ভবিষ্যৎ দর্শন
ভক্ত গৃহে হরিচাঁদ সাঙ্গ করি প্রেমাহ্লাদ
সেই দিনে ওড়াকান্দী ধামে ফিরি এল।
নামেতে ভবানী বুড়ি নড়াইল তার বাড়ী
প্রভু সঙ্গে শ্রীধামেতে উপনীত হ’ল।।
ভক্তি মতি অতিশয় তাঁর গুণে বাধ্য রয়
হরিচাঁদ প্রভু মোর ক্ষীরোদ ঈশ্বর।
মনোগত বহুকথা ভবানী বলিত তথা
ভক্তি গুণে প্রভু করে বাঞ্ছা পূর্ণ তাঁর।।
যেদিন আসিল ধামে যামিনির শেষ যামে
প্রভু পদ কাছে বসি করে পদ সেবা।
কি জানি কি ভাবি মনে চাহিয়া প্রভুর পানে
বলে “এক কথা মোর মনে ওঠে বাবা।।
তোমার সোনার ধাম ধাম মধ্যে সর্বোত্তম
শিব লোক ব্রহ্ম লোক ধন্য সব হতে।
এমন পবিত্র ধামে তোমার পবিত্র নামে
কবে বিশ্ববাসী আসি মাতিবে নামেতে।।
আমার যে ইচ্ছা হয় শুন ওহে দয়াময়
এই ধামে হত যদি ধর্ম্ম মহামেলা।
দলে দলে সাধুগণ করে যদি আগমন
নাম রসে মেতে সবে করে প্রেম খেলা।।
চারিদিকে শুনি কত মেলা মিলে শত শত
ধর্ম মেলা তার মধ্যে মিলে নানা দেশে।
সবা হতে উচ্চভাব তোমার মধুর ভাব
হেথা কেন মিলালেনা মেলা সবিশেষে”।।
ভবানির কথা শুনি ভবেশের শিরোমণি
কৃপা করি কহিলেন বাক্য সুমধুর।
“শুন শুন মা ভবানী তব ইচ্ছা আমি জানি
পূরা’ব তোমার ইচ্ছা চিন্তা কর দূর।।
চল বর্হিবাটী যাই চেয় দেখ রাত্রি নাই
প্রভাতের পূর্বে তুমি দেখিবে স্বচক্ষে।
ভবিষ্যতে এই ধামে যে মেলা মিলিবে ক্রমে
সেই দৃশ্য দেখ তুমি ভক্তগণ পক্ষে।।
ইহা কেহ দেখে নাই কার কাছে কহি নাই
নিজ কন্যা বলি তোমা এ দৃশ্য দেখাই।
কোথা কিছু না বলিবে সব গোপনে রাখিবে
আমি গেলে বল সবে বাধা কিছু নাই।।
এত বলি দ্রুত গতি ক্ষীরোদ বাসিনী পতি
ভবানীকে সঙ্গে করি প্রাঙ্গণে আসিল।
পদ্ম হস্ত চক্ষে দিয়ে ভবানিকে সম্বোধিয়ে
বলে ‘কন্যা চেয় দেখ কিবা দৃশ্য হল”।।
পদ্ম স্পর্শ পেয়ে চোখে ভবানী চাহিয়া দেখে
ওড়াকান্দী যেন আর ওড়াকান্দী নাই।
উত্তাল তরঙ্গ প্রায় চতুর্দিকে শব্দ হয়
অগণন নরগণ জুড়ি সর্ব ঠাঁই।।
উন্নত ইষ্ট কালয় শ্রীধাম জুড়িয়া রয়
হ্রদের আকারে দেখে তড়াগ নিচয়।
শ্রী পুরীর পুরোভাগে অমল ধবল রাগে
সুউচ্চ মন্দির শীর্ষ দাঁড়াইয়া রয়।।
লোহিত পতাকা উড়ে মন্দিরের শীর্ষ চূড়ে
শঙ্খ শিঙ্গা ডঙ্কা কাংশ বাজে হুহুঙ্কারে।
অসংখ্য মতুয়া ভক্ত নামে গানে প্রেমে মত্ত
বাহু তুলি নৃত্য করে মধুর ঝঙ্কারে।।
যত দূর দৃষ্টি যায় লোকারণ্য ময় ময়
চলে ছুটে বালবৃদ্ধ যুবক যুবতী।
নরস্রোত অবিরাম চলে ওড়াকান্দী ধাম
কন্ঠে কন্ঠে ওঠে ধ্বনি হরিনাম গীতি।।
শ্রীধামের পাদ মূলে ক্রোশ জুড়ি সর্বস্থলে
অসংখ্য দোকানী বসে দোকান খুলিয়া।
যাহা চাই তাহা পাই “নাই” কথা মোটে নাই
পৃথিবী এনেছে যেন উজার করিয়া।।
খাদ্য দ্রব্য বাদ্য দ্রব্য বসন ভূষণ দ্রব্য
খেলা ধুলা দ্রব্য কত রাখে সাজাইয়া।
ব্রতচারী মঠাচারী দলে দলে সারি সারি
গলি গলি ভিক্ষা করে খোল বাজাইয়া।।
মিলেছে মোহন মেলা সিংহ ব্যাঘ্র জন্তু খেলা
দলে দলে তাবু ফেলি করে প্রদর্শন।
বাজীকর জুয়াচোর লোভী, দ্বেষী আর চোর
মেলাতে নাহিক স্থান সব অদর্শন।।
নাহি কোন দরাদরি এক বাক্য রাখে ধরি
“জয় হরিচাঁদ” ধ্বনি সাথে সাথে তার।
শ্রী হরির প্রেমের খেলা আসে যত দেল খোলা
মন খাঁটি রেখে সবে করিছে বাজার।।
শাসন লাগেনা তথা আপনি নোয়ায় মাথা
কে যেন আড়ালে থাকি সকলে চালায়।
অধিকার খর্ব করি যম এসে বলে হরি
হরিভক্ত পদ ধুলি মাখে সর্ব গায়।।
শ্রীধাম প্রাঙ্গণ পরে অবিরাম উচ্চৈঃস্বরে
হরি বলি ভক্ত দলে ধুলিতে গড়ায়।
ভুলি তৃষ্ণা ভুলি ক্ষুধা নয়নের জলে কাঁদা
শ্রীধামের ধুলি তুলি ভক্তে মাখে গায়।।
ভাসিয়া নয়ন জলে অগনিত বামাদলে
হুলুধ্বনি দেয় সবে রহিয়া রহিয়া।
সবার অলক্ষ্যে থাকি করুণ কোমল আঁখি
ভক্তে দেখে শান্তি মাতা চাহিয়া চাহিয়া।।
শ্রী নাট মন্দির ঘরে রত্ন সিংহাসন পরে
পবিত্র আসন এক করিছে বিস্তার।
মনে হয় কোন রাজা শক্তিমন্ত মহাতেজা
তেঁহ আসি বসিবেন আসন উপর।।
সকলি আশ্চর্য গণি জ্ঞান হারা সে ভবানী
দ্রুত পদে ছুটী চলে বাড়ীর ভিতরে।
পথে দেখে আগুয়ান মহাপ্রভু গুরুচাঁন
আনন্দে মাতিয়া দেবী বলিল তাঁহারে।।
“ওরে দাদা এস ছুটে অপূর্ব ঘটনা ঘটে
বাবার দয়াতে দেখ ওড়াকান্দী পুরে।
বড় দুঃখ মোর মনে তত্ত্ব কেহ নাহি জানে
তুমি মাত্র যোগ্য দেখি জগতের পরে।।
দুর্ভাগা জগত বাসী দেখিল না কেহ আসি
কোটি স্বর্গ আছে মিশি এই পুণ্য ধামে।
যক্ষ রক্ষ দেবগণ আসিয়াছে অগণন
সকলে মেতেছে আজি “হরিচাঁদ” নামে।।
চল চল শীঘ্র করি কি খেলা খেলিছে হরি
দেখিবারে চাও যদি বিলম্ব না কর।
মিলেছে প্রেমের মেলা মর্তে দেখ স্বর্গ খোলা
বাবার চরণ ছুঁলে দেখিবারে পার”।।
ভবানীর কথা শুনি গুরুচাঁদ গুণমনি
ত্বরিতে চলিল যথা হরিচাঁদ বসে।
শ্রীপদে প্রণত হয়ে পদধূলি শিরে নিয়ে
কর জোড়ে দাঁড়াইল পিতৃপার্শ্বে এসে।।
নয়ন না পালটিতে দেখে প্রভু চারিভিতে
অভূত অপূর্ব যত মহা দৃশ্যাবলী।
অজানা অচেনা যেন মনে হয় অনুমান
মর্ত্তে ছাড়ি স্বর্গ হ’তে আর উর্দ্ধলোকে।
মিলিছে বিপুল মেলা কি যেন অনন্ত খেলা
জয় জয় ধ্বনি শুধু শুধু চারিদিকে।।
অপলক দৃষ্টি মেলি গুরুচাঁদ মহাবলী
অভূত অপূর্ব্ব লীলা দেখে দাঁড়াইয়া।
মুখচন্দে কথা নাই নয়নে পলক নাই
দেখিছে পিতার লীলা নয়ন ভরিয়া।।
দেশ কাল পাত্র মাত্র মনে কিছু নাহি মাত্র
একাকী চলিছে যেন অকূল সাগরে।
জ্যোতিষ্মান সূর্য প্রায় হরিচাঁদ শোভা পায়
তাঁহে লক্ষ্য করি সবে ভাসে প্রেম নীরে।।
দেখিলা চৌদিক হ’তে সবে পুষ্পাঞ্জলি হাতে
নরাকারে জ্যোতির্ম্ময় পুরুষ রমণী।
গললগ্নী কৃতবাসে আসিয়া শ্রী হরির পাশে
পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে পদে লোটায় ধরণী।।
করজোরে করে স্তব দেব দেবী সেই সব
হরিচাঁদ প্রতি চাহে সজল নয়নে।
পরে গুরুচাঁদ প্রতি করিয়া ভূমিতে নতি
মন্দ গতি চলে সবে গগনের পানে।।
দীর্ঘ শ্মশ্রু দীর্ঘ কেশ পুণ্য ময় শুদ্ধ বেশ
মুনি ঋষি এল সবে পতাকা বহিয়া।
সবে করে হরিধ্বনি কাঁপে যেন ধরারাণী
মতুয়ার বেশে সবে আইল ধাইয়া।।
বজ্র কণ্ঠে করে নাম সর্ব দেহে ঝড়ে ঘাম
লক্ষ্য মাত্র প্রাণারাম হরি গুণমণি।
রামাগণ বামা কণ্ঠে হুলু দেয় দণ্ডে দণ্ডে
কিবা শুনি মধুমাখা প্রেমময় ধ্বনি।।
অশ্ব, গজ, শত শত সংখ্যা তার বলি কত
রাজ তুল্য কত নর এসেছে মেলাতে।
অসংখ্য হেরি জনতা নাহি মুখে বাহ্য কথা
সবে ব্যাকুলিত যেন শ্রী হরি দেখিতে।।
শ্রী নাট মন্দির ঘরে রহিয়াছে থরে থরে
অসংখ্য সারিতে কত বিবিধ আসন।
সজ্জন পণ্ডিত যত যার যার মনঃপুত
স্থানে বসি করিয়াছে আসন গ্রহণ।।
মধ্য সিংহাসন খানি শুন্য কেন নাহি জানি
রাজর্ষি বুঝিবা কেহ বসিবে আপনি।
এই কথা মনে হয় গুরুচাঁদ ডাকি কয়
“এই মর্ম কথা পিতা বল মোরে শুনি।।
শুন্য কেন সিংহাসন বসিবেন কোন জন
সেই জন এবে কোথা জানিবারে চাই।
কেবা সেই ভাগ্যবান জানিতে ব্যাকুল প্রাণ
তাঁরে দেখে মনো সুখে নয়ন জুড়াই।।
অনন্ত অসীম লীলা তোমার প্রেমের খেলা
তব দয়া গুণে আজি দেখিলাম চোখে।
এ দৃশ্য কেন দেখা’লে মোরে কিবা শিক্ষা দিলে
দয়া করি বল পিতঃ আপনার মুখে।।
এ মেলা মিলিবে কোথা মিলিছে কি মিলিবে তা
সেই তত্ত্ব আমি কিছু নাহি পাই দিশা।
কে মিলাবে এই মেলা কোথা হবে এই খেলা
এ মেলা দেখিতে মোর মনে বড় আশা।।
বুঝিলাম অনুমানে বসিবে যে সিংহাসনে
সে জন মিলাবে এই ধর্ম মহামেলা।
এ দৃশ্য যদি দেখালে সে জন কোথা রাখিলে
তাঁরে নাহি দেখি শুধু দেখি তাঁর খেলা।।
পুনঃ ভাবি নিজ মনে অই দিব্য সিংহাসনে
তোমাক বসালে সাজে অতি মনোহর।
যথা যোগ্য কার্য হয় মনোব্যাথা দূরে যায়
রাজ রাজেশ্বর তুমি চারু কলেবর।।
নিবেদন শুনি কানে চাহিয়া পুত্রের পানে
মৃদু হাসে রসময় রস সিন্ধু রাজ।
ললিত ঝঙ্কার তুলি ভেদ করি মর্মস্থলী
কহে কথা যেন গান গাহে পিক রাজ।।
“শুন হে গুরু চরণ প্রাণ তুল্য প্রাণধন
তোমাতে বড়ই প্রীত আছি চিরকাল।
দেখিলে যে ধর্ম মেলা হেথা হবে সেই মেলা
সিংহাসনে রবে তুমি দেব মহাকাল।।
“আত্মা বৈ জায়তে পুত্র” এই জান তার সুত্র
তব মাঝে মোর লীলা হবে পরিপূর্ণ।
ভবানীর ভক্তিগুণে ভবিষ্যতে টেনে এনে
কাল ব্যাবধান আজি করিয়াছি চুর্ণ।।
এই ওড়াকান্দী ধামে মম নামে তব নামে
ধর্ম মহামেলা হবে অভূত অপূর্ব।
ধর্ম সিংহাসনে বসি তুমি হবে পূর্ণ শশী
ক্ষুদ্র ধর্ম তারাবৎ সবে হবে খর্ব।।
শুনেছ জননী ঠাঁই তাহা বুঝি মনে নাই
যাহ হবে ভবিষ্যতে তা আজি দেখিলে।
সংযত নয়ন মনে যা’ দেখিলে এই খানে
সকলি ফলিবে তবে এভাব রাখিলে।।
এই কথা যবে কয় সে দৃশ্য লুকায়ে যায়
মহাভাবে গুরুচাঁদ চরণে পড়িল।
বলে “অনাদির আদি এ দৃশ্য দেখালে যদি
মনোভ্রান্তি আজি হ’তে আমারে ছাড়িল।।
আমি ত নিমিত্ত মাত্র তব হাতে রহে সূত্র
তাহে বান্ধা স্বর্গ মত্ত্য যতেক মণ্ডল।
যাহারে যে কথা কও যে ভাবে যারে নাচাও
সবে নাচে তব হাতে তোমারি সকল।।
কে বুঝে তোমার তত্ত্ব তুমি যে পরম তত্ত্ব
তব প্রেমে হ’য়ে মত্ত ছুটেছে জগত।
করণ-কারণ তুমি স্থাবর জঙ্গম ভূমি
যাহা কিছু দেখি আমি তোমার সৃজিত।।
অসীম অধর তুমি তুমি প্রভু তুমি স্বামী
যাহা কিছু পাই আমি সকলি অপূর্ণ।
কে পারে জানিতে তোমা কেবা পায় তব সীমা
তোমারে বর্ণিতে পারে নাহি হেন বর্ণ।।
শুনিয়াছি কুরুক্ষেত্রে চাহিয়া করুণ নেত্রে
তোমার কৃপার পাত্র পাণ্ডব অর্জ্জুনে।
দেখাইলে বিশ্ব রূপ বিশ্ব জোড়া অপরূপ
দেখিয়া অপূর্ব্ব রূপ পড়িল চরণে।।
ভবিষ্যৎ দেখা ছলে সেই রূপ দেখাইলে
কত দয়া প্রকাশিলে ও হে বিশ্বনাথ।
কি আর বলিব তাতঃ পদে কোটি দণ্ডবৎ
আমি তব পদানত কর আত্মসাৎ।।
যে দয়া দেখালে মোরে এহেন রূপ সাগরে
সেই দয়া দয়া করে রাখ মোর শিরে।
তব দয়া আছে মোরে কায় মনো বাক্য ঘিরে
এ চিন্তা অন্তরে যেন রহে সদাকারে।।
আমি কিছু নাহি চাই যাহা ইচ্ছা কর সাঞী
তোমা ছাড়া কিছু নাই বুঝিনু অন্তরে।
যাহা কর ইচ্ছাময় সেই ইচ্ছা পূর্ণ হয়
লোকে করে লোকে কয় মোহের আন্ধারে।।
অতুল অনন্ত স্বামী পিতা তুমি মাতা তুমি
কিবা নাহি নহ তুমি তুমি ত সকল।
মাটির মায়াতে পড়ি তোমাতে সম্বন্ধ গড়ি
আসল সম্বন্ধ ছাড়ি করি কোলাহল।।
এ মায়া প্রপঞ্চ পরে রয়েছি মায়াতে ঘিরে
তোমাকে না দেখি প্রভু দৃষ্টি নাহি চোখে।
দয়া সু দর্শন দিয়ে মায়া ধাঁধা ঘুচাইয়ে
নয়নে আলোক দিয়ে তরাও আমাকে।।
পুত্র মুখে স্তব শুনি ক্ষীরোদের পূর্ণ মনি
বলে “শোনরে ভবানী! বলি তোর ঠাঁই।
নিজ চোখে যা দেখিলি নিজ কানে যা শুনিলি
আজ্ঞা বিনা প্রকাশিলে তোর রক্ষা নাই।।
শুনিয়া প্রভুর বাণী কহে বাণী সে ভবাণী
“শোন বাবা, হাবা মেয়ে আমি মোটে নই।
মরনের কিবা ভয় পিতা যার মৃত্যুঞ্জয়
মরণে করিনা ভয় যদি কন্যা হই।।
তা’তে কিবা শঙ্কা করি তুমিত মারিবে হরি
সেই মরা বাঞ্ছা করি সেই মরা চাই।
এত দয়া মোর পরে হ’ল বল কি প্রকারে
এত দয়া পেতে মোর কোন সাধ্য নাই।।
এই কথা ঘরে ঘরে নিশ্চয় বলিব জোরে
হাটে, ঘাটে, মাঠে পথে সবারে বলিব।
বলা যবে শেষ হয় হে আমার দয়াময়
তোমার চরণে আসি আপনি মরিব।।
ওরে বাবা শোন কথা মরা অতি তুচ্ছ কথা
মরণের ভয় আমি মোটে পাই নাই।
দিবা রাত্রি ভয় মনে যদি কোন মন্দ ক্ষণে
জীবনে বাঁচিয়া থেকে তোমা ভুলে যাই।।
সেই ভাবে এ জীবনে বাঁচিয়া যেন মরিনে
এছাড়া চাহিনে কিছু তোমার চরণে।
রাখ মার যাহা কর আমি কি বলিব তার
তুমি প্রভু প্রাণেশ্বর হৃদয় আসনে”।।
ভবানীর বাণী শুনি ভবানীর শিরোমনি
বহু প্রীতি মনে বলে উভয়ে ডাকিয়া।
“মহাজন রীতি এই এ সব বলিতে নেই
আমি বলিয়াছি তাই রাখিতে ঢাকিয়া।।
যখনে সময় হবে তখনে জানিবে সবে
এ সময় এই সব বলে কার্য নাই।
নিশি দেখ হল ভোর দিকে দিকে ওঠে সোর
দোঁহে হেথা হতে যাও জাগিছে সবাই।।
হরি আজ্ঞা অনুসারে দোঁহে গেল স্থানান্তরে
প্রভু হরিচাঁদ তবে উঠিয়া দাঁড়ায়।
কি জানি কি মনে ভাবি পূর্ণতার পূর্ণ ছবি
মৃদু মৃদু হাসি প্রভু গৃহ মধ্যে যায়।।
ভবিষ্য আলেখ্য আঁকি হরিচাঁদ কমলাখি
মহাপ্রভু গুরুচাঁদে আপনি দেখায়।
সেই ছবি নিজ বুকে গুরুচাঁদ রাখে ঢেকে
সময় বুঝিয়া প্রভু যে ছবি মেলা’য়।।
গুরুচাঁদ ইহ পরে হরি আজ্ঞা অনুসারে
সংসারে প্রবেশ করে সাজিতে গৃহস্থ।
ইহ পরে বিভা হয় ব্রহ্মচর্য পালি রয়
পরে বংশ রক্ষা করে সংযমে প্রশস্ত।।
জ্যেষ্ঠ পুত্র জন্ম লয় গুরুচাঁদ দয়াময়
কর্ম্ম ক্ষেত্রে অর্থ লাগি বানিজ্য করিল।
গোপালের পদ স্মরি সে কথা বর্ণনা করি
সাধু জনে সবে মিলি হরি হরি বল।।