ভবঘুরেকথা

মতুয়ার এই নীতি নিত্য পথে করে গতি
অনিত্য সংসার চক্রে কিছু মান্য নাই।
শান্তি নিয়ে তার খেলা শক্তিকে করিয়ে ভেলা
শক্তি সিন্ধু মাঝে চলে মাতিয়া সবাই।।
শক্তি যেথা স্ব প্রকাশ মতুয়ার এ বিশ্বাস
শক্তিময় প্রভু তার রহে তার মাঝে।
আপনি নোয়ায় মাথা শকতি রয়েছে যেথা
বীর্যের সাধক তারা কথা কিংবা কাজে।।
মতুয়া জানিবে প্রাণে নররূপে এইখানে
মানুষের মাঝে তার প্রাণের ঠাকুর।
মানুষে মিশিয়া রয় মানুষের রূপ লয়
মানুষের সাথে লীলা বড়ই মধুর।।
“ মানুষে আসিয়া মানুষে মিশিয়া
করিব মানুষ লীলে।
সেইত সময় চিনিবে আমায়
পুনঃশ্চ মানুষ হলে।। “
——শ্রী শ্রী হরি লীলামৃত
সেই মানুষেতে নিষ্ঠা হলাদিনী নামেতে শ্রেষ্ঠা
প্রেমরূপা কহে তাঁরে শক্তিময়ী রাধা।
দু’য়ে এক একে দুই পুরুষ প্রকৃতি দুই
এক আত্মা বাটি দোহে করে আধা আধা।।
দোঁহে দোহাকারে চাহে দোঁহে এক কথা কহে
দোঁহে এক পূর্ণ করে নিষ্ঠা নামে সতী।
মতুয়া জীবনে তাই দেব দেবী কেহ নাই
প্রাণে প্রাণে টানাটানি চলে নিতি নিতি।।
সাযুজ্যাদি মুক্তি তিন মতুয়ার পক্ষে হীন
বাৎসল্যাদি পঞ্চ রসে নহে তো ভিক্ষারী।
মতুয়া চাহে না কারে সকলে চাহে তাহারে
মতো ‘ ছুয়ে সবে ধন্য গুণে বলিহারী।।
কভু তারে ভাবে দাস কভু নিজে সাজে দাস
প্রাণ ভরি কভু তারে করে আশির্বাদ।
কভু ক্ষোভে কথা কয় কভু ধরণী লোটায়
অসীম ভাবেতে ভাবে যত তার সাথ।।
আমার এক চাকর আছে ভাই,
মনের ভাব জেনে সে কর্ম্ম করে,
এমন নফর দেখি নাই।
—- অশ্বিনী গোঁসাই
হরি তোমায় করি আশির্বাদ
এবার পুরুক তোমার মনোসাধ —–
—– অশ্বিনী গোঁসাই
মিশিতে ঠাকুর সনে কোন কালে কোন দিনে
চাহে না মতুয়া কভু ইহ পরকালে।
ঠাকুর — ঠাকুর রহে মতুয়া ঠাকুরে চাহে
চিরকাল দুইজনে টানাটানি চলে।।
মতুয়া ঠাকুর চিনে তাঁর ভাব ভঙ্গি জানে
তাই কায়া মাত্র নহে পরাণের হরি।
যবে হরি কথা কয় প্রকাশ্যে বা নিরালায়
মতুয়া তাঁহারে চিনে ফেলে অশ্রুবারি।।
মতুয়া জীবনে তাই হরি শূন্য কথা নাই
তার হরি আছে সদা মানুষে মিশিয়া।
সদা ফেরে তাঁরে খুঁজি এই ভাব সোজাসুজি
বিরহ অনল রাখে সজাগ করিয়া।।
মন মানুষের সাথে ঘাটে মাঠে কিংবা পথে
যদি দেখা হয় তার সে পরমানন্দ।
মতুয়া কাঁদিয়া কয় এই মোর রসময়
আপনি লোটায় পদে নাহি রাখে দ্বন্দ্ব।।
মতুয়ার এই বাণী অনন্ত রসের খনি
আসিয়াছে ধরাপরে নাহি যাবে ফিরি।
সদা করে লুকাচুরি ঘর হতে ঘর ছাড়ি
মোরা করি খোঁজাখুঁজি তাঁর পাছে ঘুরি।।

তাঁর মত কহে যেঁই তাঁর মত সহে যেঁই
তাঁর মত দহে যেঁই তাঁরে জানি সেই।
কায়া নাহি দেখি চোখে কায়া ফেলে দেখি তাঁকে
তাঁরে নিয়ে নাচি কান্দি তাঁরে প্রাণ দেই।।
তাঁর বাণী তাঁর বাণী তাঁর বলে তাঁরে জানি
তাই তাঁ’রে ভেবে মোরা তাঁর হই।
তাঁর মাঝে তাঁরে পাই আর কারে নাহি চাই
তাঁকে নিয়ে মোরা তার কথা সদা কই।।
মোর ঠাকুর মরে না মোর ঠাকুর সরে না
মোর ঠাকুর ভরে না সদা পূর্ণ রয়।
তিনি পূর্ণানন্দ হরি মোরা তাকে ডাকি “পুরি “
আছে হরি রবে হরি নাহি হবে লয়।।
রাম হরি কৃষ্ণ হরি শ্রী গৌরাঙ্গ হরি।
হরিচাঁদ আসল হরি পূর্ণানন্দ হরি।।
— শ্রী শ্রী হরি লীলামৃত।
মানুষেতে এই নিষ্ঠা মতুয়া শক্তির স্রষ্টা
অখণ্ড শক্তির কেন্দ্র মতুয়া হৃদয়।
তাই মতুয়া নির্ভিক শৌর্যে বীর্যে যেন শিখ
প্রেমে ভোলা খোলা প্রাণ শ্রী গৌরাঙ্গ প্রায়।।
এক জাতি এক প্রাণ সবে ডাকে হরিচাঁন
একই তরঙ্গে ভাসে একই সাগরে।
নাহি দেব – দেবী পূজা দীক্ষা শূন্য মহাতেজা
একই মহা মন্ত্রে বলে সবে জাগরে।।
কিবা বেদ কিবা স্মৃতি কিবা শিক্ষা রীতি নীতি
যা ‘ বলে ঠাকুর মোর সেই সর্ব্ব সার।
নাহি চাহি মোক্ষ ধাম হাতে কাম মুখে নাম
চরিত্র পবিত্র রাখা সাধনা সবার।।
দেহে বল প্রাণে বল নাহি চাহে ফলাফল
পরম গুরুর ডাকে সবে দেয় সাড়া।
নামে রুচি জীবে দয়া মানুষেতে নিষ্ঠা দিয়া
অসীম বীর্যের তেজে দেহমন ঘেরা।।
“জীবে দয়া নামে রুচি মানুষেতে নিষ্ঠা।
ইহা ভিন্ন যত ক্রিয়া সব ক্রিয়া ভ্রষ্টা।।”
— শ্রী শ্রী হরি লীলামৃত।
ঈশ্বর আর সংসারে মিল এত দিন পরে
মতুয়া জীবনে হ’ল পুর্ণ পরাকাষ্ঠা।
গৃহস্থ সন্যাসী মিশি একাসনে রহে বসি
এক ক্ষেত্রে মিলে সব ধর্ম্ম, কর্ম্ম, নিষ্ঠা।।
বেদাতীত এই ভাব কি রূপে হল সম্ভব
তার ইতিহাস কহি শ্রী গুরু কৃপায়।
আমি কহি কহি ভুল শ্রী গোপাল আদি মূল
তাহা কহি সেই জানে যা’ মোরে কহায়।।
দশ অবতার হয় হিন্দু শাস্ত্রে এই কয়
মৎস্য,কু্র্ম্ম, আদি করিকরি বরাহ বামন।
নৃসিংহ পরশুরাম, সঙ্কর্ষণ বলরাম
পরম – আরাম রাম জগত মোহন।।
বুদ্ধ, কল্কি, এই দশ অবতার স্বপ্রকাশ
পুনঃ সাধু কহে অষ্টবিংশ অবতার।
শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য গোরা কপিল আখিল জোড়া
বেদব্যাস নামে মুনি মুনির কুমার।।
নানা তত্ত্ব সারোদ্ধার অষ্টবিংশ অবতার
অসীম গুণের ধাতা অবতার সবে।
বিচার করিলে মনে অবতার প্রতি জনে
পূর্ণ গুণে পরিপূর্ণ সবে নাহি হবে।।
হরিতে ধরার ভার করিতে জীব উদ্ধার
যুগ অনুসারে আসে যুগ অবতার।
যতটুকু প্রয়োজন সেই গুণে সে ওজন
তাই নিয়ে নামে প্রভু ধরার উপর।।
অনন্ত জলাধি জলে ধরা ডোবে সীমাতলে
মৎস্য রূপে প্রভু তাই ধরা উদ্ধারিল।
বারি পরে জাগে ধরা কূর্ম্মরূপে পৃষ্ঠে ধরা
কূর্ম্ম অবতারে প্রভু সে কর্ম্ম সাধিল।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!