ভবঘুরেকথা

উদাস ভাব ও গৃহকর্ম্ম ত্যাগ-পিতার আক্রোশ

মহানন্দ দেখে মন পাগল হইল।
গৃহকর্ম্ম গৃহধর্ম্ম নাহি লাগে ভাল।।
গোস্বামীকে মনে করি কান্দে সঙ্গোপনে।
পিতা বাদী, যেতে নাহি পারে কোনখানে।।
মাঝে মাঝে মহানন্দ দিতেন দর্শন।
যত দেখে তত ব্যস্ত হয় তার মন।।
উদাসীর ভাবে মত্ত কাজ নাহি করে।
শ্রীআনন্দ তিরস্কার করে হরিবরে।।
সাথে সাথে মহানন্দে গালি দেয় জোরে।
‘‘পাগল করিল কেন মোর হরিবরে।
ছেলেধরা জুয়াচোর যত মতুয়ারা।।
একেবারে করিয়াছে মোর দফা সারা।।’’
অলক্ষ্যে আনন্দ করে গালি বরিষণ।
গোস্বামী আসিলে ভক্তি করেন তখন।।
গালি দেয় শ্রীআনন্দ গোস্বামী রতনে।
নাম শুনে হরিবর শান্তি পায় প্রাণে।।
এত যে কটুক্তি করে আনন্দ সুজন।
হরিবর নহে দুঃখী তাহার কারণ।।
ভাবময় গোস্বামীজী বুঝিলেন মনে।
হরিবর কষ্ট সহে তাঁহার কারণে।।
দুঃখ দূর করিবারে সেই মহাত্মায়।
দুর্গাপুর গ্রামে আসি হইল উদয়।।
বহু যত্ন সে আনন্দ করে গোস্বামীরে।
আপন দুঃখের কথা বলে অতঃপরে।।
‘‘আশা ছিল হরিবর হইবে মোক্তার।
কিন্তু ফেল পরীক্ষাতে হল সেই বার।।
অকর্ম্মা বসিয়া গৃহে কার্য্য নাহি করে।
মনোদুঃখে সদা যেন আছি আমি মরে।।
তোমার সঙ্গেতে ঘোরে তাতে বাধা নাই।
গৃহকর্ম্ম ত্যাগ করে দুঃখে মরি তাই।।’’
গোস্বামী আনন্দে ডাকি বলিল তখন।
‘‘হরিবর লাগি চিন্তা করেনা কখন।।
মোক্তারী করেছে ফের তাতে লজ্জা নাই।
হরিবরে এক পাশ আমি দিয়ে যাই।।
‘দল’ করে হরিবর কবিগান গাবে।
তাহাতে তোমার দুঃখ সব দূরে যাবে।।’’
আনন্দে আনন্দ কয় ‘‘শুন মহাজন।
মনে মনে আমি তাই করেছি মনন।।
দয়া করে হরিবরে তাই বলে যাও।
কমায়ে দুঃখের বোঝা আমারে বাঁচাও।।’’
কথাশুনি হরিবর গোস্বামীরে কয়।
‘‘কবি গানে যেতে বাবা আমি করি ভয়।।
গানে গানে তোমা ভুলে যাব দিনে দিনে।
করি দলে আমি নাহি যাব সে কারণে।।’’
গোস্বামী কহিল তারে ‘‘শোন হরিবর।
যাহা বলি তাহা কর নাহি কোন ডর।।
যেথা যাও আমি সদা রব সাথে সাথে।
এ বাক্য ঠেলনা মোর তুমি কোন মতে।।’’
গোস্বামীর আজ্ঞামতে সেই হরিবর।
কবিগান করিবারে হল তৎপর।।
আদি শিক্ষা লাভ হল পিতার নিকটে।
শ্রীতারক পরে গুরু হইলেন বটে।।
হলদিবুনীয়া নামে বাদা সন্নিধানে।
আছে এক গ্রাম ইহা জানে সর্ব্বজনে।।
সেই দেশে হরিবরে পিতার সহিতে।
গান করিবারে গেল আনন্দিত চিতে।।
তারকের সাথে সেথা আনন্দের গান।
মালগাজী করে গান দুই মতিমান।।
তথা হলে রামপাল থানা প্রতি যায়।
আনন্দে সে পথ তবে তারকেরে কয়।।
‘‘মোর বাক্য শোন তুমি তারক সুজন।
মমপুত্র হরিবরে করহে গ্রহণ।।
পুত্র বলে শিষ্য বলে তারে তুমি লও।
রাখিবেন কি বাক্য মোর সেই কথা কও।।’’
আনন্দে তারক বলে ‘‘কোন বাধা নাই।
আজি হতে হরিবরে লইলাম ভাই।।’’
পিতার আদেশে তাই সেই হরিবর।
তারকচাঁদের পদে করে নমস্কার।।
গুরু বলে মান্য তাঁরে করে মনে প্রাণে।
পুনরায় আজ্ঞা পেল গুরুচাঁদ স্থানে।।
গুরুচাঁদ বলে তারে ‘‘শুন হরিবর।
তারকের মত লোক নাহি দেখি আর।।
তাঁরে গুরু কর তুমি সরল অন্তরে।
সফল জনম তবে হবে ভবপরে।।’’
এই ভাবে গুরু করি শ্রীতারকচান্দে।
কবিগান করে সাধু পরম আনন্দে।।
বহুস্থানে মান্য পেল বহুত উপাধি।
সুকবি বলিয়া নাম আছে নিরবধি।।
গুরুচাঁদ দিল আখ্যা ‘কবি গুণাকর।
রজত পদক দিল সঙ্গে উপহার।।
গ্রন্থকার জন্মভূমি বেতকাটা গ্রাম।
‘কবিরত্ন’ আখ্যা সেথা পেল গুণ ধাম।।
সুকবি রসিকলাল মুখোপাধ্যায়।
‘কবিরঞ্জন’ উপাধি দিল মহাশয়।।
‘‘কবি চুড়ামণি’’ আর ‘‘কবি শিরোমণি।
রজত পদকে আখ্যা পাইলেন তিনি।।
এবে শুন গুরুচাঁদে দেখিল কি ভাবে?
নিজমুখে কবি যাহা বলিলেন সবে।।
মতুয়া চরিত্র গাঁথা সুধা হতে সুধা।
মহানন্দ বলে খেয়ে যায় ভবক্ষুধা।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!