ভবঘুরেকথা
গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু চৈতন্য নিমাই বৈষ্ণব

গুকারশ্চান্ধকার: স্যাৎ রুকারস্তেজ উচ্যতে।
অজ্ঞানধ্ব সকং ব্রহ্ম গুরুদেব ন সংশয়:।।

‘গু’ শব্দে অন্ধকার ‘রু’ শব্দেতে তেজ।
অজ্ঞান তিমির নাশ করে ব্রহ্ম তেজ।।
সে কারণে গুরু পদে করিয়া বন্ধন।
কর্ম্ম জ্ঞান ফল কিছু করিব বর্ণন।।
শুন ভাই সাধুজন কহি সার কথা।
শ্রীকৃষ্ণ ভজন বিনা কর্ম্ম সব বৃথা।।
কর্ম্মজ্ঞানে বদ্ধজীব করে নানা কর্ম্ম।
জীবন্মুক্তি লাগি তারা নাহি করে কর্ম্ম।।
কর্ম্মজ্ঞানে জন্ম মৃত্যু না হয় বারণ।
অবশ্য চুরাশী লক্ষ করায় ভ্রমণ।।
কর্ম্ম মার্গের ফলভোগ ফুরাইয়া গেলে।
গর্ভাদি যন্ত্রণা পুন: ভোগয়ে সকলে।।
কর্ম্মমার্গ কথা কহি শুন সবিস্তার।
বিধিকর্ম্ম কামনাদি কর্ম্ম নাম তার।।
জপ তপ যাগ যজ্ঞ তীর্থ পথে রত।
ব্রত পূজা আচরণ করে স্মৃতিমত।।
কর্ম্ম ফলে স্বর্গ আদি শ্রেষ্ঠ নানা ভোগে।
কত মত সুখ-শান্তি মিলে কর্ম্ম যোগে।।
কর্ম্ম অনুরূপ ফল পায় সর্ব্বজন।
অপকর্ম্ম করিলে পাপ নহে নিবারণ।।
শাস্ত্রমত আচরিতে পারে কয় জনা।
অপকর্ম্ম করি কত পায় বিড়ম্বনা।।
দেবপূজা যাগ যজ্ঞে প্রাণীবধ করে।
প্রাণীবধ পাপ তারে অচিরাতে ধরে।।
বিধিমত পূজা নাহি করে কলিকালে।
এই জন্য কত পাপ হয় অবহেলে।।
কোন কর্ম্মে কিবা ফল কিবা গূঢ় তত্ত্ব।
নিত্য কর্ম বলি যাহা কহি কার তথ্য।।
সন্ধ্যা পূজা অবশ্যই করিতে উচিত।
তাতে আত্মশুদ্ধি চিত্ত হইবে বিহিত।।

কিন্তু সন্ধ্যা না করিলে হয় পাপোদয়।
নানা মত পাপ আদি দেহে উপজয়।।
প্রায়শ্চিত্ত কর্ম্ম করি পাপকে বিনাশে।
পুনরায় পাপ করে থাকি মায়া পাশে।।
কি ফল হইল বল প্রায়শ্চিত্ত করি।
কৃষ্ণগত চিত্ত হলে পাপ ভয়ে তরি।।
কৃষ্ণে সমর্পিয়া যদি কেহ কর্ম্ম করে।
সে কর্ম্মের ফল কিছু দোষ নাহি ধরে।
তীর্থ ভ্রমণের ফল করি যে বর্ণন।
মনযোগ দিয়া সবে করহ শ্রবণ।।
ভার্ষ্যা, পুত্র, পরিবার সকল ছাড়িয়া।
তীর্থে তীর্থে কত লোক বেড়ায় ভ্রমিয়া।।
শুদ্ধ অনুরাগে কেহ তীর্থ স্থানে মরে।
উত্তম ধামেতে যায় দিব্য দেহ ধরে।
ইন্দ্রিয় সফল হয় তীর্থ পর্যটনে।
দিব্য দেহ সেই ফলে ধরে সেই জনে।।
জনম মরণ তাহে বারণ না হল।
কষ্টের জনম এই বৃথা চলি গেল।।
প্রকৃতি গীতায় কহে দেব ত্রিলোচন।
শুনয়ে পার্বতী তীর্থ ভ্রমণ কথন।।

……………………………………..
তত্ত্বরসামৃত জ্ঞানমঞ্জরী
-শ্রীশ্রী চরণ দাস

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!