গুরুচান্দের বর লাভ
মহানন্দ পদাশ্রিত হইল অশ্বিনী।
দিবানিশি মুখে তার হরি নাম ধ্বনি।।
হরিচান্দ গুরুচান্দ পোষা শুক পাখি।
মহাভাবে মাতোয়ারা ঝরে দু’টি আখি।।
নির্জনে বসিয়া সদা হরিগুণ গায়।
প্রেমের পাথারে রত্ন ভাসিয়া বেড়ায়।।
একদিন তার পিতা সে ভাবে দেখিয়া।
বলিলেন মহানন্দ পাগলকে গিয়া।।
শুন শুন ও পাগোল বলি যে তোমায়।
গঙ্গাচর্ণা চল তুমি আমার আলয়।।
অশ্বিনীর ভাব আমি বুঝিতে না পারি।
দিবা নিশি ফেরে সদা হরি নাম করি।।
সংসারের কর্ম কিছু করিতে না চায়।
মহাভাবে থাকে সদা হরিগুণ গায়।।
তাই শুনি মহানন্দ গঙ্গাচর্ণা এল।
অশ্বিনীর সেই ভাব দেখিতে পাইল।।
মহানন্দ বলে তুমি শুন বাছাধন।
কর্মনাহি করে বাছা কিসের কারণ।।
হাতে কাম মুখে নাম এযুগের ধর্ম।
কি বুছিয়া ছেড়ে দিলে সংসারের কর্ম।।
প্রশস্ত গার্হ্স্থ ধর্ম শিখাবার তরে।
হরিচান্দ অবতীর্ণ এ বিশ্ব সংসারে।।
তাই শুনি সে অশ্বিনী চরণে পড়িল।
চরণ ধরিয়া শেষে কান্দিতে লাগিল।।
কেন্দে বলে ওগো বাবা চরণে জানাই।
অন্য কিছুতেই আমি শান্তি নাহি পাই।।
হরিনামে কি আনন্দ দিতে নারি সীমা।
প্রেমের তরঙ্গে ভাসি কি দিব উপমা।।
নামে প্রেমে মত্ত্ব হয়ে যেদিকে তাকাই।
হরিচাঁদ ছবিখানি দেখি বারে পাই।।
আকাশে বাতাসে আর লতায় পাতায়।
হরিচান্দ ছবিখানি ভাসিয়া বেড়ায়।।
তাই দেখে বাহ্যজ্ঞান হারাইয়া যায়।
কি করিতে কি না করি বুঝিয়ে না পাই।।
হেন বাক্য মহানন্দ শুনি কানেতে।
অশ্বিনীকে বুকে ধরি লাগিল কহিতে।।
শুন শুন বাছাধন বলি তব ঠাই।
তোর মত হরিভক্ত এ জগতে নাই।।
চলো তোরে লয়ে যাই ওড়াকান্দি বাড়ি।
শ্রীধামেতে বসে আছে পারের কান্ডারী।।
হরি হর এক আত্মা গুরুচাঁদ নামে।
দেখিতে পাইবা তাহা যাইয়া শ্রীধামে।।
হেরিলে সে গুরুচাঁদ যুগল চরণ।
তোমার মনের বাঞ্ছা হইবে পূরণ।।
তাই শুনি মহারত্ন বাক্যে দিল সায়।
গুরু সেবা করিলেন আনন্দ হৃদয়।।
তাই দেখে কার্ত্তিকের আনন্দ উথলে।
কেঁদে কেঁদে মহানন্দ পাগলকে বলে।।
আশ্বিনীকে যে দিনেতে তোমাকে দিয়েছি।
আমার জনম ধন্য সেদিন জেনেছি।।
বংশে যদি হরিভক্ত একজন হয়।
সে বংশ উজ্জ্বল হয় তাহার দ্বারায়।।
আমার ঔরস ধন্য তাতে জানা গেল।
গোলকচাঁদের বরে এ রত্ন জন্মিল।।
আজ হতে ঘরবাড়ী সকল তোমার।
যাহা ইচ্ছা তাহা কর কি আছে আামার।।
এই কথা যখনেতে কার্ত্তিক বলিল।
মহানন্দ ধরে তারে আলিঙ্গন দিল।।
কার্ত্তিকেরে বলে কয়ে পাগল তখন।
অশ্বিনীকে সঙ্গে করে করিল গমন।।
হরিচাঁদ গুণগান করিতে করিতে।
ভাবে গদগদ চিত্ত চলেছেন পথে।।
পথে যেতে হরিভক্ত আসিয়া জুটিল।
পিছে পিছে তারা সবে চলিতে লাগিল।।
এইভাবে কত বাড়ী ঘুরিল পাগল।
সবার মুখেতে শুধু হরি হরি বোল।।
এই বেশে সবে মিলে বলে হরি হরি।
সন্ধ্যাবেলা উপনীত নারিকেল বাড়ী।।
পাগলের বাড়ী সবে কীর্ত্তনে মাতিল।
হরি বলে সে অশ্বিনী কাঁদিতে লাগিল।।
গুরুপাঠ মহাতীর্থ অশ্বিনী জানিয়া।
গড়াগড়ি যায় তথা মাটিতে পড়িয়া।।
হরিনামে মাতোয়ারা গড়াগড়ি যায়।
বাহ্যজ্ঞান হারাইল সমাধির প্রায়।।
তাই দেখ মহানন্দ অশ্বিনীকে ধরে।
কোলে করে রাখিলেন সমাদর করে।।
পদ্ম হস্ত বুলায়েছে অশ্বিনীর গায়।
গুরুর পরশ পেয়ে সুস্থ হয়ে রয়।।
ভোজনাদি করি সবে সে নিশি কাটায়।
প্রভাতে উঠিয়া সবে হরিগুণ গায়।।
আচমন করি সবে পান্তা সেবা করি।
ওড়াকান্দি করে যাত্রা বলে হরি হরি।।
পথে যেতে হরিনাম করিতে করিতে।
উদয় হইল গিয়ে প্রভুর ধামেতে।।
দেখিয়া সে গুরুচাঁদ মহানন্দে কয়।
শুক পাখি ছানা তুমি পাইলে কোথায়।।
হরি বোলা পাখী এই শ্রীধামে আসিল।
আমার মনের বাঞ্ছা আজি পূর্ণ হল।।
তাই শুনি মহারত্ন চরণে পড়িল।
চরণে ধরিয়া সে যে কাঁদিতে লাগিল।।
কেঁদে বলে ওগো প্রভু করি নিবেদন।
অধমেরে কৃপা করি কর হে গ্রহণ।।
তব চরণেতে প্রভু এই ভিক্ষা চাই।
জনমে জনমে যেন ভুলিয়া না যাই।।
গুরুচাঁদ বলে বাছা শুন সমাচার।
তোর দ্বারা হরিনাম হইবে প্রচার।।
আমার পিতার গীতি তুইতো লিখিবি।
আমি তোরে বর দেই লিখিতে পারিবি।।
মহানন্দে ডাক দিয়া গুরুচাঁদ কয়।
শুন শুন মহানন্দ বলি যে তোমায়।।
অশ্বিনীকে তুমি নিয়ে আসিলে হেথায়।
এবে এক কার্য্য কর বলি যে তোমায়।।
অশ্বিনীকে নিয়ে তুমি জয়পুর যাও।
তারকের কাছে দিয়ে কবিত্ব জাগাও।।
হরিবোলা পাখী এই জগতে আসিল।
জীবের কল্যাণ হেতু পাগল আনিল।
গোলোকচাঁদের বরে আসিল ধরায়।
হরি লীলাগীতি হবে ইহার দয়ায়।।
তুমি যবে গুরুরূপে করিলে গ্রহণ।
তোমার কৃপায় হবে একার্য সাধন।।
মহানন্দ বলে প্রভু বলি তব ঠাই।
শ্রীমুখের বাক্য সত্য মনে ভাবি তাই।।
তুমি যারে কৃপা কর ওগো দয়াময়।
জীবনে মরণে তার নাহি কোন ভয়।।
পতিত তারিতে প্রভু আসিলে জগতে।
দয়াময় নাম তব হইল তাহাতে।।
গুরুচাঁদ চরণেতে প্রণাম করিয়া।
বিদায় হেইল শেষে আশ্বিনীকে নিয়া।।
জয়পুর যাব বলে করিল গমন।
অধম বিনোদ বলে হরি বল মন।।