ভবঘুরেকথা
মতুয়া সংগীত

মধ্যখণ্ড : প্রথম তরঙ্গ
বন্দনা

জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস।
জয় শ্রী বৈষ্ণব দাস জয় গৌরী দাস।।
জয় শ্রী স্বরূপ দাস পঞ্চ সহোদর।
পতিত পাবন হেতু হৈলা অবতার।।
জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন।
জয় শ্রী গোলোকচন্দ্র জয় শ্রী লোচন।।
জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দময়।।
জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ।
নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।

অথ মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের উপাখ্যান।
পয়ার

মল্লকাঁদি গ্রামে মৃত্যুঞ্জয় মহাভাগ।
যে ভাবে ঠাকুর প্রতি বাড়ে অনুরাগ।।
নিত্যানন্দ মহাসাধু দানধর্মে রত।
কৃষ্ণ ভক্তি সাধুসেবা করে অবিরত।।
তাহার নন্দন হ’ল নাম মৃত্যুঞ্জয়।
সুভদ্রা নামিনী মাতা পতিব্রতা হয়।।
সেই রত্নগর্ভজাত হ’ল মৃত্যুঞ্জয়।
পরম বৈষ্ণবী দেবী সুভদ্রা সে হয়।।
নিত্যানন্দ পরলোকে করিলে গমন।
পতিশোকে সুভদ্রার সতত রোদন।।
পতি ধর্মাশ্রয় করি শিখার মুণ্ডন।
শুদ্ধমতি এক সন্ধ্যা করিত ভোজন।।
শিক্ষা কৈল হরিদাস বাবাজীর ঠাই।
সদা মনে কৃষ্ণ চিন্তা অন্য চিন্তা নাই।।
অঙ্গে ছাপা জপমালা তুলসী সেবন।
তুলসীর বেদী নিত্য করিত লেপন।।
নিশাকালে অল্প নিদ্রা তেমতি বিশ্রাম।
ঘুমেতে থাকিয়া করিতেন হরিনাম।।
ব্রহ্ম মুহূর্তের কালে করি গাত্রোত্থান।
প্রেমভরে ডাকিতেন গৌরাঙ্গরে প্রাণ।।
কোথারে নিতাই মোর কোথা ওরে গৌর।
দাসীকে করহ দয়া দয়াল ঠাকুর।।
বাপরে চৈতন্য মোর বাপরে নিতাই।
দাসীকে করহ দয়া এস দুটি ভাই।।
হরি বলি রোমাঞ্চিত প্রেমেতে পুলক।
প্রাতঃকৃত স্নান করি পরিত তিলক।।
হরিনাম পদছাপা সর্বঅঙ্গে পরি।
নিতাই বলিতে চক্ষে ঝরে অশ্রুবারি।।
তৈল মৎস বিনে নিজ হাতে করি পাক।
নিতাই চৈতন্য বলে ছাড়িতেন ডাক।।
সেই রত্নগর্ভজাত সাধু মৃত্যুঞ্জয়।
শাস্ত্র শ্লোক বক্তা ছিল ধীর অতিশয়।।
শাস্ত্র আলাপনে অতি ছিলেন সমর্থ।
করিতেন শাস্ত্রের মাঝেতে নিগুঢ়ার্থ।।
সাধু সঙ্গে ইষ্ট গোষ্ঠ করে নিরবধি।
দৈবেতে হইল তার রসপিত্ত ব্যাধি।।
ভাবিলেন আমি হেন লোকের সন্তান।
আমার এব্যাধি হ’ল না রাখিব প্রাণ।।
কোন মুখে এই মুখ লোকেরে দেখা’ব।
ভাবিলেন বিষ খেয়ে জীবন ত্যাজিব।।
ওঢ়াকাঁদি হ’ল হরি ঠাকুর প্রচার।
আশা যাওয়া করে প্রভু রাউৎখামার।।
এ দেশ এ গ্রাম সব ধন্য হইয়াছে।
আমিও যাইব সেই ঠাকুরের কাছে।।
গোলোক মাতিল আর মাতিল বদন।
নারিকেলবাড়ী ধন্য তাদের কারণ।।
ঠাকুর পাইয়া হ’ল জগতে আনন্দ।
মাতিয়াছে দশরথ আর মহানন্দ।।
ইহা দেখি দ্রবীভূত নহে মম মন।
যেমন মানুষ আমি হ’য়েছে তেমন।।
জ্ঞান হয় ওঢ়াকাঁদি স্বয়ং অবতার।
তিনি বিনে পতিতের বন্ধু নাহি আর।।
রাউৎখামার হ’ল প্রেমের বাজার।
প্রেমের পাথারে সবে দিয়েছে সাঁতার।।
ওঢ়াকাঁদি হতে প্রেমবন্যা উথলিল।
আমি বিনে জগতের সকলে ডুবিল।।
মরিলে ঠাকুর দেখে পরকাল পাব।
শেষে বিষ খেয়ে আমি আত্মঘাতী হ’ব।।
বিষ কিনে লইলেন কাপড়ে বাঁধিয়া।
এ বিষ খাইব ঠাকুরের কাছে গিয়া।।
বিষ ল’য়ে ওঢ়াকাঁদি উপনীত হ’ল।
প্রভুর নিকটে গিয়া কাতরে বসিল।।
প্রভু বলে মৃত্যুঞ্জয় এলি ওঢ়াকাঁদি।
পরিধান কাপড়েতে কি আনিলি বাঁধি।।
অমনি বিস্ময়াম্বিত হ’ল মৃত্যুঞ্জয়।
মুখপানে চেয়ে র’ল কথা নাহি কয়।।
বসন টানিয়া প্রভু বিষ খসাইল।
বাহির করিয়া নিজে বিষ পান কৈল।।
এলি এই বিষ খেয়ে মরিবার তরে।
ওঢ়াকাঁদি এলে কিরে বিষে লোক মরে।।
এই বিষ খেয়ে বাছা মরিতে কি তুমি।
এইত’ বিষ খেলাম মরিত’ না আমি।।
মৃত্যুঞ্জয় মনে মনে ভাবিতে লাগিল।
ফাঁকি দিয়ে বেণে বেটা বিষ নাহি দিল।।
বিষ না দিয়ে বণিক দিয়েছে সে কুড়।
বিষ নহে এতে কেন মরিবে ঠাকুর।।
পুনঃভাবে এই বিষে ঠাকুর মরিলে।
প্রহ্লাদ ম’ল না কেন অগ্নি বিষানলে।।
বিষপানে মরিল না ভোলা বিশ্বনাথ।
কালীয় শ্রীকৃষ্ণ অঙ্গে কৈল দন্তাঘাত।।
হইলে সামান্য লোক হইত নিপাত।
নিশ্চয় বুঝিনু ইনি প্রভু জগন্নাথ।।
বিষপানে মরিতেন মানব হইলে।
আমার মনের কথা কেমনে জানিলে।।
আমি যে এনেছি বিষ গোপন করিয়া।
কেহ নাহি জানে আনি কাপড়ে বাঁধিয়া।।
গোপনে রেখেছি কিসে পাইল সন্ধান।
অন্তর্যামী ইনিত স্বয়ং ভগবান।।
প্রভু কয় মৃত্যুঞ্জয় শুনরে বচন।
বিষ খেয়ে মরে যে সে মানুষ কেমন।।
নিজ দেহ প্রতি যার দয়ামায়া নাই।
সে ভালো বাসিবে পরে বিশ্বাস না পাই।।
মৃত্যুঞ্জয় কহে প্রভু তোমার সাক্ষাতে।
মরিব বিষের বিষে ভয় কি তাহাতে।।
প্রভু বলে যদি তোর মরিবার ইচ্ছে।
মরিলি ত’ ভাল ক’রে মর মোর কাছে।।
পড়ে পদে মনোখেদে বলে মৃত্যুঞ্জয়।
দোষ ক্ষমা করি প্রভু রেখ রাঙ্গা পায়।।
দীন দয়াময় দয়া কর একবার।
আমিও তোমার প্রভু এ দেহ তোমার।।
প্রভু বলে যদি মোরে দেহ দিলি ধরি।
ব্যাধিমুক্ত হলি তুই ব’ল হরি হরি।।
শ্রীনাথ শ্রীমুখ বাক্য যখন বলিল।
ব্যাধিমুক্ত মৃত্যুঞ্জয় নাচিতে লাগিল।।
মৃত্যুঞ্জয় ধরি হরি চরণ যুগল।
বলে হরি বল হরি বল হরি বল।।
মৃত্যুঞ্জয় পাইল প্রভুর শ্রীচরণ।
কহিছে তারক হরি বল সর্বজন।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!