শ্রীহীরামন পাগলের উপাখ্যান।
পয়ার
মৃত্যুঞ্জয় হরিবোলা হ’ল ভাগ্যক্রমে।
যাতায়াত করে প্রভু মল্লকাঁদি গ্রামে।।
মৃত্যুঞ্জয় ভবনে আসেন হরিচাঁদ।
সস্ত্রীক সেবেন হরিচাঁদের শ্রীপদ।।
দুই চারি দিন বাটী থাকেন নির্জনে।
হরিচাঁদ গুণ গায় শয়নে স্বপনে।।
হরিচাঁদে না দেখিলে প্রাণ উঠে কাঁদি।
ঠাকুরে দেখিতে যেত ক্ষেত্র ওঢ়াকাঁদি।।
ঠাকুরের পাদপদ্ম দরশন করে।
কভু মল্লকাঁদি গ্রামে আনে নিজ ঘরে।।
মৃত্যুঞ্জয়ের রমণী কাশীশ্বরী নাম।
সাধ্বী সতী পতিব্রতা জপে হরিনাম।।
ঠাকুর আসিলে তাকে ডাকে মা বলিয়া।
ঠাকুর সেবায় থাকে নিযুক্ত হইয়া।।
একটি পুত্র কামনা হইল অন্তরে।
মুখে না বলিয়া বৈসে ঠাকুর গোচরে।।
অন্তরে জানিয়া তাহা প্রভু অন্তর্যামী।
কাশীশ্বরী মাকে বলে পুত্র তোর আমি।।
মম ভক্ত ভাগবত যত যত হ’বে।
তাহারা সকলে তোরে মা বলে ডাকিবে।।
বহু পুত্র হবে তার মধ্যে একজন।
সেই হ’তে পুত্র কার্য্য হ’বে সমাপন।।
এতেক শুনিয়া দেবী আনন্দিত মনে।
বাৎসল্য মমতা কভু পিতা তুল্য মানে।।
কভু পুত্রভাবে, ভাবে মর্মান্তিক মর্ম।
কভু পুত্রভাবে, ভাবে কভু ভাবে ব্রহ্ম।।
কখন যশোদা ভাব মনেতে আসিয়া।
সস্নেহে ধরেন মাতা বাহু প্রসারিয়া।।
ঠাকুর আসিলে ঘরে খাদ্য দ্রব্য এনে।
নিজ হাতে তুলে দেন শ্রীচন্দ্র-বদনে।।
নিজ হাতে তৈল মাখি দেন শ্রীঅঙ্গেতে।
বসাইয়া ঠাকুরে উত্তম আসনেতে।।
আপনি আনিয়া বারি স্নানাদি করয়।
অঙ্গ ধৌত পাদ ধৌত পাদোদক খায়।।
একদিন প্রভু যান মল্লকাঁদি গায়।
সুগন্ধি অনেক পুষ্প আনে মৃত্যুঞ্জয়।।
পদ্মবন হ’তে আনে শতদল পদ্ম।
পুজিতে শ্রীপাদ শ্রীনাথের পাদপদ্ম।।
দুটি শতদল দিল দুটি কর্ণপরে।
এক কোকনদ পদ্ম দিল শিরোপরে।।
রাউৎখামার বাসী হীরামন নামে।
প্রভু প্রিয় ভক্ত বড় অপার মহিমে।।
কৃষকেরা কৃষিকার্য করিবারে যায়।
সেই সঙ্গে ধান্য জমি আবাদ ইচ্ছায়।।
চলেছেন একগোটা বাঁশ কাঁধে করি।
কৃষাণের সঙ্গে রঙ্গে যায় সারি সারি।।
পাঁচ সাত জন কিংবা দশ বারো জন।
দলে দলে সারি সারি চলে সর্বজন।।
একদলে সাত জন চলে একতরে।
হীরামন সেই সঙ্গে চলে গাতা ধরে।।
মৃত্যুঞ্জয় ফুলসাজে সাজা’য়ে ঠাকুরে।
বসায়েছে উত্তর গৃহের পিড়ি পরে।।
বাটীর দক্ষিণ দিয়া পশ্চিমাভিমুখে।
চ’লে যায় হীরামন পরম কৌতুকে।।
এমন সময় হীরামন ফিরে চায়।
ঠাকুরের অই সজ্জা দেখিবারে পায়।।
সকল কৃষকে ডেকে বলে হীরামন।
চল সবে করি গিয়া ঠাকুর দরশন।।
নহে তোরা অগ্রেতে যা পরে আমি যাব।
নহে তোরা সবে চল ঠাকুর দেখিব।।
এতবলি অগ্রে চলে বালা হীরামন।
বাটীর উপরে গিয়া উঠিল তখন।।
ঠাকুরের মনোহার ফুলসাজ দেখি।
একদৃষ্টে চেয়ে রহে ঠাকুর নিরখি।।
ঠাকুর চাহিয়া বলে হীরামন পানে।
রামাবতারের বীর ছিল কোনখানে।।
আমাকে দেখিবে বলে প্রাঙ্গণে দাঁড়ায়।
রামাবতারের বীর দেখ মৃত্যুঞ্জয়।।
কথা শুনে হীরামন পূর্বস্মৃতি হ’ল।
একদৃষ্টে প্রভু পানে চাহিয়া রহিল।।
মহাপ্রভু ডেকে বলে সেই হীরামনে।
রামাবতারের কথা পড়ে তোর মনে।।
লংকাদগ্ধ বনভঙ্গ সাগর লঙ্ঘন।
রাজপুত্র বনবাসী নারীর কারণ।।
ভেবে দেখ মনে তাহা হয় কিনা হয়।
যে সকল কার্য্য বাছা করিলি ত্রেতায়।।
প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ বিরূপাক্ষ সমুদ্ভব।
দ্বিতীয় মহান রুদ্র অযোনী সম্ভব।।
তৃতীয়ে শ্রীহনুমান রামনাম অঙ্গে।
চতুর্থে মুরালীগুপ্ত শচীসুত সঙ্গে।।
পঞ্চমে তুলসীদাস ষষ্ঠে হীরামন।
আদি হি, অন্ত ন, মধ্যে রাম নারায়ণ।।
হনুমান দ্বীনকার এ কোন কারণ।
হীন হ’য়ে হীন মধ্যে শ্রীরাম স্থাপন।।
উমার উকার পঞ্চ জন্ম সঙ্গ করি।
লীলার প্রধান সঙ্গ শক্তিরূপ ধরি।।
যুগে যুগে মহাপ্রভু অপূর্ব মিলন।
বলে কবি গেল রবি হরি বল মন।।