বৈষ্ণব: পরমোধর্ম্ম: বৈষ্ণবে পরমোতপ:।
বৈষ্ণব: পরমারাধ্য কহে বৈষ্ণব: পরমোগুরু।।
বৈষ্ণব পরম ধর্ম্ম শাস্ত্রেতে বলয়।
বৈষ্ণব পরম তপ জানিহ নিশ্চয়।।
বৈষ্ণব পরমারাধ্য কহে সর্ব্বজনে।
বৈষ্ণব পরম গুরু এ তিন ভুবনে।।
বৈষ্ণব দেখিয়া যেই জাতি ভেদ করে।
তাহার সমান পাপী না দেখি সংসারে।।
সংসার নিস্তার হেতু বৈষ্ণব ঠাকুর।
প্রেমভঙ্গি দিয়া কৈল পাপ তাপ দূর।।
জীবের শরীরে কৃষ্ণ করেন বিহার।
যেই বৈষ্ণব সেই কৃষ্ণ জেনো আনিবার।।
কৃষ্ণ বৈষ্ণবেতে ভেদ তত্বাংশে আছয়।
বৈষ্ণব কৃষ্ণের নিত্য দাস সুনিশ্চয়।।
হেন বৈষ্ণবের সঙ্গ করিবে সদাই।
মহাসুখ পাবে, দু:খ দূরে যাবে তাই।।
অদোষ দরশি মোর বৈষ্ণব ঠাকুর।
সবারে সমান ভাব বচন মধুর।।
কাম ক্রোধ লোভ আদি রিপু সমুদয়।
বৈষ্ণবশরীরে তাই কভু না থাকায়।।
যেই জন হরিভক্ত ধরায় উপর।
বিষ্ণুকে জানিতে পারে অন্তর ভিতর।।
তাহারে বৈষ্ণব বলি শাস্ত্রের বচন।
জিতেন্দ্রিয় সেই জন কল্যাণ ভাজন।
কামাদি দারুণ রিপু করি পরিহার।
কৃষ্ণময় দেখে সেই এ ভব সংসার।।
যারা দেখে দুই চক্ষে সব কৃষ্ণময়।
কৃষ্ণবিনা নেত্রে নাহি নিপতিত হয়।।
প্রকৃত বৈষ্ণব সেই অবনী ভিতরে।
জগতের সর্ব্বলোক তারে সেবা করে।।
নিত্য সে কৃষ্ণের পদে করয়ে ভাবন।
অন্য চিন্তা অন্তরেতে না আসে কখন।।
কৃষ্ণ নাম গান করে মুখে অনুক্ষণ।
শুনিলে কৃষ্ণের কথা পুলকে মগন।।
শয়নে স্বপনে সদা দেখেন শ্রীহরি।
কৃষ্ণ নাম চিনতে সদা দিবস শর্ব্বরী।।
লব্ধবস্তু শ্রীকৃষ্ণেরে করে নিবেদন।
কৃষ্ণের পদেতে করে আত্মসমর্পণ।।
বঞ্চনা নাহিক হৃদে নাহি মিথ্যা কর।
কৃষ্ণ পদদ্বয়ে মন অনুক্ষণ রয়।।
গুরুদত্ত কৃষ্ণমন্ত্র সদাকাল জপে।
কি ফল তখন তার অন্য তপে।।
শ্রীহরিবাসরে করে নিশি জাগরণ।
হরিব্রত করে সদা হয়ে একজন।।
একাদশী উপবাস করে যেই নর।
হরিনাম গান করে করি সমাদর।।
এইরূপ গুণ যার আছে কলেবরে।
প্রকৃত বৈষ্ণব সেই বিদিত সংসারে।।
বৈষ্ণব হইয়া মাত্র লভিলে জনম।
তার বংশে পাপ কভু না হয় গঠন।
প্রকৃত বৈষ্ণব যদি করয়ে দর্শন।
মহাপাপী মুক্ত হয় শাস্ত্রের বচন।।
সদা চিন্তে হৃদে কৃষ্ণ জপে কৃষ্ণনাম।
বদন কমলে কৃষ্ণ জপে অবিরাম।।
প্রকৃত বৈষ্ণব জনে করিলে স্পর্শন।
অথবা বৈষ্ণবে করে সদা দরশন।।
মহাপাপী পাপ আদি হয় বিনাশ।
অনন্তকালে গতি তার গোলক ভূবন।।
সেই জন বৈষ্ণব হয় মানব জনমে।
ব্রজবাসী পদরেণু লভে যেই জনে।।
তীর্থে তীর্থে বৈষ্ণবেরা করিবেক স্নান।
ভবপারে অবহেলে পাবে পরিত্রাণ।।
প্রদীপ্ত অনলে পোড়ে যথা কাষ্ঠচয়।
বৈষ্ণব দর্শনে সেরূপ পাতায় নাশয়।।
যেই জন বৈষ্ণবেরে অবহেলা করে।
মহাপাপী বলি তাকে জানিবে সংসারে।।
বৈষ্ণবেতে বিষ্ণুদেহে ভেদাভেদ নাই।
বৈষ্ণব নিন্দাতে তার নরকেতে ঠাঁই।।
রাশি রাশি মহাপুণ্য করি উপার্জ্জন।
বৈষ্ণবের নিন্দা করে সেই অভাজন।।
চন্দ্র সূর্য্য ভবার্ণবে যতদিন রয়।
তাবৎ নরকে বাস জানিবে নিশ্চয়।।
বৈষ্ণব জনেরে পুজে যেই সাধুজন।
সংসারেতে সেই শ্রেষ্ঠ বলে সর্ব্বজন।
(তথাহি ব্রক্ষ্মবৈবর্ত্তপুরাণম্)
বৈষ্ণব দেখিয়া যেবা জাতি বুদ্ধি করে।
তাহার সমান পাপী নাহিক সংসারে।।
নরকে তাহার বাস জানিবে নিশ্চয়।
ফুকারি ফুকরি ইহা সর্ব্বশাস্ত্রে।
(তথাহি বিষ্ণুপুরাণম্)
……………………………………..
তত্ত্বরসামৃত জ্ঞানমঞ্জরী
-শ্রীশ্রী চরণ দাস