ভবঘুরেকথা

দীননাথ দাস প্রসঙ্গে সারী শুক কথা।
পয়ার

হরিচাঁদ প্রিয় ভক্ত দীননাথ দাস।
নমঃশূদ্র কুলোদ্ভব ওঢ়াকাঁদি বাস।।
একদিন দীন আর তারক দু’জনা।
প্রভুর লীলার কথা করে আলোচনা।।
দীননাথ দাস বলে তারকের ঠাই।
স্বচক্ষে দেখিনু যাহা শুন তবে ভাই।।
একদিন হরিচাঁদ দয়াল আমার।
নূতন আশ্চর্য লীলা করিল প্রচার।।
রামধন গরু রাখে বাড়ীর পালানে।
দয়ারাম ঘাস কেটে দেয় গরু স্থানে।।
বাটীর পশ্চিমদিকে গরু রাখিতেছে।
হরিচাঁদ পথে বসি তাহা দেখিতেছে।।
দু’জনার প্রতি প্রভু অতি দয়াবান।
ধীরে ধীরে দু’জনার নিকটেতে যান।।
গোকুলের রাখালিয়া পূর্বভাব মনে।
গরু রাখিবারে বড় ইচ্ছা সর্বক্ষণে।।
দয়ারাম বলে প্রভু আর কোথা যাও।
হইয়াছে ঘাস কাটা হেথা বসি রও।।
ভরিবে গরুর পেট এই ঘাস খেলে।
বসিয়া থাকিলে গরু বেড়াইবে চরে।।
এস প্রভু তিনজন বসি এক ঠাই।
ইচ্ছায় চরুক গরু বসে দেখি তাই।।
বসিলেন হরিচাঁদ আর দয়ারাম।
রামধন বসিয়ে করেছে হরিনাম।।
কাটা ঘাস খেয়ে গরু বেড়ায় চরিয়ে।
দুই এক গরু যদি যায় বাহুড়িয়ে।।
কখন ফিরায় দয়ারাম রামধন।
প্রভু হরিচাঁদ উঠে ফিরায় কখন।।
হরিচাঁদ দুইজনে বলিলেন ডেকে।
দু’জনে রাখহ গরু এই স্থানে থেকে।।
আমি এই ফাঁকে গিয়ে আসি বেড়াইয়ে।
তিনজনে যাব শেষে একত্র হইয়ে।।
এত বলি যান প্রভু পশ্চিমাভিমুখে।
যাইতে যাইতে পথে দীননাথে দেখে।।
প্রভু বলে দীননাথ আয় মম সাথে।
যাইতেছি বেড়াইতে তোদের বাড়ীতে।।
তাহা শুনি দীনদাস সঙ্গেতে চলিল।
দীনবন্ধু সঙ্গে দীননাথ দাস গেল।।
দাসেদের বাটীর নিকটে আসিলেন।
বাটীর উত্তর পালানেতে বসিলেন।।
দীনদাস সঙ্গে মাত্র আর দীনবন্ধু।
দীনদাসে বলিলেন করুণার সিন্ধু।।
হিজলিকা বৃক্ষ তার তলায় বসিয়ে।
প্রভু বলে দীন আন তামাক সাজিয়ে।।
দ্রুতপদে দীনদাস বাড়ী মধ্যে যায়।
তামাক সাজিয়ে এনে দেখিবারে পায়।।
একটি শালিক পাখী বৃক্ষপরে ছিল।
আসিয়া প্রভুর পদে মাথা ছোঁয়াইল।।
যোগাসনে প্রভু তথা বসিয়া ছিলেন।
পদে পড়ি পাখীটি উরুতে বসিলেন।।
দীনদাস বলে একি পাখির সাহস।
না জানি ইহার মধ্যে আছে কোন রস।।
প্রভু বলে এ রস কৌতুক বুঝিবি কি।
ব্রজ রস পাত্র এ ব্রজের শুকপাখী।।
ব্রজে ছিল সারী শুক শালিক হ’য়েছে।
পূর্বের সাহসে মোর উরুতে বসেছে।।
এ ভাবে বসিবে কেন, না থাকিলে চেনা।
জনমে জনমে থাকে নয়নে নিশানা।।
তমালের ডালে ছিল কোকিলার মেলা।
সারী-শুক বকুলের ডালে করে খেলা।।
বৃন্দাবনে দেখিয়াছি এই সব লীলা।
এই সেই বৃন্দাবন তমালের তলা।।
গোকুলে জন্মিল কৃষ্ণ নন্দঘোষ ঘরে।
বৃন্দাবনে বাস করিলেন গিয়া পরে।।
মায়াপুরী জন্মে হরি শ্রীগৌরাঙ্গরূপে।
লীলা করে গুপ্ত বৃন্দাবন নবদ্বীপে।।
বুঝিয়া দেখিলে এই সেই সেই ভাব।
সফলাডাঙ্গায় ওঢ়াকাঁদি লীলা সব।।
সফলাডাঙ্গায় জন্ম ওঢ়াকাঁদি বাস।
তেমনি করেন লীলা দাদা কৃষ্ণদাস।।
তোর ভাল ভাগ্য ছিল যদি দেখেছিস।
অরসিক স্থানে নাহি প্রকাশ করিস।।
এবে আমি যাই ভাই গোধন চরাতে।
রামধন দয়ারামে রেখে আনু পথে।।
যখন উঠিল প্রভু পক্ষীরাজে উড়ি।
নাচিতে লাগিল প্রভু স্কন্ধপরে পড়ি।।
প্রভু বলে হইয়াছে আয় মম হাতে।
এত বলি প্রভু দাঁড়ালেন হাত পেতে।।
হস্তে পড়ি শালিক শ্রীমুখ পানে চায়।
পাখা উড়ু উড়ু মুখে মুখ দিতে যায়।।
শালিকের দু’নয়নে জল ধারা বয়।
পাখী হাতে করি হরি পথ চলি যায়।।
যখনে গেলেন প্রভু বাটীর পালানে।
প্রভু বলে পাখী তুই যারে নিজস্থানে।।
মানুষের শ্রেষ্ঠ পাখী বলে ভক্ত লোক।
শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত রচিল তারক।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!