ভক্তগণের উদার ভাব।
দীর্ঘ-ত্রিপদী
রাউৎখামার গ্রামে, শ্রীরামসুন্দর নামে,
প্রভুর এক ভকত মহান।
ভক্তগণ ল’য়ে সাথ, তার ঘরে যাতায়াত,
সদা করে হরিগুণ গান।।
একদিন সবে মেলি, নাচে গায় বাহু তুলি,
গোবিন্দ মতুয়া সঙ্গে রয়।
কোলেতে বালক ছিল, এক ঘরে শোয়াইল,
এক কন্যা সে ঘরে আছয়।।
ভগবান প্রেমরসে, নাচে গায় কাঁদে হাসে,
ভাববেগে মত্ত মাতোয়াল।
গাইয়া যশোদা উক্তি, কেহ বা করয় ভক্তি,
ননী খাও বাপরে গোপাল।।
কেহ নিজ স্তন ধরে, একজন বলে আরে,
গ্রীবা ধরে বলে বাপধন।
শুকায়েছে চন্দ্রমুখ, দেখে মুখ ফাটে বুক,
কোলে বসি পান করে স্তন।।
আর জন কহে বাণী, শুনগো যশোদারাণী,
তোর কৃষ্ণ খেল তোর স্তন।
আমার বলাই সঙ্গে, গোচারণে গিয়া রঙ্গে,
গোবর্দ্ধনে চরা’ল গোধন।।
একজন কেঁদে কহে, এত কি পরাণে সহে,
তোর কৃষ্ণ চোর-শিরোমণি।
কল্য গেল মোর ঘরে, না জানি কেমন করে,
ভাণ্ডভেঙ্গে খেয়ে এল ননী।।
কেহ কেহ কেঁদে কহে, তোর কৃষ্ণ কালীদহে,
ডুবিয়াছে গিয়া দৈব দোষে।
বিষজল করি পান, আছে কি ত্যজেছে প্রাণ,
কিংবা কালীনাগে গ্রাসে।।
ফলে স্বপনের ফল, ব্রতের ফল বিফল,
কর্মফলে হারালি কানাই।
ডাক মা কাত্যায়নীরে, চল কালীদহ তীরে,
কানায়েরে পাই কি না পাই।।
বলরামে লও সঙ্গে, বলা বাজাউক শিঙ্গে,
তাতে যদি পাই কৃষ্ণধনে।
তবে সে পাইবে ত্রাণ, নতুবা ত্যাজিব প্রাণ,
কালীদহে বিষজল পানে।।
কেহ ধরি কার হাত, শিরে হানি করাঘাত,
আছাড়িয়া লোটায় ধরণী।
মঙ্গল কহিছে ডেকে, বলাই দাদার ডাকে,
পাইলাম তোর নীলমণি।।
ঠাকুর কহিছে ডাকি, আমি না কিছুই দেখি,
কোথা কৃষ্ণ রাখালাদিগণ।
গান ক’রে হরি বলে, করেছিস গোষ্ঠলীলে,
এই কি তোদের বৃন্দাবন।।
কি বলিতে কি বলিস, কি কহিতে কি কহিস,
এ তোদের প্রেমের প্রলাপ।
আমি যে কি দেখিলাম, নিজে যে কি হইলাম,
ভয় বেশী করিতে আলাপ।।
আমি মৃগ গোচারণে, চরাইতে গেনু বনে,
খেতে যাই মলয়ার পত্র।
কল্যকার একজনে, আমারে বিধিল বাণে,
বলে আমি শ্রীকৃষ্ণের পুত্র।।
সে বনে এসেছে সীতে, বিপ্রলম্ব জাল পেতে,
জাল হাতে মোরে বাঁধে তথা।
এ বনে নাহিক ফল, এ বনে নাহিক খল,
সুনির্মল পত্র ভক্তি লতা।।
প্রেমতরু ফলদানে, ফলভোগী ভক্তগণে,
ফলে ফল ভক্তি লতিকায়।
শ্রীআনন্দ তরুবরে, আশাপত্র শোভা করে,
সে পত্র হরিণে লুঠে খায়।।
ইহাবলি কৃপাডোরে, হাতে গলে বাঁধে মোরে,
বলে হারে কোথায় পালাবি।
করি যজ্ঞ জীবোদ্ধার, হরিনাম মন্ত্র তার,
সহজাগ্নি শূন্যে যায় হবি।।
যজ্ঞকর্তা শ্রীগৌরাঙ্গ, হোতা গোলক ত্রিভঙ্গ,
যজ্ঞেশ্বরী সেই রাধারাণী।
তোমারে আহুতি নিতে, রহিয়াছে হাত পেতে,
আত্মাধিক আত্ম করি আনি।।
আমি তারে ব’লে ক’য়ে, আসিয়াছি ছাড়াইয়ে,
ছুটিয়া না যাব রক্ষাং কুরু।
করি যত কাঁদাকাঁদি, হারায়েছি বাঁধাবাঁধি,
আর না লুঠিব পত্র তরু।।
নাম সংকীর্তন ক্ষান্ত, প্রলাপের হ’ল অন্ত,
রাত্রি পোহাইল এই দিকে।
হরি হরি হরি বলে, যাত্রা করে সবে মিলে,
গোবিন্দ উঠিল সেই ঝোঁকে।।
গোবিন্দ মতুয়া ছেলে, যে বিছানে রেখেছিলে,
তথা ছিল গৃহস্থের মেয়ে।
প্রেম প্রলাপের ঝোঁকে, নিজপুত্র তথা রেখে,
চলিলেন সেই মেয়ে লয়ে।।
আসিয়া কতক দূরে, কহে মৃদু মধু স্বরে,
গোবিন্দকে দয়াল ঠাকুর।
দেখ দেখি দৃষ্টিকরে, কি আনিলে কোলে করে,
হাটিয়া আসিলে এতদূর।।
শুনিয়া প্রভুর বাক্য, বালিকার প্রতিলক্ষ্য,
কারে বলে আনিয়াছি কায়।
কি আনিতে কারে আনি, এযে কাহার নন্দিনী,
এ বালিকা মম পুত্র নয়।।
সবে করে পরিহাস্য, ভাবাবেশে এ ঔদাস্য,
যস্য কন্যা তস্যস্থানে লৈয়া।
কন্যা রাখিয়া নন্দনে, লইয়া ঠাকুর স্থানে,
সংকীর্তনে মিলিল আসিয়া।।
এইভাবে করে লীলা, ভক্তগণ সঙ্গে লইয়া,
করে দীন দয়াল আমার।
হরিচাঁদ লীলাসুধা, পানে নাশে ভব ক্ষুধা,
কহে দীন রায় সরকার।।