমিন পর্যায়ে উন্নীত শুদ্ধ কামেল অলি-আল্লাহর কাছেই সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করতে হবে। কেননা, আল্লাহর রহস্যলোকে প্রতিনিয়ত আত্মিক গুণাবলীর রূপান্তর প্রক্রিয়া অনন্ত সৃষ্টিতে চিরবর্ধিষ্ণুরূপে চলমান রয়েছে। এই পরিবর্তনকে কোরানের ভাষায় বলা হয় ‘খলাকা’ বা রূপান্তর সৃষ্টি।
এখন কথা আসতেই পারে, কিভাবে জীব থেকে ইনসান, ইনসান থেকে আদম বা মুমিন হওয়া যাবে? এর চমৎকার উত্তর আল্লাহপাক পবিত্র কোরানেই দিয়ে রেখেছেন।
সুরা আর রহমানের প্রথমেই আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন- ‘আর রহমান। আল্লামাল কোরান। খলাকাল ইনসান।’ অর্থাৎ- ‘মহান রব্বুল আলামীন নিজেই রহমান বা দয়াল শিক্ষকরূপে জীব পর্যায়ের মানুষকে কোরান বা সৃষ্টির বিকাশ বিজ্ঞানকে শিক্ষা দান করেন। এবং তিনি সাধারণ মানুষকে খলাকা বা রূপান্তর সৃষ্টির মাধ্যমে ইনসানে পরিণত করেন। এবং তার প্রশংসা বর্ণনা শেখান।’
অতএব, জীব থেকে মানব, মানব থেকে মহামানব স্তরে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে আল্লাহ্ ও রাসুলের (স) এর মনোনীত একজন প্রতিনিধির কাছে বাইয়াত গ্রহণের মাধ্যমে পরিপূর্ণ ঈমান বা আত্মসমর্পণ করা।
এই বাইয়াত গ্রহণের বিষয়টিও পবিত্র কোরানুল কারীমে মহান রব্বুল ইজ্জত সুরা ফাতাহ-এর ১০ নম্বর আয়াতে বর্ণনা করেছেন এই ভাবে যে, ‘হে রাসুল (স), যারা আপনার কাছে আনুগত্যের বাইয়াত বা শফত করে, তারা তো আল্লাহর কাছেই আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে; অতি অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যেই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে; আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।’ (সুরা ফাতাহ : ১০)
সুতরাং, আল্লাহর রাসুল (স) এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করলে সে হাত আল্লাহর হাত হয়ে যায়। একইভাবে রাসুল (স) এর কাছে বা তাঁর মনোনীত প্রতিনিধি মাওলাল মুমেনিন হযরত আলী (আ) এর কাছে বা তাঁর প্রতিনিধির কাছে বাইয়াত বা আনুগত্যের শপথ ছাড়া কেউই প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না।
এটি পবিত্র মুহাম্মদী দ্বীন ইসলামের পবিত্র আদর্শ বা হাক্বিকত। তরিকায়ে চিশতিয়ার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া আজও চলমান রয়েছে।
তাই মানবিক গুণাবলীর উৎকর্ষতা সাধনের মাধ্যমে নিজেকে পরিপূর্ণ আল্লাহর দ্বীনে সমর্পিত করতে চাইলে মহামানবিক মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করতেই হবে। এর কোন বিকল্প পথ নেই। আর তাই সম্মিলিত সালাতে একজনকে ঈমাম বা নেতা না মানলে সালাত আদায় হয় না।
এই একজনকে পূঙ্খানুপূঙ্খ মেনে চলার এই প্রক্রিয়া সমুদ্রের নীচে যেমন মাছেদের সারিতে দেখা যায় তেমনি আকাশের বুকে উড়ে চলা পাখির ঝাঁকের মধ্যেও লক্ষ্য করা যায়। অতএব এই আনুগত্য প্রকাশ একটি মহামানবিক ও মহাজাগতিক প্রক্রিয়া।
তবে এই প্রক্রিয়ায় যাকে তাকে অনুসরণ করতে পবিত্র কোরানে নিষেধ করা হয়েছে। পবিত্র কোরান শুধুমাত্র তাঁদেরকেই অনুসরণ করতে বলা হয়েছে, যাঁরা নিজেরা সুপথ প্রাপ্ত এবং এর জন্য কোন পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন না।
প্রসঙ্গত, সুরা ইয়াসিনের ২১ নম্বর আয়াতের কথা উল্লেখযোগ্য- ‘ইত্তাবিঊ মাল্লা-ইয়াছআলুকুম আজরাওঁ ওয়া হুম মুহতাদূন। (সূরা ইয়াসীন), আয়াত: ২১)।’ অর্থ: ‘অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় প্রত্যাশা করে না, অথচ তাঁরা সুপথ প্রাপ্ত।’
অন্যভাবে বলা যায়, হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন- ‘মান আরাফা নাফসাহু ওয়া ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু।’ অর্থাৎ- ‘যে নিজেকে চিনেছে সে তার স্রষ্টাকে চিনেছে।’ সুতরাং যিনি স্রষ্টাকে চিনতে পেরেছেন, তিঁনিই মহামানব বা প্রকৃত মুমিন হতে পেরেছেন।
ডাক্তার হওয়ার জন্য মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করেও অভিজ্ঞ কোন ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে অনুশীলনের মাধ্যমেই যেমন ডাক্তার হতে হয়, তদ্রূপ একজন কামেল শুদ্ধ মানুষের সাহচর্যে থেকেই আদব আর পবিত্রতা অর্জনের সাধনায় পাশ করতে পারলেই তবেই কেবল প্রকৃত মুমিন হওয়া যায়।
এই অবস্থায় আপনি বলতে পারেন, তাহলে তো পৃথিবীর সর্বত্র, যেখানেই তাকাই সেখানেই কেবল সাধারণ মানুষ আর মানুষ দেখতে পাই, মহামানব পাব কোথায়?
এই ক্ষেত্রে হতাশ হলে চলবে না। ধৈর্য ধারণ করতে হবে। কারণ, মহান রব্বুল ইজ্জত আল্লাহপাক কোরানে ঘোষণা করেছেন- ‘ইন্নাল্লাহা মা আছ সবেরীন।’ অর্থ- ‘নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’
লক্ষ্য করুন, পৃথিবীর সবচেয়ে দামী খনিজ পাথর হীরা। এই হীরা যেমন পাওয়া যায় কয়লার খনিতে, তেমনি এই মানব সম্প্রদায়ের মাঝেই লুকিয়ে আছেন, সেই প্রকৃত শুদ্ধ মানুষ, সহজ মানুষ, সোনার মানুষ তথা মনের মানুষ।
এখন এই সোনার মানুষ চেনার সহজ উপায় হচ্ছে, যারা জাগতিক সকল লোভ-লালসা, কামনা-বাসনা থেকে মুখ ফিরিয়ে সদাসর্বদা আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন থাকেন। যাদের দেখলেই আল্লাহর কথা স্মরণ হয়, তাঁরাই পবিত্র মানুষ।
এই ধরণের ব্যক্তিবর্গ জীবনে সূক্ষ্ম ন্যায়বিচার আর পরোপকারের মাধ্যমে নিজেদের মহান রবের সম্মুখে সদা-সর্বদা দণ্ডায়মাণ রাখেন। ইঁনারায় আল্লাহর রহস্যালোকের বাসিন্দা। প্রকৃত অত্মসমর্পণকারী। আর মহান রব্বুল ইজ্জত তাঁদের হেফাজতকারী। ইঁনারায় প্রকৃত তাকওয়াকারী, মুমিন।
প্রকৃত ঈমান অর্জনের পথে সাধক তাই ক্রমাগত আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আপন আপন নফসের সঙ্গে জেহাদে লিপ্ত থেকে নিজের কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মায়া, মাৎ-মাৎসুদ্ধ, হিংসা-বিদ্ধেষ ইত্যাদি জৈবিক ও পাশবিক প্রবৃত্তিকে জয় করে ইন্দ্রজিৎ হয়ে ওঠেন।
তখন মহান রব্বুল ইজ্জতের গুণাবলীই হয়ে ওঠে তাঁদের আত্মিক আশ্রয়। এবং নিজের আমিত্বকে বিলীন করার মাধ্যমে তারা মৃত্যুর পূর্বেই মৃত্যুকে জয় করে হয়ে ওঠেন হ্ইাউল কাইয়্যুম। কোরানের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘মুতু ক্বলা আনতা মুতু।’
তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, যারা তথাকথিত দেখাদেখির ধর্মানুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে নিজেকে মুসলমান দাবী করেন, তারা আসলে নামকাওয়াস্তে মুসলমান। এদের ঈমান দোদুল্যমান। যে কোন সময় লোভের বশে এরা অন্যায় কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারে।
এখন ভাবুন, সারা পৃথিবীতে প্রায় দুই শত কোটি মুসলমান রয়েছে বলে আমরা দাবী করি, কিন্তু আসলে কয়জন মানুষ প্রকৃত আত্মসমর্পণকারী মুসলমান রয়েছেন, সেটি গবেষণার বিষয়। কারণ, দাঁড়ি, টুপি, জুব্বা-জাব্বা পরিহতি একজন অনুষ্ঠানবাদী নামাজি হলেই যে, সে প্রকৃত মুসলমান হবে, এই কথা আদৌ সত্য নয়।
কেননা, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ স্বরূপ বলা যায়, কারবালার ময়দানে মাওলা ঈমাম হুসাইন (আ) তাঁর ৭২ জন সঙ্গী-সাথী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খাঁটি মুসলমানরূপে প্রকৃত আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেখিয়ে গেছেন, প্রকৃত মুসলমানের চরিত্র কতো পবিত্র আর সুবাসিত।
ষড়যন্ত্র আর প্রহসনের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শুরুতে অভিশপ্ত ইয়াজিদ বাহিনীর ৩৭ হাজার সৈন্যকে লক্ষ্য করে, শহীদে আকবর শাহানশাহে ইসলাম মাওলা হুসাইন (আ) তাই জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কি একজনও মুসলমান নেই?’
অথচ সেখানে হাজার হাজার পাঞ্জেগানা নামাজি, হাফেজ, মুফতি ও নবী (স) এর কতিপয় মোনাফেক সাহাবাও উপস্থিত ছিল। এরা তো কেউ মুসলমান ছিল না। এতে কি প্রমাণ হয়না যে, শুধুমাত্র নামকাওয়াস্তে ইসলামের হুকুম-আহকাম পালন করলেই মুসলমান হওয়া যায় না!
সময় থাকতে একটু ভাবতে থাকুন। অনেক তো দেশ-বিদেশ থেকে ডিগ্রি লাভ করলেন, নামাজ কাজা করেন না, একাধিকবার হজ্জও করেছেন, মসজিদ বানিয়েছেন। অথচ যাঁকে সৃষ্টি না করলে জগতের কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না, যাঁকে প্রাণাধিক ভাল না বাসলে ঈমানে কামেল হওয়া যায়না, সেই দ্বীনের নবী শাহানশাহে দোজাহা রাহমাতুল্লিল আলামিন, সিরাজুস ছালেকীন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স) এর প্রতি আমরা কতটুকু নিজেদের উৎসর্গ করতে পেরেছি?
পবিত্র কোরানে মহান আল্লাহপাক তাই সুরা আল ইমরানের ৩১নং আয়াতে বলেছেন- ‘ক্বুল ইনকুনতুম তুহিব্বুনাল্লাহ ফাত্তাবিউনি ইউবিবকুমুল্লাহ ওয়া ইয়াগফিরলাকুম জুনবাকুম ; ওয়াল্লাহু গাফুরুর রাহিম।’ অর্থ: ‘হে রাসুল আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তবে আমার অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং ক্ষমা করবেন। এবং আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’
বর্তমান সময়ে বিদেশী তথাকথিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বড় বড় ডিগ্রিধারী তথাকথিত স্কলারের নামে যে সব ব্যবসায়ী ফেতনাবাজরা বের হয়ে সরাসরি আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবিব রাসুলে করিম (স) এবং মাওলায়ে কায়েনাত মাওলাল মুমেনিন শেরে খোদা হযরত আলী (আ) এঁর নামে মিথ্যাচার করছে, সেই সব লোকের মাথায় টুপি-দাঁড়ি-জুব্বা মুখে কোরানের বিকৃত ব্যাখ্যায় হাজার হাজার সাধারণ মুসলমানরা আজ বিপথগামী আর ঈমানহারা হচ্ছে।
পবিত্র আল কোরানে পরিপূর্ণ নিষেধ থাকা সত্ত্বেও লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে এই সব ধর্ম ব্যবসায়ী ওয়াজকারীদের থেকে আমাদের নবী প্রেমিক-আহলে বাইত প্রেমিক অলি-আল্লাহ মুর্শেদ প্রেমিকদের ঈমান ও আকিদা রক্ষায় আজ যে কোন মূল্যে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতেই হবে।
এইসব খারেজি, এজিদী, ওহাবী, সালাফী ফেতনাবাজ মুহাম্মদী ইসলামের চিরশত্রুদের এখনই রূখে দিতে না পারলে কারবালার প্রান্তরে সর্বস্ব ত্যাগী মাওলা হুসাইন (আ) এর আত্মত্যাগে চিরভাস্বর মুহাম্মদী তথা হুসাইনী ইসলামের পবিত্র আত্মমুক্তির শান-মান, সুগন্ধ থেকে জসৎবাসী বঞ্চিত হবে।
তাই আসুন, মহামূল্যবান মানবজীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে তথা প্রকৃত মুসলমান হওযার পথে আল্লাহর রাসুল (স) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের প্রেমে নিজেদের উৎসর্গ করি। বিদায় হজ্বে তাই হয়রত মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ (স) বলে গেছেন, ‘হে মানবজাতি আমি তোমাদের মধ্যে দুইটি ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি। এর একটি আল্লাহর কোরান আর অপরটি আমার আহলে বাইত। এই দুইটিকে আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না।’
মহান রব আমাদের সামগ্রিক জীবনকে তাঁর কিতাব এবং প্রিয় নবী হযরত মুহামাদুর রাসুলাল্লাহর (স) প্রাণপ্রিয় আহলে বাইতের (আ) অনুসরণে আমাদের জীবন ও মৃত্যুকে তাঁর পথে কবুল করুন। পৃখিবীতে আগত অনাগত সকল সৃষ্টির কল্যাণ হোক।
………………………………………
ড. হাসান রাজা
লেখক ও গবেষক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়