ভবঘুরেকথা

“প্রণমি চরণে জগৎ শরণে
অনাদি কারণে আমি।
জগৎ পালক ব্রহ্মাণ্ড নায়ক
কলুষ হারক স্বামী।।
গুণময় বিভু অখিলের প্রভু
গুণে নাই কভু সীমা।
আমি অতি মূঢ় না জানি নিগূঢ়
চরণে চাহিনু ক্ষমা।।
কিবা কব জানি সেই কথা শুনি
ওহে গুণমনি হরি।
করিবে করুণা এ মূঢ় বাসনা
কেমনে ধারনা করি।।
বানী বাগেশ্বরী বর্ণনাতে হারি
পদ সার করি দাসী।
সূর্য চন্দ্র পুজে প্রদীপের সাজে
আপন গরজে আসি।।
চামর দোলায় পবন সদায়
সাগর ধোয়ায় পদ।
যত নদী নদ করি কলনাদ
ছুটে প্রেম গদ গদ।।
শাখে ডাকে পাখি তোমারে নিরখি
কুসুমের আঁখি ফুটে।
শিশিরের কণা হয়ে অশ্রু কণা
তোমার চরণে লুটে।।
অতল সলিলে প্রলয়ের জলে
ধরাকে রাখিলে ঢাকা।
ধরাকে জাগাতে মৎস রূপেতে
মেলিলে জলেতে পাখা।।
দশ অবতার এস বারবার
হরে ধরাভার সুখে।
দুষ্টেরে নাশিতে সাধুকে রাখিতে
আসিলে ধরার বুকে।।
অবতার যায় আসে পুনরায়
জীবে দিয়ে যায় শিক্ষা।
পূর্ণ অবতার হয় নাই আর
এই বারে হবে রক্ষা।।
পূর্ণানন্দ হরি সফলা নগরী
ক্ষীর সিন্ধু ছেড়ে এলে।
যশোবন্ত ঘরে পূর্ণার উদরে
নর রূপ ধারী হলে।।
প্রথম আবাদ ওহে হরিচাঁদ
ঘুচালে আপদ সবে।
দেবের বঞ্চিত দানব লাঞ্ছিত
ব্রহ্মার কাঙ্খিত ভাবে।।
ক্ষেত্র সু প্রস্তুত যশোবন্ত সুত
পেল অবধূত তোমা।
মিশিল তোমাতে এ বিশ্ব জগতে
নাহিক গুণেতে সীমা।।
হরি গুরুচাঁদ পূর্ণিমার চাঁদ
সুধার আস্বাদ দিলে।
তারিলে জগত জগতের নাথ
সবে তোমাগত চলে।।

পতিত যাহারা হয়ে সর্বহারা
বাদলের ধারা চোখে।
ডাকে দিবারাতি অগতির গতি
বেদনার ছবি মুখে।।
হয়ে কৃপাবন্ত ও হে প্রাণকান্ত
করিবারে শান্ত সবে।
অনাথ আতুর কান্দিল প্রচুর
আসিলে ঠাকুর ভবে।।
নিজে গৃহী সাজে গৃহীজন মাঝে
করে হরি রাজে লীলা।
মানুষের সাথে মিলিয়া সবাতে
কৃপাদণ্ড হাতে খেলা।।
সব নীতি দিয়ে গৃহীকে সাজায়ে
নিজে দেখাইয়ে দিলে।
পূর্ণ শিক্ষা লাগি ওহে সর্ব্বত্যাগী
গৃহধর্ম্ম ভোগী হলে।।
গুণে সীমা নাই নির্গুণ গোঁসাই
আমি বুঝি নাই তত্ত্ব।
জানে হীরামন গোলক লোচন
সঁপে দেহ মন মত্ত।।
কিবা কর খেলা অনন্ত মেখলা
ক্ষীরোদের বেলা ভূমে।
আনন্দে মাতিয়া ক্ষীরোদ আসিয়া
চরণে পড়িয়া চুমে।।
আকাশ বিচিত্র সাজিয়াছে ছত্র
নাহি কেহ মাত্র আর।
আপনা আপনি করেছ মেলানী
সৃষ্টি ছিনিমিনি সার।।
পলকে গড়িয়া পলকে ভাঙ্গিয়া
পলকে ধরিয়া বুকে।
ভাঙা গড়া খেলা কর নিত্য বেলা
বসিয়া একেলা সুখে।।
রূপ গুণহীন আপনাতে লীন
কারণ – বিহীন কান্ত।
ইচ্ছা – রস দিয়ে ব্রহ্মাণ্ড সৃজিয়ে
আপনা ছড়ায়ে শান্ত।।
জীব কুল যত পলে পলে কত
তোমাতে আগত দেখি।
জীব করে কর্ম্ম জীব কহে ধর্ম্ম
জীবে রাখে মর্ম্ম শিখি।।
তোমার বিকার সৃষ্টির আকার
তুমিত সার জানি।
যাহা কিছু হয় সকলি তোমায়
ও হে গুণময় গুণি।।
মোদের ব্রহ্মাণ্ড ক্ষুদ্র এক ভাণ্ড
কত যে ব্রাহ্মণ্ড আছে।
কেবা তাহা জানে বিভু তুমি বিনে
কেবা কোন খানে বাঁচে।।
তোমার কারণে বিবিধ বচনে
যতই রচনে লিখি।
কিছু নাহি হয় যাহা তাহা রয়
মনে ভাবি হায় একি?
গুণাতীত গুণী লোটায়ে ধরণী
করি জোড় পাণি বন্দি।
কোন কথা নাই জগৎ গোঁসাই
ভূমে লুটে তাই কাঁন্দি।।
যাহা ইচ্ছা কর অধম নফর
কাঁপে থর থর ভয়ে।
বিশ্বময় হরি নররূপ ধারী
রূপের মাধুরী লয়ে।।
নর জ্ঞান করি এত দিন ধরি
হয়ে অহংকারী সবে।
করিয়াছি হেলা চলে যায় বেলা
খেলেছি কু খেলা ভবে।।

অনাদির নাথ কোটী দণ্ডবৎ
কৃপা দৃষ্টি পাত কর।
ভুবন পালক দাস যে তারক
অজ্ঞান পাবক হর।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!