মা মনসার জন্মকথা
(পয়ার)
একদিন সাজি হাতে দেব পঞ্চানন।
পুষ্প লাগি পদ্মবনে করেন গমন।।
আগে গিয়ে হৈমবতী মায়া রূপ ধরি।
সৃজিলেন পদ্মবনে নদী আর তরী।।
আপনি পাটনী হয়ে বসে তরীপর।
হেনকালে সাজি হাতে আসেন শঙ্কর।।
রূপবতী নারী হেরি তরণী উপর।
মুগ্ধ হয়ে সকাতরে বলিল শঙ্কর।।
কেবা তুমি আলো করি আছ পদ্মবন।
বাসনা পুরাও মোর দিয়া আলিঙ্গন।।
এত বলি আগে বাড়ি চলিল ধরিতে।
অন্তর্হিতা হয় দেবী দেখিতে দেখিতে।।
লজ্জিত হইয়া শিব আনত বদন।
শুন্যোপরি পাখি শব্দ করিল শ্রবণ।।
ঊর্দ্ধে চেয়ে দেখে সেই চকোর চকোরী।
মনের হরষে কেলি করে শূন্যেপরি।।
তাহা দেখি কামবশ হয় পঞ্চানন।
তার বীর্য পদ্মপত্রে হইল পতন।।
পাতাল ভেদিয়া বীর্য্য রসাতলে যায়।
বাসুকী পাইয়া রক্ষা করিলেন তায়।।
শিববীর্যে মনসা দেবী লভিয়া জনম।
দিনে দিনে বাড়ে কন্যা শশীকলা সম।।
একদা মনসা দেবী বাসুকীরে কয়।
কাহার নন্দিনী আমি দেও পরিচয়।।
তখন সকল কথা বাসুকী বলিল।
শিবেরে দেখাতে সঙ্গে লইয়া বলিল।।
পদ্মাবনে মনসারে করিল স্থাপন।।
দেখিতে দেখিতে তথা আসে পঞ্চানন।।
দিব্য নারী দেখি কাম জন্মিল তাহার।
ধরিতে তাহাকে বাহু করেন প্রসার।।
কি কর, কি কর বলি বিষহরি কয়।
আমি যে নন্দিনী তব ওহে দয়াময়।।
তখন ধ্যানেতে সব জানি পঞ্চানন।
সাজিতে কন্যারে লয়ে করিল গমন।।
কৈলাসে লইয়া গেল দেব শূলপাণি।
তথায় দেখিয়া তারে হরের গৃহিনী।।
পতির যুবতী ভার্য্যা করিয়া চিন্তন।
বাম চক্ষু নষ্ট তার করিল তখন।।
তাহা দেখি বিষাদেতে কহে শূলপাণি।
করিলে অন্যায় কাজ শুনগো ভবানি।।
আমার নন্দিনী এই বিষহরি হয়।
না বুঝিয়া অনুচিত করিলে নিশ্চয়।।
এত বলি মনসার লইয়া তখন।
সিজুয়া পর্ব্বতে তিনি করেন গমন।।
বিশ্বকর্মা দ্বারা তথা করি দিব্য ঘর।
মনসা দেবীর তথা স্থাপিলেন হর (মহাদেব)।।
তখন মনসা কহে শুন ভগবান।
একাকী কেমনে হেথা করিব যাপন।।
অনেক চিন্তিয়া তবে দেব শূলপাণি।
কপালের ঘর্ম মুছে হস্তেতে তখনি।।
এক কন্যা তাতে করে জনম ধারণ।
মসনার সখি রূপে রহে সর্বক্ষণ।।
কিসে নিজ পূজা হবে জগতে প্রচার।
এ চিন্তা মনসা তখন করে নিরন্তর।।