ব্রজনাথের দ্বারা মৃত গরুর জীবন দান।
পয়ার।
ব্রজা পাগলা ব্রজা পাগলা বলে হ’ল খ্যাতি।
হরিচাঁদ হয়েছে সে ব্রজা পাগলার সাথী।।
সংসারী সংসার কাজ কিছুই করে না।
কোথাও বসিলে আর উঠিতে চাহে না।।
ব্রজনাথ বিশ্বনাথ আর নাটু হরিচাঁদ।
কয়জনে পাতিয়াছে পীরিতির ফাঁদ।।
কভু বৃক্ষশাখামূলে কভু বৃক্ষমূলে।
কভু গোচারণ মাঠে কভু ভূমিতলে।।
বসিয়া থাকেন কয় প্রভু একত্তর।
কোন কোন দিন গিয়া খায় কারু ঘর।।
কেহ কেহ ডেকে লয় সেবার জন্যেতে।
বিশার জননী দেন প্রায় সময় খেতে।।
বেশী থাকে বিশাইর মাতার কাছেতে।
মনে হ’লে কোন কাজ করে তৎক্ষণাতে।।
তিনজনে কভু যদি কোন কাজ ধরে।
দশ কিষাণের কাজ করে দিতে পারে।।
কোনদিন কার্য নাহি করে দিনভরি।
বড় কাজ করে যদি দণ্ড দুই চারি।।
তাহাতে যে কার্য করে হেন জ্ঞান হয়।
দশ দিনের কার্য করে মুহূর্ত সময়।।
বিশ্বনাথ বাড়ী কভু নাটুদের বাড়ী।
কোন দিন কার্য প্রভু করে নিজ বাড়ী।।
অধিকাংশ কাজ করে বিশেদের বাড়ী।
অল্প অল্প কাজ করে নাটুদের বাড়ী।।
মধ্যমাংশ কাজ করে প্রভু নিজালয়।
হয় করে, নয় করে হরিগুণ গায়।।
কোনদিন বসি প্রভু ঘুড়ি উড়াইত।
নির্মিয়া মানুষ ঘুড়ি উড়াইয়া দিত।।
প্রভু বলে ওরে বিশে দেখ তোরা চেয়ে।
এইভাবে গুণ ধরি দিয়াছি উড়া’য়ে।।
ব্রজনাথ বিশে আর নাটুয়া পাগল।
তাহা দেখি আনন্দে বলিত হরিবোল।।
একদিন তিনজন প্রেমানন্দভরে।
পতিত ভূমেতে ব’সে বাটীর উত্তরে।।
ঠাকুরের নিজের পালের শ্রেষ্ঠ গরু।
ব্যাধি হ’য়ে, হইয়াছি মরিবার শুরু।।
ক্রমেই বাড়িল ব্যাধি গরু লালাইয়া।
নাসারন্ধ্রে শ্লেষ্মা উঠে গিয়াছে পড়িয়া।।
নোয়া কর্তা সেজ কর্তা গরুর নিকটে।
গরু ল’য়ে পড়েছেন বিষম সংকটে।।
বড় কর্তা ছোট কর্তা কহে উভয়েরে।
কেন বসিয়াছ মরা গরু কোলে করে।।
পেটফুলে উঠিয়াছে পা হ’য়েছে টান।
দাঁতে দাঁতে লেগে গেছে উত্তার নয়ন।।
বাঁচিবে না ঐ গরু প্রায় মরে গেছে।
উঠে এস থাক কেন বলদের কাছে।।
এত শুনি উঠে এল নিরানন্দ চিত।
হেনকালে কয় প্রভু এসে উপস্থিত।।
বসিয়াছে তিন প্রভু দিবা অবশেষ।
বড়কর্তা কৃষ্ণদাস রাগে করে দ্বেষ।।
তিন জন ঠাকুরালী করিয়া বেড়াও।
কি গুণেতে বসে বসে এত ভাত খাও।।
ঠাকুর কোলা’য়ে এত ভাত খেয়ে ফের।
গোগৃহে মরেছে গরু রক্ষা গিয়ে কর।।
বেড়ায়ে খেয়ে খেয়ে করিলি পয়মাল।
এই গরু বাঁচিলে বুঝিব ঠাকুরাল।।
বিশারে বাঁচালি বলে ওরে হরিদাস।
এই গরু বাঁচাইয়া খাওয়া দেখি ঘাস।।
বড় সাধু ব্রজা তুই পাগল কোলা’স।
হরির সঙ্গেতে তুই অনেক বেড়াস।।
এই গরু আ’জ যদি না পার বাঁচাতে।
তা’হলে তোদের আর নাহি দেব খেতে।।
এত শুনি ব্রজ চাহে ঠাকুরের ভিতে।
ঠাকুর ব্রজকে ব’লে দিলেন ইঙ্গিতে।।
যারে ব্রজ আমি তোরে দেই অনুমতি।
ওঠ বলি বলদেরে মার গিয়া লাথি।।
হুঙ্কার করিয়া ব্রজ করি হরিধ্বনি।
বলদেরে লাথি গিয়া মারিল অমনি।।
ওঠ ওঠ ওরে গরু র’লি কেন শুয়ে।
অমনি উঠিয়া গরু গেল দৌড়াইয়ে।।
যে পতিত জমিতে ঠাকুর বসে ছিল।
সে জমিতে গিয়া ঘাস খাইতে লাগিল।।
বড়কর্তা বলে ওরে ব্রজ হরিদাস।
অপরাধী হইয়াছি তোমাদের পাশ।।
আজ হতে চিনিলাম তোমা সবাকারে।
এত বলি বড় কর্তা অনুনয় করে।।
রচিল তারকচন্দ্র মহানন্দ ভাষে।
বড়কর্তা সুখনীরে মহানন্দে ভাসে।।