মহাপ্রভুর লালচাঁদের বাটীতে গমন
পয়ার
এইরূপে যাত্রা করিলেন ছয়জন।
মহাপ্রভু বলিলেন অগ্রে যাও একজন।।
তথা যেতে পথে মোর আছে বড় ভয়।
সাপে নাহি ছাড়ে মোরে আসিয়া জড়ায়।।
তাহা শুনি কাঙ্গালী চলিল আগে আগে।
চলিলেন মহাপ্রভু তার পিছু ভাগে।।
বরইহাট গ্রাম গিয়া হইল উদয়।
ভক্তদের বাটী গিয়া উঠিল সবায়।।
ভক্ত কহে মহাপ্রভু নিবেদন করি।
বাল্যভোজ নিতে হ’বে তোমার এ বাড়ী।।
মহাপ্রভু বলে যদি বাড়ী মোর হয়।
কি আছে বাল্য সেবার শ্রীঘ্র ল’য়ে আয়।।
অমনি ভক্ত যায় জাল বাহিবারে।
ঠাকুর বলেন মোরা মাছ খাব না রে।।
তাহা শুনি ভক্ত কহে আছে শুধু ভাত।
কেমনে হইবে প্রভু প্রভু জগন্নাথ।।
ঠাকুর কহেন কেন শুধু ভাত খা’ব।
সুধা হ’তে সুধা আমি ভোজন করিব।।
কি দিব কি দিব ভক্ত কহে অবিরত।
মহাপ্রভু বলে তোর ঘরে আছে ঘৃত।।
তাহা শুনি ভকত হইয়া উল্লাসিত।
নারীকে কহিছে ঘরে আছে নাকি ঘৃত।।
তাহার রমণী কহে ঘৃত আছে ঘরে।
প্রভু হরিচাঁদ কহে শুন ভাল ক’রে।।
দধি আছে আরো আছে সুরভী দোহন।
ঘরে আছে কল্যকার মথিত মাখন।।
ঠাকুরের পদে পড়ি কহে তার নারী।
কি দিয়া হইবে প্রভু ভোজন তোমারি।।
প্রভু কহে ভকতের রমণীর কাছে।
কুষ্মাণ্ডের শাক, আগা ভাতে দে’য়া আছে।।
দেহ মাগো তাহাতে ভোজন হ’বে ভারি।
মধ্যাহ্নে হইবে সেবা লালচাঁদ বাড়ী।।
তাহা শুনি বসিতে করিয়া দিল ঠাই।
সভক্তি শাল্যন্ন ভোজে বসিল গোঁসাই।।
মাখিয়া ঠাকুর দিয়াছেন বদনেতে।
তারক প্রসাদ নিব বলে হাত পেতে।।
শাক ভাত মাখন করিয়া একত্তরে।
এক মুষ্টি দেন প্রভু তারকের করে।।
তারক যখন দিল বদনে তুলিয়া।
দোম এঁটে উঠে তার তালুকায় গিয়া।।
উঠিল বিষম কাশ ভাত উঘাড়িয়া।
ঠাকুরের পাতে পড়ে ভাত শাক গিয়া।।
কতক মাটিতে কত মহাপ্রভু পাতে।
কতক পড়িল মহাপ্রভুর বক্ষেতে।।
বক্ষে যাহা পড়েছিল বাম হাত দিয়া।
ধরিয়া দিলেন প্রভু বদনে তুলিয়া।।
লালচাঁদ এসেছিল ঠাকুরকে নিতে।
আগুলিল এসে সেই ভক্তের বাটীতে।।
তিনিও সেবায় ব’সে ছিলেন সেখানে।
কথা নাহি কয় তবু বলিল তখনে।।
তিনি কন প্রসাদ পাইতে ইচ্ছা আছে।
যেমন নিয়াছ প্রভু ভাল দেওয়া দিছে।।
অমনি তারক কেঁদে পড়িল ধরায়।
প্রভু কন ওঠ তোর নাহি কোন ভয়।।
তারক ভোজন করে কাঁদিয়া কাঁদিয়া।
যাত্রা করিলেন সেই বাড়ী সেবা নিয়া।।
এইরূপে প্রভু সঙ্গে ভক্তের বিহার।
গেল দিন কহে দীন রায় সরকার।।