ভবঘুরেকথা

শ্লোক
আলোচ্য সর্ব্বশাস্ত্রাণি বিচার্য চ পুনঃ পুন।
ইদমের সুনিস্পন্নং ধ্যেয়ো নারায়ণঃ সদা।।

পয়ার
ভাগবত তুমি তাহা জানিলাম সত্য।
তোমার প্রেমেতে আমি হইনু বিক্রীত।।
সর্বত্যাগী সর্বরোগী সর্বভোগী যেই।
মাধুর্যের পাত্র মহাভাগবত সেই।।
সর্ব ত্যাগ করে বাছা পরিলে কৌপিন।
সর্ব ত্যাগ সর্বভোগী হ’লে উদাসীন।।
কি ব্যাখ্যা করিব তোরে নাহি বলাবল।
কি ফল ব্যাখ্যিব তোরে নাহি ফলাফল।।
শুনিয়া পড়িল সাধু দণ্ডবৎ করি।
শ্রী হরি বলিয়া অম্নি করিল শ্রীহরি।।
দশরথ বলে আমি বড়ই জঘন্য।
তব বাক্য সত্য আমি আজ হ’তে ধন্য।।
অযাচক বৃত্তি ভিক্ষা প্রবৃত্ত হইল।
দেশে দেশে অইভাবে ভ্রমিতে লাগিল।।
ভ্রমণ করেন ঠাকুরের আজ্ঞামত।
সেভাবে জীবিকা রক্ষা করে অবিরত।।
ছেঁড়া কাঁথা গায় ডোর কৌপিন পরিয়া।
ছেঁড়াকানি মস্তকেতে চিবরী বান্ধিয়া।।
বাক বন্ধ অন্তরে জপিত হরিবোল।
ভিক্ষা করিতেন করে করি কমুন্ডল।।
মল্লকাঁদি ছিলেন বিশ্বাস মৃত্যুঞ্জয়।
মল্লকাঁদি ছেড়ে কালী নগরে উদয়।।
মাঝে মাঝে ঠাকুর আসেন মল্লকাঁদি।
অনুক্ষণ মৃত্যুঞ্জয় যান ওঢ়াকাঁদি।।
একদিন ঠাকুর বলেন মৃত্যুঞ্জয়।
করগে কালীনগরে বসতি আশ্রয়।।
তাহাতে ত্যাজিয়া মল্লকাঁদির বাসর।
ভিটা ছাড়ি করে বাড়ী সে কালীনগর।।
দৈবযোগে একদিন সেই ভদ্রাসনে।
দশরথ উপনীত দিবা অবসানে।।
মৃত্যুঞ্জয় দশরথ সূর্যনারায়ণ।
তার মধ্যে হইলাম আমি একজন।।
কহিতেছে দশরথ হরষিত মনে।
কল্য বাছা আমারে যে মেরেছে যবনে।।
মৃত্যুঞ্জয় জিজ্ঞাসিল কেমনে মারিল।
হাসিতে হাসিতে সাধু কহিতে লাগিল।।
ঠাকুরের কথা আছে কথা না কহিব।
অযাচক বৃত্তি দ্বারা জীবন রাখিব।।
আউচ পাড়া যুধিষ্ঠির বিশ্বাস ভবনে।
উপস্থিত হইলাম দিবা অবসানে।।
বাক বন্ধ প্রভু আজ্ঞা কথা নাহি বলি।
পাগল বলিয়া সবে হাতে দেয় তালি।।
রাখালে জিজ্ঞাসা করে আসিয়া নিকটে।
কথা নাহি বলি, তারা সবে মারে ইটে।।
রাখালের যন্ত্রণায় হইনু অস্থির।
আমাকে দেখিতে পায় সেই যুধিষ্ঠির।।
রাখালে তাড়িয়া দিয়া মোরে ডেকে লয়।
তিনি কন এ কখন পাগল ত নয়।।
সেখানেতে ছিল রামকুমারের ভগ্নী।
নড়াইল নিবাসী ভবানী নামিনী।।
তিনি ক’ন আমি চিনি পাগল নহেত’।
মোদের ওঢ়াকাঁদি ঠাকুরের ভক্ত।।
যুধিষ্ঠির যত্ন করি করান ভোজন।
শল্যান্ন ও দধি দুগ্ধ সঘৃত ব্যঞ্জন।।
ভোজন হইল বেলা অপরাহ্ণ কালে।
প্রতিষ্ঠার ভয়ে আমি আসিলাম চলে।।
দিন ভরি ভিক্ষা করি যাই কলাবাড়ী।
সন্ধ্যাকালে গিয়াছিনু মিয়াদের বাড়ী।।
ঠাকুরের বাক্য আছে গৃহে যেতে মানা।
মিয়াদের বাড়ীতে কাছারী একখানা।।
সেই বাড়ী যখন হইনু অধিষ্ঠান।
মেয়েরা সকলে বলে এল ম্যাজমান।।
তাহারা বলিছে কাছারীতে ব’স এসে।
আমি বসে রহিলাম খেড়পালা পাশে।।
মেয়েরা সকলে এসে সুধায় আমায়।
বাড়ী কোথা বল তব যাইবা কোথায়।।
আমি নাহি কথা বলি হইয়া কাতর।
এক মিয়া বলে বেটা হবে বুঝি চোর।।
দশ বার জনে ঘিরে করে গণ্ডগোল।
কেহ চোর কেহ কহে বোবা কি পাগল।।
ধর চোর মার চোর করে হুড়াহুড়ি।
এক মিয়া এসে মোর টেনে ধরে দাড়ি।।
মিয়া কহে হ্যারে চোরা কথা না কহিলি।
গরু চুরি করিবারে বসিয়া রহিলি।।
মিয়া মোর দাড়ি টেনে ধরিল যখনে।
আমি চাই উঠে যেতে দাড়ি ধ’রে টানে।।
মিয়া বলে গরুচোর পালাইতে চায়।
দাড়ি ছাড়ি ধরি চুল পৃষ্ঠেতে কিলায়।।
কিল খেয়ে পালাইতে চাই শীঘ্রগতি।
আর মিয়া এসে মোর পৃষ্ঠে মারে লাথি।।
আর মিয়া এসে মোর দাড়ি ছাড়াইল।
ঘাড়ঘুল্লা দিয়ে মোরে ঠেলিয়া আনিল।।
সেই মোর গ্রীবা ধরে যবে দেয় ঠেলা।
সে মিয়া কহিছে এর গলে দেখি মালা।।
সে মিয়া কহিছে এর মালা মোটা মোটা।
এ দেখি বৈরাগী এরে চোর বলে কেটা।।
হাতে দেখি ভিক্ষা হাঁড়ি তাহাতে চাউল।
ভিক্ষুক বৈরাগী হ’বে নেড়া কি বাউল।।
ইহাকে মারিতে মম হ’তেছে মমতা।
এত অপমান করি নাহি কয় কথা।।
কাহাকে মারিলি তোরা ধরে দাড়ি চুল।
কাহাকে মারিলি তোরা হারে নামাকুল।।
টানিয়া লইল মোরে বাড়ীর উপরে।
ফেলিয়া গায়ের কাঁথা দেখে দীপ ধরে।।
এত যে মারিনু তবু হা হা হুঁ হুঁ নাই।
এ কোন মহৎ হবে মনে ভাবি তাই।।
চোর যদি কুষ্ঠ ব্যাধি কেন ওর গায়।
এ ভাব ধ’রেছে কোন মহতের কথায়।।
রস পৈতৃকের ঘা দেখি যে গাত্র ভরা।।
এই দায় ঠেকে বুঝি এই ভাব ধরা।।
না জেনে আমারে মারে আরো করে রোষ।
মনে মনে বলি হরি না লইও দোষ।।
সংসারের দুঃখ দেখি লইয়াছি রোগ।
মেয়াদের দোষ হ’লে মোরে দেও ভোগ।।
হেসে হেসে দশরথ এই কথা কয়।
তাহা শুনি হাসিয়া কহেন মৃত্যুঞ্জয়।।
সাধে সেধে নিলে ব্যাধি হইলে আতুর।
ঠাকুর পরীক্ষা করে সহ্য কতদূর।।
এইভাবে দশরথ ভ্রমে ঠাই ঠাই।
রসনা বাসনা হরি হরি বল ভাই।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!