ভবঘুরেকথা
মতুয়া সংগীত

শ্রীগোলক গোস্বামীর গোময় ভক্ষণ প্রস্তাব
দীর্ঘ ত্রিপদী

মৃত্যুঞ্জয়ের জননী দেবী সুভদ্রা নামিনী
সদা করে নাম সংকীর্তন।
গৌর নিত্যানন্দ বলে ভাসে দু’নয়ন জলে
ডাকে কোথা শচীর নন্দন।।
নিদ্রাতে হ’য়ে বিভোরা বাপরে নিতাই গোরা
ডাকিতেন নয়ন মুদিয়া।
নিদ্রাযোগে অঙ্গে ঝাঁকি ছল ছল দুটি আঁখি
কাঁদিতেন চৈতন্য হইয়া।।
হায় হায় কি হইল দেখা দিয়া লুকাইল
বাপরে আমার নিত্যানন্দ।
ওরূপ করিত যবে রামাগণ এসে তবে
প্রতিবাসী বলিতেন মন্দ।।
কোন কোন নারী আসি বলিতেন হাসি হাসি
বাপ বল কোন নিতাইরে।
বলিত সুভদ্রা ধনী আমার নিতাই মণি
সবাকার বাপ এ সংসারে।।
কেহ বলে জানি আমি নিতাই তোমার স্বামী
রমণী কি স্বামী নাম লয়।
কহ বাবা নিত্যানন্দ তাহাতে পরমানন্দ
নিতাই কি তব বাবা হয়।।
কহে সুভদ্রা বৈষ্ণবী আমি নিতাই বল্লভী
নিত্যানন্দ জীবন বল্লভ।
নিত্যানন্দ দাসী আমি নিত্যানন্দ মম স্বামী
যাহা হতে জগৎ উদ্ভব।।
নিতাই আমার বাপ মাতৃবাপ পিতৃবাপ
পুত্রের কন্যার বাপ হয়।
জগৎ জনার বাপ মোর বাপ তোর বাপ
তারে বাপ বলিতে কি ভয়।।
তোরা সব প্রতিবাসী করিস কি হাসাহাসি
নিত্যানন্দ দাসী হই আমি।
নিতাই জগৎগুরু প্রেমদাতা কল্পতরু
নিত্যানন্দ বাপ ভাই স্বামী।।
হেনভাবে সর্বক্ষণ প্রেমাবিষ্ট তনু মন
নিত্য কৃত প্রাতঃস্নান আদি।
অরুণ উদয়কালে স্নান ক’রে কুতূহলে
নিত্য লেপে তুলসীর বেদী।।
একদা সকাল বেলা লইয়া গোময় গোলা
ঝাঁটা শলা দক্ষিণ করেতে।
লেপিছে বাহির বাড়ী বাম করে গোলাহাঁড়ি
হরি হরি বলেন মুখেতে।।
এ হেন সময়কালে জয় হরি বল বলে
গোঁসাই গোলোক উপনীত।
দেখিলে সকল লোকে পাগল বলে তাহাকে
ভক্ত ওঢ়াকাঁদি ভাবাশ্রিত।।
মলিন বসনধারী অঙ্গে কাঁথা বলে হরি
প্রণমিল সুভদ্রার পায়।
গোময়ের গোলা পদে গোঁসাই মনের সাধে
পদরজ চাটিল জিহ্বায়।।
কহিছে সুভদ্রা ধনী আমি বড় ঠাকুরানী
তুই বড় ভক্তি জানিস।
করিস কি ভারি ভুরি মানিনে ও সাধুগিরি
কি বুঝিয়া আমাকে মানিস।।
ওঢ়াকাঁদি হরিচাঁদ যিনি বৃন্দাবন চাঁদ
গৌর নিতাই চাঁদ যেন।
তার দায় দিয়া ফের ভা’বো হ’য়ে ভাব ধর
মেয়েদের পদ চাট কেন।।
কাঁথাখানি দিয়া গায় হেঁটে বেড়ালে কি হয়
ভাব যে ঠাকুর হইলাম।
খাও মেয়েদের এঠে মেয়েদের পদ চেটে
অষ্ট অঙ্গে করহ প্রণাম।।
আয় দেখি মোর ঠাই দেখি কেমন গোঁসাই
কতদূর ভাবেতে বিভোলা।
পদ চাটি কাঁদা খালি এনেছি গোময় গুলি
খা দেখি এ গোময়ের গোলা।।
এ হেন বাক্য শুনিয়ে গোঁসাই মৃদু হাসিয়ে
দুই কর পাতিল অঞ্জলি।
গোঁসাই না কহে বাণী অমনি সুভদ্রা ধনী
হাঁড়ি ধরে গোলা দেয় ঢালি।।
গোঁসাইর নাহি দুঃখ অমনি দিল চুমুক
সে অঞ্জলি খাইল তখন।
পুনশ্চ অঞ্জলি দিলে সে অঞ্জলিও খাইলে
একবিন্দু হ’ল না পতন।।
পুনশ্চ কহে বৈষ্ণবী কিরে বাছা আরো খাবি
অমনি গোঁসাই পাতে হাত।
দিলেন হাঁড়ি ঢালিয়ে তৃতীয় অঞ্জলি খেয়ে
গোঁসাই করিল প্রণিপাত।।
সুভদ্রা কহিছে ম’তো দেখি তোর ভক্তি কত
হস্ত ধৌত না করিও ধন।
গোঁসাই কহে কি করি বুড়ি কহে শিরোপরি
হস্তদ্বয় করহ মার্জন।।
সুভদ্রা কহিল যাহা গোস্বামী করিল তাহা
উত্তরাভিমুখে চলি যায়।
সদা মুখে হরিনাম আসিল পদুমা গ্রাম
ফেলারাম বিশ্বাস আলয়।।
এদিকে সুভদ্রা গিয়ে হস্তপদ পাখলিয়ে
করেতে লইল জপ মালা।
মালা জপিতে জপিতে কম্প উঠি আকস্মাতে
গৃহমাঝে প্রবেশ করিলা।।
উঠিল পেটে বেদনা তাহা না হয় সান্তনা
সুভদ্রা কহিছে হায় হায়।
উদর বেদনা জ্বালা সেই গোময়ের গোলা
ভেদ আর বমি সদা হয়।।
নিতাই চৈতন্য বলে ভাসে দু’নয়ন জলে
কিছুতেই না হয় প্রতিকার।
যত বলে শ্রীচৈতন্য বেদনা বাড়ে দ্বৈগুণ্য
ভেদ বমি হয় বার বার।।
মৃত্যুঞ্জয় এসে ঘরে তাহা নিরীক্ষণ করে
বলে কিবা হইল মায়ের।
গোময়ের গোলা যত ভেদবমি অবিরত
বুঝিতে না পারি কর্ম ফের।।
মৃত্যুঞ্জয়ের বনিতা বলে কিবা কহিব তা
দুষ্কার্য করেছে ঠাকুরানী।
যেমন করেছে কার্য তাহা নাহি মনে গ্রাহ্য
কর্মফল ফলেছে অমনি।।
গোস্বামী গোলোক এসে মা ব’লে প্রণামি শেষে
ঠাকুরানীর খায় পদধূলা।
ঠাকুরানী ক্রোধ ক’রে মোদের গোঁসাইজীরে
খাওয়াইছে গোময়ের গোলা।।
সেই গোলা উদ্বমন হইতেছে সর্বক্ষণ
ভেদ হইতেছে সেই গোলা।
গলিত ঘর্ম শরীর হ’তেছে ঠাকুরানীর
উদর বেদনা অঙ্গজ্বালা।।
মৃত্যুঞ্জয় শুনে তাই গিয়া জননীর ঠাই
বলে মাতা কহ সমাচার।
শুনিয়া সুভদ্রা ধনী কাতরে কহিছে বাণী
বলে বাবা কি বলিব আর।।
এসেছিল সে গোলোক মাধুর্যভাবের লোক
জলন্ত পাবক প্রায় আজ।
আগে ক’রে দণ্ডবৎ শেষে দিল পায়ে হাত
আমি বলি কি করিস কাজ।।
লইতে পায়ের ধূলা খাইল গোময় গোলা
ভাব ধরে হরি হরি বোলা।
দেখি তোর কত ভক্তি ধূলাতে কতই আর্তি
খা দেখি এ গোময়ের গোলা।।
দিলাম গোময় গুলি খাইল তিনটি অঞ্জলি
জ্বলে মম অস্থি চর্ম মেদ।
হস্তপদ চক্ষু জ্বালা সেই গোময়ের গোলা
হইতেছে বমি আর ভেদ।।
ওরে বাপ মৃত্যুঞ্জয় পাগল গেল কোথায়
সে না এলে আমি মরি প্রাণে।
করেছি যেমন কাজ আমার মুণ্ডেতে বাজ
মরি বাঁচি দেখা তারে এনে।।
নির্মল প্রেমের সাধু আমি তারে শুধু শুধু
করিয়াছি নিন্দন ও ভর্ৎসন।
সাধু নিন্দা মহাপাপ ভুঞ্জিতেছি সেই পাপ
করি তার চরণ বন্দন।।
কথাশুনি মৃত্যুঞ্জয় দ্রুত অন্বেষণে যায়
কোথা সেই গোলোক গোঁসাই।
পদুমায় দেখা পেয়ে পদে দণ্ডবৎ হ’য়ে
জানাইল গোঁসাইর ঠাই।।
গোস্বামী গোলোক গিয়ে নিকটে উদয় হ’য়ে
সুভদ্রাকে দেখা দিয়া কয়।
শুনগো মা ঠাকুরানী আমি কিছু নাহি জানি
সব হরিচাঁদের ইচ্ছায়।।
বৈষ্ণবী কহিছে বাপ আমার হ’য়েছে পাপ
সকলই ত’ প্রভুর ইচ্ছায়।
ভাগবতে বাক্য শুনি আছে মহাপ্রভু বাণী
মহাপাপ বৈষ্ণব নিন্দায়।।
বৈষ্ণব নিন্দুক জন মিথ্যা এ সাধন ভজন
হরি তারে নাহি ফিরে চায়।
জনমে জনমে তার নাহি পাপের উদ্ধার
বল মম কি হবে উপায়।।
দেরে বাপ পদতরী আমার হৃদয়পরি
তরীর বৈষ্ণব অপরাধে।
ক্ষম মম অপরাধ তুলে গোস্বামীর পদ
বৈষ্ণবী ধরিল নিজ হৃদে।।
সব জ্বালা দূরে গেল বৈষ্ণবী ভাল হইল
হরি ব’লে চক্ষে বহে নীর।
কহিছেন কাঁদি কাঁদি ধন্য ধন্য ওঢ়াকাঁদি
শুদ্ধ হ’ল আমার শরীর।।
হরিচাঁদ ভক্ত যারা পতিত পাবন তারা
বিষ্ণু অবতার বিষ্ণু অংশ।
বীর রসে ধীরোত্তম সবে বিষ্ণু পরাক্রম
বিষ্ণু তেজ সব বিষ্ণু বংশ।।
যেমন শ্রীগৌরচন্দ্র আর প্রভু নিত্যানন্দ
ভক্তবৃন্দ সেই অবতার।
হৃদয় শোধন করি বলাইল হরি হরি
এহেন দয়াল নাহি আর।।
সেই প্রেম পেয়েছিল তাহা জীবে পাসরিল
ভুলিল প্রেমের মধুরত্ব।
ত্যজিয়া অমৃত ফল জীব গেল রসাতল
বিষ ফলে হইল প্রমত্ত।।
খণ্ডাইতে কর্ম বন্ধ সেই প্রভু হরিশ্চন্দ্র
এবে হ’ল যশোমন্ত সুত।
হরিচাঁদ নাম ধরি ওঢ়াকাঁদি অবতরী
নাম প্রচারিল প্রেম যুত।।
তার যত ভক্তগণ তারা ভুবন পাবন
ব্রহ্মাণ্ড তারিতে শক্তি ধরে।
আমি’ত অবিশ্বাসিনী শ্রীহরি ভক্ত দ্বেষিণী
শোধিল আমার কলেবরে।।
গোলোক সুভদ্রাখ্যান সুধার সমুদ্রবান
পান কর প্রাণ বাঞ্ছাতরী।
কহিছে তারকচন্দ্র মহানন্দের আনন্দ
সাধু সব পিয় কর্ণভরি।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!