পুনরায় দশভুজা পূজারম্ভ
প্রভুর কনিষ্ঠ পুত্র গেল লোকান্তরে।
গৃহবাসী সবে তবে বলে অতঃপরে।।
দশভূজা পূজা মোরা করি পুনরায়।”
দেবী পূজা হ’লে তা’তে সর্ব্বসিদ্ধ হয়।।
পভু বলে ‘এই কার্য্য আমি না করিব।
মরণের ভয়ে শেষে দেবতা ডাকিব?”
গৃহবাসী তাহ সবে হ’ল ক্ষুন্ন মন।
পরে দেখ ঘটে সেথা অপূর্ব্ব-ঘটন।।
যামিনীর শেষ-যামে শয্যাত্যাগ করি।
প্রাঙ্গণে চলিছে প্রভু বলে হরি! হরি!।।
হেন কালে জীর্ণা দীনা রুগ্ন এক নারী।
প্রভুর সম্মুখে এল জোড়হস্ত করি।।
প্রভু কয় “এ কি দায়।তুই কি বা চা’স?
সবে’ যা’ সরে ‘যা’ কেন আমারে জ্বালাস?”
নারী বলে “দয়াময় করো’না ছলনা।
দেখ দেব আমি হই শিবের ললনা।।
তুমি না পূজিরে মোরে কেহ নাহি পূজে।’
পূজা-হীনা, জীর্ণ দীনা আছি ধরা-মাঝে।।
ঘরে ঘরে জনে জনে কত পূজা দেয়।
সঙ্গিনী পিচাশী যত সেই পূজা লয়।।
মেষ বলি, অজা বলি, করে জনে জনে।
রক্ত-মাখা পূজা আমি গ্রহণ করিনে।।
আমি’ত বৈষ্ণবী তাহা তুমি ভাল জান।
আমাকে বঞ্চিতা প্রভু কর আর কেন?
প্রকৃত পূজার তত্ত্ব কেহ নাহি জানে।
আমকে তুষিতে তাই অজা-রক্ত আনে।।
মোর ভোগে তাহা কভু করিনা গ্রহণ।
তাই দিয়ে পালি প্রভু পিশাচীর গণ।।
তব গৃহে পূজা হ’ত সাত্তক আচারে।
সেই পূজা লইতাম আনন্দ অন্তরে।।
সকলি জান’ত প্রভু কিবা বলি আর।
আজ্ঞা কর পূজা হোক এই গৃহ পর।।
শ্রীশশী, সুধন্য এরা ভাই দুইজন।
মম পুত্র বটে তারা এ-বুকের ধন।।
তাহারা পূজিবে দোঁহে তুমি রহ দুরে।
তোমাকে দেখিব আমি দু’নয়ন ভরে।।”
এত যদি মহাদেবী প্রভুকে কহিল।
কথা শুনি গুণমণি আনন্দে হাসিল।।
দেবীরে ডাকিয়া বলে “শুন গো ভবানী।
হইবে তোমার পূজা ইহা যাও জানি।।
তোমার বিনয় ঠেলি কি প্রাকরে?
রাখিলাম তব বাক্য আনন্দ অন্তরে।।”
অতঃপর কর সবে পূজা দিতে হয়।
দেবী নিজে পূজা লাগি করিল বিনয়।
তাহারে নিজে পূজা লাগি করিল বিনয়।
তাঁহারে বিমুখ করা উচিত না হয়।।”
মহা সমারোহে হ’ল পূজা অয়োজন।
পরম আনন্দে সবে হ’ল নিমগন।।
ভক্ত মধ্যে হরিবর কবি সরকার।
অন্য কবি ভাই তার নাম মনোহর।।
গান করে দুই ভাই কৃষ্ণ আলাপন।
শুনিয়া গানের পাল্লা সুখী সর্ব্বজন।।
পুনরায় বিজয়ায় হ’ল শান্তি-সভা।
ভক্ত মধ্যে পুনরায় পূজারম্ভ হ’ল।
‘হরিগুরুচাঁদ’ প্রীতে হরি হরি বল।।